সব
ময়মনসিংহ প্রেসক্লাব পরিচালনা করে প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক। এই পদটি সাংবাদিকদের দিয়েই হয় বরাবর। এখানে আর অসাংবাদিক দিয়ে চলে না। প্রতিবছর হয় নির্বাচন। এক বছরের জন্য নির্বাচিত হন প্রেসক্লাব নির্বাহী কমিটি। এটি আবার গনতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় হয়ে আসছে। শুধুমাত্র সভাপতির পদ বাদে, কারণ পদাধিকার বলে জেলা প্রশাসক প্রেসক্লাব সভাপতি। অনেক অসাংবাদিক রয়েছে এই প্রেসক্লাবে। পরে সংবাদপত্র ও টেলিভিশন সাংবাদিকতার ব্যাপ্তিতে আর প্রেসক্লাবে অসাংবাদিকদের নতুন সদস্য নেয়া হয় না। বিভিন্ন সময়ে রাজনৈতিক বলয় থেকে মুনাফাভোগি সদস্যদের কারনে রাতারাতি সাংবাদিক বানিয়ে প্রেসক্লাব ও সাংবাদিক ইউনিয়ন সদস্য নেয়া হয়েছে। প্রেসক্লাব সদস্য হওয়ার লোভে অনেকেই বিভিন্ন উপায়ে নিয়েছে সুযোগ সুবিধা। সাংবাদিকতার যোগ্যতার চেয়ে ময়মনসিংহ প্রেসক্লাব সদস্য হওয়ার যোগ্যতার ঘৌড় দৌড়ে ছুটছেন অনেকেই।
ময়মনসিংহ প্রেসক্লাব আজ এক বানিজ্যিক প্রতিষ্ঠানে পরিনত হয়েছে। বানিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের কারনে নগরীতে যানজট লেগেই থাকে। প্রেসক্লাব প্রভাবে বলার কেউ নেই। দিবস অনুষ্ঠান, সংবাদ সন্মেলন, অতিথিদের গাড়িগুলো অনুষ্ঠান, সংবাদ সন্মেলন, অতিথিদের গাড়িগুলো প্রধান সড়কে থাকায় পথচারি, জন সাধারন ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গুলোকে পড়তে হয় চরম দূর্ভোগ। প্রেসক্লাব কমপ্লেক্স নির্মিত হলে গাড়ি পার্কিং এর জায়গা থাকলেও বেশি লাভের আশায় তা হয়ে গেলো মোবাইল মার্কেট। গাড়ি পার্কিং সিদ্ধান্ত ভেস্তে গেলো তৎসময়ের অর্থলোভী চাটুকার সদস্যদের কারসাজিতে। সদস্যদের মাঝে রয়েছে সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান কর্মকর্তা। যারা লাভবান হচ্ছেন দু দিক থেকে। প্রেসক্লাব সদস্য অসাংবাদিকদের দিয়ে যাচাই বাছাই করা হয় নুতন সদস্যদের। কিছু সদস্যের যোগ্যতাই তারা প্রেসক্লাব সদস্য। এই প্রেসক্লাব কতটুকু সমর্থ হয়েছে নুতন সময়োপযোগি সাংবাদিক তৈরিতে। এমনও হয়েছে গ্রুপিং লবিং এর কারনে সাংবাদিককে হতে হয়েছে জামায়াত-বিএনপি মোড়া তকমায়, আবার তা মুছে স্বাধিনতা পক্ষের শক্তির কাছ থেকে নেয়া আর্দশিক প্রশংসাপত্র। যারা সেই সদস্যের জন্য পরিশ্রম করে এসব জোগাড় করে দিতে পেরেছে সে সেই গ্রুপের আজীবনের ভোট নিশ্চিত করেছে। কেনো সহজ উপায়ে সদস্য নেয়া হয় না, কোন গোমর ফাঁসের ভয়ে এতো জটিলতা। প্রেসক্লাব সদস্য হলে কি বিশেষ মহলের ইজ্জত পাওয়া যায়।
জনশ্রুতি আছে সরকারি-বেসরকারি দূর্ণীতি সংস্থা গুলোয় গিয়ে চাইতে হয় না, বরং সংস্থা’র কর্মকর্তা নিজে প্রেসক্লাবে এসে সম্পাদকের হাতে বুঝিয়ে দেন মাশোহারা। ময়মনসিংহ প্রেসক্লাব কি কখনো স্ব উদ্যোগে কোনো জনস্বার্থ সংশ্লিষ্ট কাজ করেছে। এ প্রতিষ্ঠান থেকে আয় অর্থ কতটুকু ব্যয় হয়েছে ময়মনসিংহের সামাজিক, সংস্কৃতি, উন্নয়ন কর্মকান্ডে বা দুস্থ্ সেবায়।
