সব
‘জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড’ কর্তৃক প্রণীত পাঠ্যবইয়ের কিছু অংশ ন্যাশনাল জিওগ্রাফির ওয়েবসাইট থেকে কপি করা, আর কিছু অংশ গুগল ট্রান্সলেটর ব্যবহার করে দুর্বল অনুবাদ করা। এটা দেখে যারা অবাক হচ্ছে, তাদেরকে দেখে উল্টো আমিই অবাক হই। এটাই তো হওয়ার কথা ছিল। জাফর ইকবালের মত প্রথিতযশা কলমচোরেরা (কলমচোর মানে-যে অন্যের লেখা চুরি করে) যখন বইয়ের সম্পাদনা করে, তখন এর চেয়ে ভালো আর কি হবে?
প্রসঙ্গত বলে রাখি, নিউজটা প্রথম আলো করেছে বলেই এত আলোচিত হয়েছে। এতেই বোঝা যায় মিডিয়া হিসেবে তারা কতটা শক্তিশালী! এমনকি জাফর ইকবালও স্বীকার করেছেন যে কাজটা ঠিক হয়নি। যদিও তিনি নিজে দায় নেননি। অন্যান্য লেখকদের উপর দোষ চাপিয়ে গা বাঁচানোর চেষ্টা করেছেন। ভুল যে-ই করুক, বইয়ের সম্পাদক কি সেই দায় এড়াতে পারে? বিভিন্ন সময় আমরা দেখেছি কেউ পত্রিকায় ভিন্নমতের কিছু লিখলে জাফর ইকবাল গং তার দায়ভার সেই পত্রিকার উপর চাপিয়ে দিয়েছে। যেমন শাহবাগ নিয়ে একটা গল্প ছাপানোর কারণে জাফর ইকবাল এই প্রথম আলোতেই কলাম লেখা বন্ধ করে দিয়েছিলেন। এখনো লেখেন না। তাহলে বইয়ের সম্পাদক হিসেবে তিনি কিভাবে এত দায়সারা বক্তব্য দেন?
জাফর ইকবালকে কেউ কেউ বিজ্ঞানী বলে, কেউ কেউ বলে বিজ্ঞানমনস্ক লেখক। বাংলাদেশই পৃথিবীর একমাত্র দেশ যেখানে কোন আবিষ্কার না থাকলেও একজন মানুষ বিজ্ঞানী হয়ে যায়! ‘বিজ্ঞানমনস্ক লেখক’ কথাটা আরো হাস্যকর। তার লেখায় ভূত-প্রেত সহ বিজ্ঞান বিরোধী অনেক কথাবার্তা থাকলেও তিনি কিভাবে বিজ্ঞানমনস্ক লেখক হয়ে যান? তা আমার বুঝে আসে না।
তার ভন্ডামি নিয়ে আগেও লিখেছি। এক সাক্ষাৎকারে জাফর ইকবাল বলেছিলেন, এদেশে গত ২৫০ বছর ধরে মীরজাফরের নামে কেউ সন্তানের নাম রাখেনি। আগামী ৫০০ বছর কেউ সন্তানের নাম ‘গোলাম আযম’ রাখবে না।
সেই বক্তব্যের প্রেক্ষিতে আমি প্রশ্ন তুলেছিলাম, এই নিষেধাজ্ঞা কি শুধুমাত্র মীর বংশের জন্য প্রযোজ্য? কারণ তিনি নিজেও জাফর, মীর বংশে জন্ম নিলে তার নামও মীরজাফর ডাকা হতো। মূলত ব্যক্তি নাম নিয়ে এধরনের আক্রমণ কখনো কাম্য নয়। সমালোচনা হতে পারে কর্মের, কিন্তু তার সেই বক্তব্যে ‘গোলাম আযম’ নামের শত শত সাধারণ মানুষ বিব্রত হয়েছে। তাই আমি নৈতিক জায়গা থেকে তার প্রতিবাদ করা জরুরী মনে করেছিলাম।
