সব
গ্রেফতারকৃতরা হলো মোঃ জুয়েল খান, মোঃ রাসেল, মোঃ মাহমুদুল হাসান শাকিল, মোঃ আব্দুর রহমান, মোঃ আরিফুল ইসলাম, মোঃ আজহারুল ইসলাম ও মোঃ মাসুম হাওলাদার।
গ্রেফতারের সময় তাদের হেফাজত থেকে বিশেষভাবে প্রস্তুতকৃত জিএসএম সুবিধা সম্বলিত ১০টি অত্যাধুনিক ডিজিটাল ইলেকট্রনিক স্পাই ডিভাইস, ৭টি মোবাইল ফোন, ১০টি সিম কার্ড ও ১টি পকেট রাউটার জব্দ করা হয়।
রাজধানীর শাহজাহানপুর, শেরেবাংলা নগর ও ঢাকা জেলার ধামরাইয়ে অভিযান চালিয়ে তাদেরকে গ্রেফতার করে অর্গানাইজড ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন টিম ও ওয়েব বেইজড ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন টিম।
গ্রেফতারকৃতদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, তারা পরস্পর যোগসাজশে দীর্ঘদিন যাবৎ চাকরির নিয়োগ পরীক্ষায় মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে চাকরি প্রার্থীদের সাথে চুক্তি করে। এমসিকিউ/লিখিত পরীক্ষায় টিকিয়ে দেওয়ার জন্য ৩ থেকে ৫ লক্ষ টাকা এবং লিখিত ও ভাইভাসহ ৮ থেকে ১০ লক্ষ টাকা পরীক্ষার্থীদের নিকট থেকে নিয়ে থাকে।
অর্গানাইজড ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন টিমের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার মোঃ নাজমুল হক পিপিএম ডিএমপি নিউজকে জানান, চক্রের মূলহোতা জুয়েল খান বিশেষভাবে প্রস্তুতকৃত জিএসএম সুবিধা সম্বলিত ইলেকট্রনিক স্পাই ডিভাইস সংগ্রহ ও সরবরাহ, প্রশ্নপত্র সংগ্রহ, প্রশ্ন সমাধানের সদস্য সংগ্রহ ও চক্রের অন্যদের সাথে সমন্বয় করতো। মোঃ রাসেল, মোঃ মাহমুদুল হাসান শাকিল ও মোঃ আব্দুর রহমান পরীক্ষার্থী সংগ্রহ এবং পরীক্ষার্থীদের কাছে ডিজিটাল ইলেকট্রনিক স্পাই ডিভাইস পৌঁছে দেওয়ার পাশাপাশি ডিভাইসটি কীভাবে ব্যবহার করতে হবে তা শিখিয়ে দিতো। মোঃ আরিফুল ইসলাম পরীক্ষা শুরু হওয়ার পর প্রশ্নপত্রের ছবি তুলে হোয়্যাট্স অ্যাপে কেন্দ্রের বাইরে অবস্থান করা চক্রের অন্য সদস্যদের কাছে পৌঁছে দিতো। এরপর তাদের Solver Team অতিদ্রুত সেই প্রশ্নপত্র সমাধান করে কেন্দ্রের অভ্যন্তরে তাদের নির্ধারিত পরীক্ষার্থীদের কাছে ডিজিটাল ইলেকট্রনিক স্পাই ডিভাইসের মাধ্যমে প্রেরণ করতো।
জিএসএম সুবিধা সম্বলিত এই ডিজিটাল ইলেকট্রনিক স্পাই ডিভাইস মেয়েদের অন্তর্বাস ও ছেলেদের স্যান্ডো গেঞ্জির ভিতরে এমন ভাবে সেলাই করে সংযুক্ত করা থাকে যা বাইরে থেকে বোঝা যায় না। আবার কখনো মানিব্যাগের ভিতরে ভিসা কার্ড সদৃশ স্পাই ডিভাইস রেখে দেয়। এসব ডিভাইসে একটি মোবাইল সিম কার্ড সংযুক্ত থাকে। পরীক্ষা কেন্দ্রের বাইরে থেকে উক্ত নাম্বারে কল করা মাত্রই সেটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে রিসিভ হয়ে যায়। এই ডিভাইসের সাথে ব্লুটুথের মাধ্যমে কানেক্ট থাকা ‘ছোট বল’ আকারের রিসিভার পরীক্ষার্থীদের কানের ভিতরে থাকে। পরীক্ষা শেষে শক্তিশালী কলম সদৃশ চুম্বকের সহায়তায় সেটি কানের ভিতর থেকে বের করা হয়।
অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার মোঃ নাজমুল হক পিপিএম আরো জানান, গ্রেফতারকৃতদের হোয়্যাট্স অ্যাপ বার্তা পর্যালোচনা করে দেখা যায়, চক্রের সদস্যরা প্রাথমিকের সহকারী শিক্ষক নিয়োগ (তৃতীয় ধাপ), বাংলাদেশ রেলওয়ের টিকেট কালেক্টর (গ্রেড ২) ও বুকিং অ্যাসিসটেন্ট (গ্রেড ২), পল্লী সঞ্চয় ব্যাংকের অফিস সহায়ক, টাঙ্গাইল জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের অফিস সহায়ক, মৎস বিভাগের অফিস সাহায়ক, গণপূর্তের হিসাব সহকারী ও অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার মুদ্রাক্ষরিক, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের অফিস সহায়ক, ভূমি মন্ত্রণালয়ের সাঁট মুদ্রাক্ষরিক কাম কম্পিউটার অপারেটর ও বাখরাবাদ গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানী লিঃ এর সহকারী ব্যবস্থাপকসহ আরো বিভিন্ন চাকরির নিয়োগ পরীক্ষায় উল্লিখিত পন্থায় প্রশ্নপত্র ফাঁস করেছে।
গ্রেফতারকৃতদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় মামলা রয়েছে। গত ২৫ এপ্রিল শাহজাহানপুর থানায় রুজুকৃত একটি মামলার তদন্তকালে তাদেরকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারকৃতদেরকে রিমান্ডের আবেদনসহ আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে। চক্রের পলাতক সদস্যদের গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
এ বিষয়ে ডিবি-সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম (উত্তর) বিভাগের পক্ষ থেকে নিম্নলিখিত পরামর্শ দেওয়া হয়েছে :
১. যে কোন চাকরিতে যোগ্যতার ভিত্তিতে লোক নিয়োগ দেওয়া হয়। অনৈতিক উপায়ে চাকরি পাওয়ার চেষ্টা না করা।
২. পরীক্ষায় কোন প্রকার অসদুপায় অবলম্বনের চেষ্টা না করা;
৩. পরীক্ষা কেন্দ্রে যে কোন ডিজিটাল ডিভাইসের ব্যবহার সীমিত করা। এ ক্ষেত্রে প্রধান পরীক্ষক ও সহঃ পরীক্ষক ব্যতীত কক্ষ পরিদর্শকদের পরীক্ষার সময় ডিজিটাল ডিভাইস ব্যবহার বন্ধ রাখা যেতে পারে।
৪. কেন্দ্রে প্রবেশের সময় প্রতিটি পরীক্ষার্থীকে সতর্কতার সাথে যথাযথভাবে (সম্ভব হলে মেটাল ডিটেক্টর ব্যবহার করে) চেক করা;
৫. কক্ষ পরিদর্শকদের কাছে যদি কোন পরীক্ষার্থীর আচরণ সন্দেহজনক মনে হয় পুনরায় চেক করা।
৬. কোন পরীক্ষার্থীর কাছে এ ধরণের ডিভাইস পাওয়া গেলে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে অবহিত করা।
মন্তব্য