চিকিৎসক না হয়েও লিফলেটে ডাঃ লিখে নির্বাচনী প্রচার করছেন আব্দুল জব্বার

চিকিৎসক না হয়েও নামের আগে ডাঃ পদবী ব্যবহার করে নির্বাচনী প্রচারণার অভিযোগ উঠেছে ময়মনসিংহ সদর উপজেলার ৭নং চর নিলক্ষিয়া ইউনিয়নের রাজগঞ্জ বাজারে অবস্থিত লেতু মন্ডল উচ্চ বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সাধারণ অভিভাবক সদস্য পদে নির্বাচনে (১নং ব্যালট) প্রতিদ্বন্দ্বি আব্দুল জব্বারের বিরুদ্ধে।

এ ব্যাপারে  উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও নির্বাচনে দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রিজাইডিং কর্মকর্তার দফতরে অভিযোগ করার সিদ্বান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রতিদ্বন্দ্বী অন্য এক প্রার্থী।

লেতু মন্ডল উচ্চ বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির নির্বাচনে সাধারণ অভিভাবক সদস্য একজন প্রার্থী জানান, তার প্রতিদ্বন্দ্বী ১নং ব্যালটের প্রার্থী আব্দুল জববার চিকিৎসক নন। অথচ জনগণের ওপর প্রভাব বিস্তার করতে এবং নিজেকে যোগ্য প্রার্থী হিসেবে অভিভাবকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে তার লিফলেটে ডাক্তার পদ মর্যাদা ব্যবহার করে মিথ্যা তথ্য  প্রচার-প্রচারণা চালাচ্ছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

নির্বাচনে দায়িত্ব পালন কারি প্রিজাইডিং অফিসার  ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে মিথ্যা পরিচয় বহনকারী আবদুল  জববারের প্রার্থিতা বাতিলের দাবী করে তার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রের চলমান আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহনে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে দাবী জানিয়েছেন একাধিক শিক্ষার্থীদের অভিভাবকবৃন্দ।

নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বি এক প্রার্থী জানান, আব্দুল জব্বার যখন মনোনয়ন ফরম ক্রয় করে জমা দিয়েছেন তখনো তার ফরমে ডাঃ পদ মর্যাদা ব্যবহার করেছেন। সেই আবেদন পত্রটি প্রিজাইডিং অফিসার যাচাই-বাছাই পূর্বে কিভাবে বৈধ বলে ঘোষণা করলেন এমনটাই প্রশ্ন প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী, ভোটার ও এলাকাবাসীর মাঝে। এই নিয়ে এলাকায় তীব্র সমালোচনার ঝড় বইছে।

স্থানীয় সচেতন মহলের ভাষ্যমতে লেতু মন্ডল উচ্চ বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির নির্বাচনে (১নং ব্যালট) প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী আব্দুল জব্বারের নামের আগে ডাঃ পদমর্যাদা ব্যবহারের বিষয়টিকে ক্ষমতার অপব্যবহার বা আদালতের রায়কে অবমাননা করা হয়েছে বলে মন্তব্য  করার পাশাপাশি প্রার্থীতা বাতিলসহ তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ারা দাবী উঠেছে বিভিন্ন মহলে।

এব্যপারে প্রার্থী আব্দুল জব্বারের মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে তিন প্রতিবেদককে বলেন, আমি একজন গ্রাম্য ডাক্তার। এলাকার সবাই ডাক্তার বলে ডাকে। তাই লিফলেট ও পোস্টারে ডাক্তার লেখা হয়েছে।

তিনি আরও জানান- আমার এনআইডি কার্ডসহ স্কুলের ভোটার তালিকাতেও ডাক্তার লেখা আছে, তাই নির্বাচনে ডাক্তার শব্দটি যুক্ত করে দেওয়া হয়েছে। নামের আগে ডাক্তার ব্যবহারের বিষয়টি সম্পর্কে আমি তেমন জানিনা। আমার এই পদবীর কারনে যদি প্রার্থীতা বাতিল হয়ে যায় তাতেও আমার কোন আপত্তি নেই।