তার আরও কিছু দ্বিমুখী আচরন আমরা দেখে আসছি অনেকদিন ধরে। তিনি নিজে প্রাপ্ত বয়স্ক হলেও যুদ্ধ করেননি। অথচ প্রত্যেক কথায় যেভাবে মুক্তিযুদ্ধ টেনে আনেন মনে হয়, যুদ্ধ তিনিই করেছেন! আর বাদবাকি সবাই রাজাকার ছিল! অথচ তিনি যে রাজাকারের নাতি, সেটা কখনও তার কোন লেখায় উঠে আসেনি। (যদিও তার বড় ভাই হুমায়ূন আহমেদ এটা নিয়ে লিখে সততার পরিচয় দিয়েছেন)
জাফর ইকবাল যে একজন কলমচোর সেটা নতুন করে বলার কিছু নেই। বিভিন্ন দেশের বিভিন্ন বিখ্যাত লেখা আর মুভি নকল করে শিশুতোষ লেখা বলে নিজের নামে চালিয়ে দিয়েছেন এই ব্যক্তি। এর কয়েকটা উদাহরণ দিচ্ছি-
অবনীল <‘পিচ ব্লাক’ সিনেমার নকল নিতু ও তার বন্ধুরা <‘ম্যাটিল্ডা’ সিনেমার নকল আমি তপু <‘আ চাইল্ড কল্ড ইট’ বইয়ের নকল মেকু কাহিনী <‘বেবিজ ডে আউট’ সিনেমার নকল ট্রাইটন একটি গ্রহের নাম <‘এলিয়ন’ বইয়ের নকল (তথ্যসূত্র: ইন্টারনেট)
এটা অবশ্য তার ছোটবেলার স্বভাব। তিনি নিজেই ‘আধ ডজন স্কুল’ নামক বইয়ে লিখেছেন যে, ছোটবেলায় তাদের বাবা সব ভাইবোনকে একটা করে ডায়েরী দিয়ে প্রতিদিন কিছু লিখতে বলেছিলেন। তিনি লেখার মত কিছু খুঁজে না পেয়ে গোপনে বড় ভাইয়ের ডায়েরি থেকে কপি করে নিজের ডায়েরিতে লিখতে শুরু করেন। একদিন ধরা খেয়ে যান। তার ভাষায়:
“..একদিন গোপনে যখন তার ডাইরী দেখে দেখে আমি আমার ডাইরীতে তথ্য পাচার করছি তখন হাতেনাতে ধরা পড়ে গেলাম, তখন আমার ভাইয়ের রাগ কে দেখে। প্রথমতঃ তার ডাইরী পড়েছি, শুধু তাই না! সেটা আবার আমার ডাইরীতে টুকে ফেলেছি! কাজটা যে অন্যায় সে ব্যাপারে আমার সন্দেহ ছিল না, একটা ছোট ধোলাই খাওয়ার পর সে ব্যাপারে আরো নিঃসন্দেহ হয়ে গেলাম। শুধু যে পরের ডাইরী দেখে নিজের ডাইরী লেখার অভ্যেস দূর হয়ে গেল তাই নয় আমার ডাইরী লেখারই ইচ্ছে জন্মের মত মুছে গেল!”
ভাবছি, আজ যদি হুমায়ূন আহমেদের মতো বড় ভাই বেঁচে থাকতেন, তাহলে যেভাবে এই কলমচোরের ডায়েরী লেখার সাধ মিটিয়ে দিয়েছিলেন, আজকে সেভাবে একটা ধোলাই দিয়ে পাঠ্যবই লেখার সাধও হয়তো তিনি মিটিয়ে দিতেন।
জাতির জন্য সেটা মঙ্গলজনক হতো।
হামদুল্লাহ আল মেহেদী
চেয়ারম্যান,
বাংলাদেশ লেবার পার্টি
মন্তব্য