সব
তহশিলদারের যোগসাজশে জালিয়াতির মাধ্যমে সরকারের সাড়ে ৮ শতক জমি দখল করে ননী গোপাল তালুকদারের চার ছেলে, কৃষ্ণ গোপাল তালুকদার, শিব শংকর তালুকদার, নারায়ণ গোপাল তালুকদার ও বিষ্ণু পদ তালুকদারগন গৌরহরি’ নামে টাওয়ার (১০ তলা) নির্মাণ করেছে ২০১৮ সালে ।
বৈধ মালিকানাভুক্ত জমির পরিমাণ ১.৩৭ শতক হলেও জালিয়াতি করে শতকোটি টাকার ভিপি সম্পত্তির ওপর বহুতল বাড়ি নির্মাণ করেছে এই প্রভাবশালী চক্র।
নামজারি জমাভাগ ছাড়াই সংশ্লিষ্ট জমির নকশা অনুমোদন নিয়েও রয়েছে নানা প্রশ্ন। জাল-জালিয়াতির বিষয়টি ধরা পড়েছে সহকারী কমিশনারের (ভূমি)’র হস্তক্ষেপে। এ সংক্রান্ত তদন্ত প্রতিবেদনে সংশ্লিষ্ট দাখিলা বাতিলের জন্য ভূমি মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেওয়া হয়েছে। এমন চাঞ্চল্যকর ঘটনার তথ্য পাওয়া গেছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ময়মনসিংহের জেলা প্রশাসক দিদারে আলম মোহাম্মদ মাকসুদ চৌধুরী বলেন, ‘ভিপি সম্পত্তির ওপর বহুতল ভবনতো দূরের কথা জমি ব্যবহার করতেও অনুমতি লাগবে। অথচ এ ধরনের ঘটনায় একজন তহশিলদার জড়িত ছিল বলে রিপোর্ট পাওয়া গেছে। বিষয়টি আমরা দেখছি। অবশ্যই আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
তথ্যসূত্রে জানা যায়, বৈধ মালিকানাভুক্ত জমির পরিমাণ ১.৩৭ শতক। অথচ মাঠ জরিপের সময় জোগসাজশ করে রেকর্ড করে নেওয়া হয় এর সঙ্গে আরও ৮.৫৬ শতক। অতিরিক্ত লিখে নেওয়া সম্পত্তি সরকারের ভিপি তালিকাভুক্ত। সরকারি সম্পত্তি ১৯৯৪ সালে এভাবে রেকর্ড হওয়ার পর বারবার খাজনা আদায়ের অপচেষ্টা করা হয়। কিন্তু দায়িত্বরত ভূমি সহকারী কর্মকর্তাদের (তহশিলদার) নজরদারিতে তা এতদিন সম্ভব হয়নি।
জরিপের ৩০ বছর পর ২০২২ সালে এসে এই চক্রের সঙ্গে মিলিত হন তহশিলদার মো. ইকতিয়ার উদ্দিন ভূঁইয়া। তৎকালীন সহকারী কমিশনার (ভূমি) এইচএম ইবনে মিজান এ সংক্রান্ত নথিপত্রে আদেশ দেওয়ার আগেই অনলাইনে ভূমি উন্নয়ন কর পরিশোধের আবেদনে অনুমোদন দিয়ে বসেন ইকতিয়ার উদ্দিন। এভাবে গত বছরের ৭ জুন ভূমি উন্নয়ন কর আদায়ের আবেদন অনুমোদন করে ভিপি সম্পত্তির ব্যক্তি মালিকানা প্রতিষ্ঠিত করা হয়। অথচ ভিপি তালিকাভুক্ত এ সম্পত্তির ওপরই ২০১৮ সাল থেকে বহুতল ভবন রয়েছে।
এই ভবন নির্মাণের কাজ করে আসছিলো প্রভাবশালী চার ভাই। এরা হলেন ননী গোপাল তালুকদারের ছেলে কৃষ্ণ গোপাল তালুকদার, শিব শংকর তালুকদার, নারায়ণ গোপাল তালুকদার ও বিষ্ণু পদ তালুকদার। সেখানে সরকারের সাড়ে ৮ শতক জমি দখল করে ‘গৌরহরি’ নামে টাওয়ার (১০ তলা) নির্মাণ করা হয়েছে। বর্তমানে বহুতল এই ভবনে তিনতলা পর্যন্ত ৩৯ ব্যবসায়ী স্পেস ও চতুর্থ তলা থেকে ১০ম তলা পর্যন্ত ২৮টিরও অধিক ফ্ল্যাট নির্মাণ করে বিক্রি করা হয়েছে বলে জানা গেছে।