২০১৩ সালে ময়মনসিংহ প্রেসক্লাবের সাংবাদিকদের নামে জুয়ার টাকা নেয়ার দুর্নীতির অভিযোগে নয় মাস প্রেসক্লাবের নতুন প্রাপ্ত সদস্যপদ স্থগিত হয়ে যায় দৈনিক যুগান্তর ব্যুরো অফিসের রির্পোটার অমিত রায়ের। পরবর্তীতে নান্দাইলের জুয়াড়ীরা প্রেসক্লাবে উপস্থিত হয়ে মিথ্যা সাক্ষ্য দিয়ে ও ঐ সময়ের সাধারণ সম্পাদককে বিভিন্ন রকমের অনৈতিক রসদ দিয়ে তার সদস্যপদ লাভে সচেষ্ট হয়। এর দু’বছরের মাথায় প্রেসক্লাবের বিভাগীয় সম্পাদক এবং পরে সাধারণ সম্পাদকের পদে আসীন হয় অমিত রায়। যা ময়মনসিংহ প্রেসক্লাবের ইতিহাসে একটি দুঃস্বপ্ন ও কলঙ্ক অধ্যায়।
পরবর্ত্তীতে অমিত রায় হয়েছেন বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন ময়মনসিংহের এমইউজে’র নির্বাহী সদস্য। সেই সাথে ময়মনসিংহ টেলিভিশন জার্ণালিস্ট এ্যাসোসিয়েশনের আজীবন সভাপতি ও সাংবাদিক বহুমুখী সমবায় সমিতি’র সাধারণ সম্পাদক। ময়মনসিংহ থেকে প্রকাশ করেছেন দৈনিক ময়মনসিংহের কাগজ। এরই মাঝে ময়মনসিংহ জিলা মটর মালিক সমিতিতে সাংবাদিকদের নামে পরিচালিত হচ্ছে শেরপুর নন্নী বাজার হতে ঢাকাগামি নৈশকোচ শামীম এন্টারপ্রাইজ, শেরপুর থেকে ঢাকাগামি সোনার বাংলা সার্ভিস ( ঢাকা মেট্রো-ব-১২-০৫১০) এবং ময়মনসিংহ থেকে ঢাকাগামি সৌখিন এক্সপ্রেস ( ঢাকা মেট্রো-ব-১২-০৫৭৮) সার্ভিস নামে তিনটি গাড়ি। এছাড়া সাংবাদিকদের নামে জমি ক্রয় যা বেশি মুনাফায় বিক্রি ও বিভিন্ন অর্থলগ্নি প্রতিষ্ঠানের সাথে জড়িত রয়েছেন অমিত রায়। তার সুবাদে ময়মনসিংহ শহরে জমি ক্রয়, ব্যক্তির নামে জমি ক্রয় ও ব্যক্তি নামে ফ্ল্যাট ক্রয় ( নগরীর নাটক ঘর লেন, অজন্তা সিনেমা হলের বিপরীতে সৈয়দ ফারুকী সাহেবের বাসার পিছনে ) করেছেন।
যদি ময়মনসিংহ প্রেসক্লাব সভাপতি জেলা প্রশাসক হন তাহলে প্রেসক্লাব সাংবাদিকদের নামে পরিচালিত গাড়ির সকল হিসেব ও অন্যান্য বিষয়ের কথা কি তাঁর অগোচরে! এ দায় কি এড়াতে পারবেন জেলা প্রশাসক।
গত চার বছরে দৈনিক যুগান্তরে রিপোর্টার সত্বেও ময়মনসিংহের উন্নয়ন সম্ভাবনা-জন দূর্ভোগ নিয়ে কোন ফিচারই দিতে পারেননি এ রিপোর্টার। তাহলে কি সাংবাদিকতা এবং প্রতিষ্ঠান আসনে থেকে সে দূর্নীতির আশ্রয় নিয়েছেন। তবে কি ক্ষমতার বলয়ে থাকাটাই সাংবাদিকতা। সাংবাদিকতার মত মহান পেশা আজ কোথায় গিয়ে দাঁড়িয়েছে। নির্মল সাংবাদিকতা করছেন না কারো বা কোনো মহলের তাবেদারি করছে এ প্রেসক্লাব। তবে কি ময়মনসিংহ প্রেসক্লাব প্রশাসনের সাংবাদিক। ময়মনসিংহ প্রেসক্লাব সভাপতি জেলা প্রশাসক, যা হাস্যকর ও সন্দেহপ্রবণ বটে। এটা দু’জনের জন্যই লজ্জাজনক ও উন্নয়ণ প্রতিবন্ধক। যেখানে গনতন্ত্রের চর্চা হয় সর্বোচ্চ প্রত্যাশায়, এমন বিষয় হতাশার দ্বারই উন্মোচন করে।
প্রশাসন ও বিভিন্ন শ্রেণি পেশার ময়মনসিংহবাসি হতবাক। এই যদি হয় তাহলে ময়মনসিংহের উন্নয়ন কি করে সম্ভব। ময়মনসিংহ প্রেসক্লাবের মতো সম্মানিত জায়গার ভাবমূর্তি নষ্ট করার অধিকার কারো আছে। এই প্রেসক্লাবের সাংবাদিকরাই কি আসল সাংবাদিক বা উচ্চ মানের সাংবাদিক। কেনো ময়মনসিংহে এতোগুলো সাংবাদিক সংগঠন। এতে কি নতুন সাংবাদিকরা দিকভ্রান্ত হচ্ছে না। এই সুযোগে দূর্ণীতি পরায়ন অসৎ মহল একজনকে অপরজনের ঢাল বানিয়ে নিজের আখের গোছাচ্ছে না। কেনো সাংবাদিকরা এক কাতারে দাঁড়াতে পারছে না। নাকি চাচ্ছে না কোনো মহল। সকলকে এক করার কোন সুযোগ সৃষ্টি বা উদ্যোগ নেয়া হলো না কেনো ? ময়মনসিংহ প্রেসক্লাব হবে নিছক সাংবাদিকদের সেবাধর্মী গণতান্ত্রিক স্বচ্ছ প্রতিষ্ঠান, যেখানে ময়মনসিংহ উন্নয়ন-সম্ভাবনা নিয়ে এগিয়ে যাবে ও নিরীহ জনগোষ্টির সমস্যা সমাধানে হবে একমাত্র ভরসাস্থল।
মন্তব্য