সব
ময়মনসিংহের ত্রিশাল উপজেলার ধানীখোলা ইউনিয়নের কুতুবখানা বাজার সংলগ্ন পলাশতলী গ্রামে অবস্থিত রওশন আরা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় একটি আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়।
গত ১৯ নভেম্বর ২২ ইং তারিখে কিছু পত্রিকায় প্রকাশিত রওশন আর বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের বই বিক্রয় প্রসঙ্গে আছমা আক্তার (প্রধান শিক্ষক, রওশন আর বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়) এর পক্ষ থেকে তীব্র প্রতিবাদ ও নিন্দা জ্ঞাপন করেছেন।
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিস, ত্রিশাল বরাবর বিগত বছরের উদ্ধৃত বইসমূহ পাঠানোর জন্য বস্তায় রাখা হয়। একই দিনে উক্ত বিদ্যালয়ের কিছু অপ্রয়োজনীয় পরীক্ষার খাতা বিক্রয় করা হয়। কর্মচারীদের ভুলবশঃত বিক্রয়কৃত কাগজের সাথে বস্তায় থাকা বইগুলো চলে যায়। পরবর্তীতে বিষয়টি জানার সাথে সাথে প্রধান শিক্ষক উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসের কর্মচারীর মারফত বই সমূহ উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসে প্রেরণ করা হয়। বিদ্যালয়ের অগ্রগতি ও কার্যক্রম ব্যাহত করার জন্য কতিপয় কুচক্রী মহল এই ধরণের সংবাদ ছড়ায়। বই বিক্রির বিষয়টি সম্পূর্ন মিথ্যা, ভুয়া ও ভিত্তিহীন বলে দাবী করেছেন প্রথান শিক্ষক।
উল্লেখ্য যে ১৯৭৭ সালে অত্র এলাকার কিছু সমাজ হিতৈষী ও বিদ্যানুরাগী ব্যক্তিবর্গের প্রচেষ্টায় মাত্র ৫ জন শিক্ষার্থী নিয়ে বিদ্যালয়ের যাত্রা শুরু হয়।১৯৯০ সালে মাধ্যমিক স্তরে উন্নীত হয়ে ঢাকা বোর্ডের স্বীকৃতি লাভ করে। বর্তমানে প্রত্যন্ত এলাকার এই বিদ্যালয়টিতে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৩৫০জন। ১২ জন শিক্ষক যুগের সাথে তাল মিলিয়ে তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত করার জন্য নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। ২০১৭ সালেও ত্রিশাল উপজেলার সবচেয়ে নিম্নমানের প্রতিষ্ঠান ছিল এই বিদ্যালয়। মাত্র ৫ বছরে অত্র প্রতিষ্ঠানের চেহারা পাল্টে দিয়েছেন দক্ষ, কর্মঠ,মেধাবী,সুযোগ্য ও বিদ্যানুরাগী প্রধান শিক্ষক আছমা আক্তার। ২০১৭ সালের ১লা জুলাই উক্ত বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আছমা আক্তার নিয়োগপ্রাপ্ত হওয়ার পর বিদ্যালয়ের আমূল পরিবর্তন হয়। এরই ফলশ্রুতিতে ২০১৯, ২০২০ সালে জেএসসি এবং এসএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রণকারীরা শতভাগ পাস করে। ২০২০ সালে দুইজন, ২০২১ সালে একজন এবং ২০২২ সালে চারজন শিক্ষার্থী জিপিএ ৫.