সব
শিল্পী বনাম সাংবাদিক; কিছু কথা, কিছু প্রশ্ন
এফডিসিতে সাংবাদিকদের ওপর শিল্পীদের হা*মলার বিষয়টি নিয়ে কিছু লিখবো ভাবিনি। অনেকটা স্টাডি করে বা প্লান পরিকল্পনা করেও লিখতে বসিনি। অফিস থেকে বাসায় ফিরলাম রাত ১২ টার অল্পক্ষণ আগেই। ক্লান্ত অবসন্ন শরীরটা বিছানায় এলিয়ে দিয়ে ফ্যানের বাতাসে একটু জিরিয়ে নিচ্ছিলাম ফ্রেশ হবার আগে। বদঅভ্যেস বসতঃ ফোনটা হাতে উঠে এলো, আনমনেই শুরু হলো ফেসবুক স্ক্রলিং। এইটা আসলে একটা তীব্র নেশা। এই নেশার ঘোর কখনো কাটে না। এই বিষয়ে আরেকদিন লিখবো। এবার প্রসঙ্গে আসা যাক।
ফেসবুকে ঢুকেই এই বিষয়ে বেশ কিছু পোস্ট দেখলাম সহকর্মীদের। দেখলাম বরাবরের মতোই আমরা দুভাগ হয়ে গেছি! এভাবেই বিভক্ত হতে হতে একদিন হয়তো এতটাই বিচ্ছিন্ন হয়ে পরবো যে- পথে-প্রান্তরে, মাঠে-ঘাটে কাজ করতে গিয়ে আমরা, আমাদের ভায়েরা নিয়মিত পি*টুনি খেতেই থাকবে। মানুষ বলবে- আরে ধুর সাংবাদিক পে*টালে কি হয়! অন্যদিকে আমাদের সহকর্মীরা খুঁজবে- ঠিক কি কি কারণে এই পি*টুনি সহীহ্ ও শুদ্ধ!
যাইহোক, ফেবু স্ক্রল করতে করতে এ বিষয়ে প্রথম যে পোস্টটি সামনে এলো, সেখানে পোস্টদাতা ব্যক্তি খবরের কাগজের বিনোদন বিটের আ*হত রিপোর্টার সম্পর্কে লিখেছেন- ‘ওয়াসায় কাজ করতো, ধরে এনে সাংবাদিক বানিয়ে দেয়া হয়েছে’। আরও লিখেছেন- ময়ূরীর মেয়েকে ঐ রিপোর্টার প্রশ্ন করেছেন সে তার মায়ের আইটেম সং দেখেছে কিনা!
পোস্টটি পড়ে বেশ আ*হত হলাম। মনের গহীনে প্রশ্ন জাগলো- ওয়াসায় কাজ করলে কেউ কি তার পেশা পরিবর্তনের অধিকার রাখে না? বহু সাংবাদিকরাও কি পেশা পরিবর্তন করে অন্যকোনো কাজে বা ব্যবসায় যুক্ত হননি? বিশ্ববিদ্যালয়ে সাংবাদিকতায় পড়া সবাই কি এই পেশায় যোগ দেন? তাহলে যদি যোগ্যতা থাকে, তবে অন্য পেশা থেকেও কেউ সাংবাদিকতায় এলে প্রবলেম কি?
ময়ূরীর মেয়ে তার মায়ের অভিনীত ছবি বা নাচ-গান দেখেছে কিনা -এই প্রশ্ন করাটা কি অন্যায়? ময়ূরী কি ভাবেননি কাজগুলো করার সময় যে, এটি তার সন্তানরা দেখবে৷ আমার সন্তানরাও তো দেখবে। আপনার সন্তানরাও তো দেখবে ভাই! পরবর্তী প্রজন্ম এধরণের কাজগুলো থেকে কি শিখছে বা কি তাদের মূল্যায়ণ -এটি একজন গণমাধ্যমকর্মী জানতে চাইতে পারেন না?
অপর এক সহকর্মী অপু বিশ্বাসের একটি ভিডিও শেয়ার করেছেন। ভিডিওটি কবেকার জানিনা। সেটিতে দেখলাম অপু বিশ্বাস একজনকে ধমকের সুরে কথা বলছেন। এই ভিডিওটা শেয়ার করে পোস্টদাতা ক্যাপশনে লিখেছেন- ‘এরা মাইর খাবেনা তো কারা খাবে’ এই টাইপের কিছু একটা!
এরকম আরো কিছু পোস্ট দেখলাম। কেউ ভুল প্রশ্ন করলে, কেউ অন্য পেশা থেকে সাংবাদিকতায় এলে কিংবা যে কোনো কারণেই- কাউকে বেধড়ক পে*টানো আমরা কি করে বৈধতা দিতে পারি ইনিয়ে বিনিয়ে? উত্তর ভেবে পাইনা।
একই প্রসঙ্গে কেউ কেউ আবার লিখছেন- সাংবাদিকদের মধ্যেও দালাল আছে কিংবা দালালরা সাংবাদিক সেজেছে। এটিও কি সত্য? কিসের ইঙ্গিত এটা?
সুখকর হলো, অনেকেই এর তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন। এ বিষয়টি সুন্দর। যে কোনো অন্যায় বা অন্যায্য কাজের নিন্দা করা উচিত আমাদের। প্রয়োজনে সিনা টান করে রুখে দাঁড়াতেও পিছপা হওয়া উচিত না।
আর শিল্পী কারা ভাই? শিল্পীদের কাজ কি? সাধারণ মানুষ কাদের ফলো করবে? কাদের থেকে শিখবে? অন্যকে পি*টাইয়া পর্দার ভিলেন গিরি বা হিরোয়িজম বাস্তবে দেখানোর নাম কি শিল্প? এই শিল্প সমাজকে কি দেয়? মায়ের অভিনয় সম্পর্কে সন্তানকে প্রশ্ন করাটা যেখানে বিব্রতকর হয়ে ওঠে, সেই অভিনয়ই বা কেমন শিল্প? চলচ্চিত্রের এতগুলো সংগঠন থাকতে এই একটা সংগঠনে যা যা ঘটে তা কোন শিল্প? এরা কারা? এরা কি আসলেই শিল্পী নাকি সার্কাসের বাঁদর?
_______________________
লেখক; সাংবাদিক মেহেদী সম্রাট
২৩ এপ্রিল (দিবাগত-রাত), ২০২৪
সিদ্ধিরগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ
মন্তব্য