এব্যপারে একাডেমিক সুপারভাইজার  নির্বাচনে দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রিজাইডিং অফিসার নারায়ণ চন্দ্র দাস এর মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে তিনি জানান, বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক এবং ম্যানেজিং কমিটির সভাপতির সাক্ষরিত ভোটার তালিকায় যেভাবে নাম লেখা আছে, যাচাই বাছাই করে বৈধ প্রার্থীর তালিকায় সেভাবেই লেখা হয়েছে।

উল্লেখ, এমবিবিএস–বিডিএস ডিগ্রিধারী ছাড়া অন্য কেউ ডাক্তার পদবি ব্যবহার করতে পারবেন না বলে হাইকোর্টের এক রায়ে বলা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, হোমিওপ্যাথি, ইউনানি ও আয়ুর্বেদিক কর্মকর্তাদের নামের আগে ডাক্তার পদবি সংযোজনের অনুমতি দেওয়া বেআইনি।

বিকল্প চিকিৎসাব্যবস্থার জন্য পৃথক নিয়ন্ত্রণ সংস্থা গঠন ও বিকল্প চিকিৎসাব্যবস্থায় ডিগ্রিধারীদের নামের আগে ডাক্তার ব্যবহার করতে প্রয়োজনীয় আইন প্রণয়নের নির্দেশনা চেয়ে করা রিট খারিজ (রুল খারিজ) করে দেওয়া রায়ে এই অভিমত দিয়েছেন আদালত। প্রয়োজনে বিকল্প ধারার চিকিৎসাপদ্ধতির পৃথক মন্ত্রণালয় তথা ‘ভারত সরকারের আয়ুশ মন্ত্রণালয়’–এর আদলে দেশে একটি পৃথক মন্ত্রণালয় গঠন করাসহ চার দফা পরামর্শ দিয়েছেন হাইকোর্ট।

বিচারপতি মো. আশরাফুল কামাল ও বিচারপতি রাজিক আল জলিলের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ গত বছরের ১৯ নভেম্বর এই রায় দেন। ৭১ পৃষ্ঠার পূর্ণাঙ্গ রায়টি গত বৃহস্পতিবার সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হয়।

রায়ে বলা হয়, দুঃখজনকভাবে এটি লক্ষণীয় যে এখানে ২০১০ সালের বাংলাদেশ মেডিকেল ও ডেন্টাল কাউন্সিল আইনের ২৯ ধারা অনুযায়ী বিএমডিসির নিবন্ধনভুক্ত মেডিকেল বা ডেন্টাল ইনস্টিটিউট থেকে এমবিবিএস অথবা বিডিএস ডিগ্রিধারী ছাড়া অন্য কেউ তাদের নামের আগে ডাক্তার (Dr.) পদবি ব্যবহার করতে পারবেন না। সেখানে স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের ২০১৪ সালের ৩ সেপ্টেম্বরের সংশোধিত বিজ্ঞপ্তিতে ‘অল্টারনেটিভ মেডিকেল কেয়ার’ শীর্ষক অপারেশনাল প্ল্যানের বিভিন্ন পদে কর্মরত হোমিওপ্যাথি, ইউনানি ও আয়ুর্বেদিক কর্মকর্তাদের নিজ নিজ নামের আগে ডাক্তার পদবি সংযোজনের অনুমতি প্রদান করেছে, যা এককথায় আইনের কর্তৃত্ব ব্যতীত তথা বেআইনি। এ ছাড়া বাংলাদেশ হোমিওপ্যাথিক বোর্ড থেকে ২০২০ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি জারি করা বিজ্ঞপ্তিতে বিভিন্ন শাখায় হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসকদের তাঁদের নামের আগে পদবি হিসেবে ডাক্তার ব্যবহারের অনুমতি প্রদান করাও বেআইনি।

রায়ের পর্যবেক্ষণে বলা হয়, বিকল্প ধারার চিকিৎসাপদ্ধতির পেশাধারীরা নামের আগে ইন্টিগ্রেটেড ফিজিশিয়ান, কমপ্লিমেন্টারি ফিজিশিয়ান, ইন্টিগ্রেটেড মেডিসিন প্র্যাকটিশনার এবং কমপ্লিমেন্টারি মেডিসিন প্র্যাকটিশনার পদবি ব্যবহার করতে পারেন। ভারতেও বিকল্প ধারার চিকিৎসকেরাও ডাক্তার লিখতে পারেন না।