০০ সহ শতভাগ পাস করে উক্ত প্রতিষ্ঠান হতে। বিগত কয়েক বছরে বিদ্যালয়টি ত্রিশাল উপজেলায় বঙ্গমাতা ফজিলাতুন্নেছা ফুটবল কাপ,ভলিবল,হ্যান্ডবল,ক্রিকেট এবং কাবাডি খেলায় চ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরব অর্জন করে। খেলাধুলা ছাড়াও বিভিন্ন সাংস্কৃতিক এবং কুইজ, বিতর্ক প্রতিযোগিতায় বিদ্যালয়টি বেশ কয়েকবার পুরস্কারপ্রাপ্ত হয়। ২০১৯ সালে বিজ্ঞানমেলায় ত্রিশাল উপজেলায় প্রথম স্থান অধিকার করে,২০২১ সালে দ্বিতীয় স্থান অর্জন করে এবং ২০২২ সালে আবারও বিজ্ঞানমেলায় প্রথম স্থান অর্জন করে।জাতীয় শিক্ষা সপ্তাহ ২০২২ উপলক্ষে ত্রিশাল উপজেলার শ্রেষ্ঠ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হওয়ার গৌরব অর্জন করেছে রওশন আরা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় ।শ্রেষ্ঠ প্রধান শিক্ষক, শ্রেষ্ঠ গার্লস গাইড শিক্ষক, শ্রেষ্ঠ গার্লস গাইড গ্রুপ নির্বাচিত হয়েছে একই বিদ্যালয় থেকে।ডিজিটাল উদ্ভাবনী মেলা-২০২২ এ ২য় স্হান অর্জন করে প্রত্যন্ত এলাকার এই বিদ্যালয়টি।
বিশ্ব মহামারীর করোনাকালীন সময়ে বিশ্ব যখন থমকে গিয়েছিলো তখনও প্রত্যন্ত এলাকার এই প্রতিষ্ঠানটি বিদ্যালয়ের যাবতীয় কার্যক্রম অনলাইনে পরিচালনা করতে সক্ষম হয়।ত্রিশাল উপজেলায় সর্বপ্রথম জুমের মাধ্যমে ভার্চুয়াল ক্লাস পরিচালনা,স্কুল পেইজ খুলে অনলাইন ক্লাস পরিচালনা করতে সক্ষম হয়েছিল এ বিদ্যালয়টি।শ্রেনী শিক্ষার পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের মধ্যে দেশাত্মবোধ জাগ্রত করে তোলার জন্য, আত্মনির্ভরশীল করে গড়ে তোলার জন্য মার্শাল আর্ট প্রশিক্ষণ সহ বিদ্যালয়ের চারু ও কারুকলা এবং সংগীতের জন্য খন্ডকালীন শিক্ষক নিয়োগ দেয়া হয়েছে। আর্থিকভাবে অস্বচ্ছল ও মেধাবী শিক্ষার্থীদেরকে বিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে আর্থিক সহায়তা প্রদান কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে। বিদ্যালয়টিতে বঙ্গবন্ধু কর্নার, শিক্ষার্থীদের নামাজের জন্য আলাদা ঘর রয়েছে। শিক্ষার্থীদের জন্য লাইব্রেরি চালু করা হয়েছে যেখান থেকে কার্ডের মাধ্যমে বই নিয়ে বাসায় পড়তে পারে।বিদ্যালয়ে শেখ রাসেল ডিজিটাল ল্যাব স্হাপন করা হয়েছে।মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম শ্রেণীকক্ষে স্হায়ীভাবে স্হাপন করা হয়েছে। উক্ত বিদ্যালয়ের পড়ালেখার মান অনেক সন্তোষজনক। শিক্ষক ও প্রধান শিক্ষকের সম্মিলিত চেষ্টায় বিদ্যালয়টিতে পড়ালেখার অনেক পরিবর্তন হয়েছে । সর্বোপরি বিদ্যালয়টি পড়ালেখা, খেলাধুলা এবং সাংস্কৃতিক সহ বিভিন্ন কার্যক্রমে অনেক এগিয়ে আছে। বিদ্যালয়টি উন্নতির জন্য উক্ত বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সহ সকলেই দিনরাত চেষ্টা করে যাচ্ছেন। পরিচালনা কমিটি ,এলাকবাসী,অভিভাবক সহ সকলের সার্বিক সহযোগিতায় এই বিদ্যালয়টি তার কাঙ্খিত লক্ষ্যে পৌঁছাতে সক্ষম হবে।
মন্তব্য