ময়মনসিংহের উপ-ভূমি সংস্কার কমিশনার (উপসচিব) অন্নপূর্ণা দেবনাথ ভিপি সম্পত্তি গোপন করে ১৪৩০ বাংলা সাল পর্যন্ত ভূমি উন্নয়ন কর দেওয়ার বিষয়ে একটি অভিযোগ তদন্ত করেন। তদন্ত প্রতিবেদনের সার্বিক মন্তব্যে তিনি উল্লেখ করেন, ‘ভিপি ‘ক’ তালিকাভুক্ত হওয়ার পরও পৌর ভূমি সহকারী কর্মকর্তা দাখিলা কাটার অনুমোদন দেওয়া সঠিক হয়নি। তদন্ত করে প্রাথমিকভাবে সংশ্লিষ্ট ভূমি সহকারী কর্মকর্তা ইকতিয়ার উদ্দিন ভূঁইয়ার বিরুদ্ধে ভিপি গেজেটভুক্ত শত কোটি টাকা মূল্যের ৮ শতক ৫৬ পয়েন্ট (সাড়ে ৮ শতকের বেশি) জমির অনলাইনে ভূমি উন্নয়ন কর পরিশোধের অনুমোদন দেওয়ার বিষয়ে উত্থাপিত অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেছে। আরএস খতিয়ান অনুযায়ী ভূমি উন্নয়ন করের দাখিলা দুটি বাতিলের জন্য ভূমি মন্ত্রণালয়ে পত্র পাঠানো হয়েছে। এমনকি ওই দুই হোল্ডিংও বন্ধ করা হয়েছে। ২ জুন এই তদন্ত প্রতিবেদন ভূমি সংস্কার বোর্ডের চেয়ারম্যানের কাছে দাখিল করা হয়। পরে তদন্ত প্রতিবেদন অনুযায়ী যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য গত ১০ জুলাই ময়মনসিংহ জেলা প্রশাসকের কাছে পাঠানো হয়।
শহরের প্রাণকেন্দ্রে ভিপি সম্পটির অবস্থান হওয়ায় প্রতি শতক জমির দাম প্রায় ১৫ কোটি টাকা। ভূমি সংস্কার বোর্ডের হিসাবে সাড়ে ৮ শতক (৮.৫৬) জমির বর্তমান বাজার মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে অন্তত শতকোটি টাকার উপরে।
অভিযোগের বিষয়ে ইকতিয়ার উদ্দিন বলেন, অভিযোগের বিষয়টি আমার জানা নেই। ভূমি সংস্কার বোর্ড আমাকে দায়ী করলে নোটিশ করার কথা। আমাকে কেউ নোটিশ করেনি।
অভিযোগের বিষয়ে ননী গোপাল তালুকদারের ছেলে শিবু তালুকদারের মুঠোফোনে জানতে চাইলে তিনি বলেন আরওআর বিআরএস কাগজপত্রসহ খাজনা পরিশোধ থাকার পরেও ভিপি সম্পত্তি কেন বলা হচ্ছে আমরা জানিনা।
গৌরহরি বহুতল টাউয়ার নির্মাণে প্লাণ ডিজাইন, নকসা অনুমোদনে সংশ্লিষ্ট সিটি কর্পোরেশন, গনপূর্ত বিভাগ বা জেলা প্রশাসনে বৈধ কাগজপত্র ব্যাতিথ অনুমোদন হওয়ার কথা নয়। কিভাবে ভিপি সম্পত্তির উপর এমন ভবন নির্মাণ হলো সচেতন মহলের প্রশ্ন, এর সমাধান কি? এমন আরো একাধিক ভবনের তথ্য চিত্রের সংবাদ প্রকাশ হলেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে দেখা যায়নি, নির্মাণ প্রতিষ্ঠান গুলো অনুমোদিত কর্তৃপক্ষের চেয়েও শক্তিশালী বলে জনশ্রুতি রয়েছে।
মন্তব্য