সব
ময়মনসিংহ কারিগরি শিক্ষক কল্যাণ সমিতির সভাপতি নাজমুল ইসলাম এর বিরুদ্ধে নানা অনৈতিক কর্মকান্ডসহ অর্থকেলেংকারী ও প্রতারণার অভিযোগ পাওয়া গেছে। অভিযোগের ভাষায় নাজমুল ইসলাম কারিগরি শিক্ষক কল্যাণ সমিতির সভাপতির পদটি ব্যবহার করে স্বেচ্ছাচারিতা মূলক কর্মকান্ডের মাধ্যমে কারিগরি শিক্ষক কল্যাণ সমিতির ভাবমূর্তি সর্বসাধারণের সামনে ক্ষুন্ন করে নিজের পকেট ভারী করেছেন। সমিতির কোন নির্বাচন বা সাধারণ সভা কার্যতঃ অনুষ্টিত হচ্ছে না। পদটিকে তিনি আঁকড়ে ধরে রাখছেন। এতে সমিতিভুক্ত অধিকাংশ শিক্ষকগণের মাঝে অসন্তোষ বিরাজ করছে। নাবিল ট্যুর এন্ড ট্রাভেলস নামক একটি প্রতিষ্ঠান করে তিনি বিভিন্ন জনকে অর্থের বিনিময়ে প্যাকেজ সিস্টেমে দেশের বিভিন্ন রিসোর্ট সেন্টার ভ্রমণ করাচ্ছেন , এমনকি বিদেশেও প্যাকেজ সিস্টেমে ভ্রমণ করাচ্ছেন।
অভিযোগ রয়েছে নাবিল ট্যুর এন্ড ট্রাভেলস এর কোন বৈধ অনুমোদন নেই। এই অবৈধ প্রতিষ্ঠানের মালিকানায় অন্তর্ভুক্তি করার জন্য বিভিন্ন জনের কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। আবার বিদেশে তার ট্রাভেলস এজেন্সির মাধ্যমে ভ্রমণ করানোর লোভনীয় প্রস্তাব দিয়ে প্রতারণার মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। তিনি এম আই এস টি নামের কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পরিচালক এর পদে আসীন রয়েছেন। এই প্রতিষ্ঠানটি কার্যতঃ তার একক নিয়ন্ত্রনাধীন।
সূত্র মতে ঐ প্রতিষ্ঠানে কর্মরত শিক্ষক কর্মচারীদের মধ্যে অনেককে কোন নিয়োগ পত্র দেন নাই। উক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শেয়ার হোল্ডার করার জন্য অনেক গণ্যমান্য ব্যক্তিদের কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন।
এছাড়াও নাজমুল ইসলামের নিয়ন্ত্রনাধীন হোম ইকোনমিকস কলেজ নামে আরও একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এই প্রতিষ্ঠানেও চলছে নানা অনিয়ম ও দুর্নীতি। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নামে শিক্ষা বাণিজ্য করে সমাজে শিক্ষকদের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করে তিনি নিজে অবৈধ ভাবে লাভবান হচ্ছেন। যারা কর্মরত রয়েছেন তাদের কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা উৎকোচ নিয়েছেন অভিযোগ রয়েছে কিন্তু কোন নিয়োগ পত্র দিচ্ছেন না। এতে কর্মরত সকলের মাঝে হতাশা বিরাজ করছে। কিন্তু তার ভয়ে কেউ মুখ খুলছেন না। নানা ভাবে প্রলুব্ধ করে অনেকের কাছ থেকে ব্যাংক চেকের মাধ্যমে টাকা নিয়ে টাকা ফেরত দিচ্ছেন না। এ কারণে বিক্ষুব্ধ হয়ে প্রতারণার শিকার শহরের বিশিষ্ট ব্যবসায়ী পুলিশ লাইনের সামনে অবস্থিত পেট্রোল পাম্পের মালিক সাইফুল আলম ১৬ লক্ষ টাকার চেক জালিয়াতির কারণে ময়মনসিংহ বিজ্ঞ অতিরিক্ত চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ৬৫৯/২০২২ নং মোকদ্দমা দায়ের করেছেন। মামলাটি আদালতে বিচারাধীন রয়েছে।
বিশিষ্ট চিকিৎসক অবসরপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ ডাঃ এ কে এম সিদ্দিকুর রহমানের সাথে প্রতারণা করে তার ট্রাভেলস এজেন্সির মাধ্যমে বিদেশে ভ্রমণ করার জন্য ২ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। প্রতারণার শিকার ডাঃ সিদ্দিকুর রহমান সম্প্রতি ময়মনসিংহের পুলিশ সুপার বরাবরে তদন্ত করে নাজমুল ইসলামের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য অভিযোগ দায়ের করেছেন। পুলিশ সুপার অভিযোগটি তদন্ত করার জন্য জেলা গোয়েন্দা বিভাগে ন্যস্ত করেছেন। অভিযোগটি এস আই প্রদীপের তদন্তাধীন রয়েছে। এধরনের আরও অনেক অভিযোগ নাজমুল ইসলামের বিরুদ্ধে রয়েছে।
প্রতারণার শিকার ব্যবসায়ী সাইফুল আলমের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, নাজমুল ইসলাম একজন স্বীকৃত প্রতারক। সে শিক্ষক সমাজের একজন কলঙ্ক। ডাঃ সিদ্দিকুর রহমানের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন পুলিশ সুপারের কাছে নাজমুল ইসলামের সম্পর্কে একটি অভিযোগ দায়ের করেছি। সুষ্ঠ ও নিরপেক্ষ তদন্ত হলে নাজমুল ইসলামের ভয়াবহ দুর্নীতির চিত্র বেড়িয়ে আসবে।
জানা গেছে নাজমুল ইসলাম নিজেকে শিক্ষক নেতা ও ব্যবসায়ী হিসেবে সমাজে পরিচয় দিয়ে প্রতারণা করছেন। তিনি আয়করও ফাঁকি দিচ্ছেন। আয়কর বিভাগ তদন্ত করলে তার কর ফাঁকির বিষয়টি বেড়িয়ে আসবে।
অনেকে নাম প্রকাশ না করার শর্ত দিয়ে বলেন, নাজমুল ইসলাম শিক্ষিত হলেও তার কর্মকান্ড অত্যন্ত নিন্দনীয়। প্রতারণার মাধ্যমে অর্থ হাতিয়ে অনেককে সর্বশান্ত করেছেন। দুর্নীতি দমন কমিশনের দৃষ্টি আকর্ষণ করে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ জানিয়েছেন।
সূত্র মতে ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়েও সময়মত পরিশোধ করেন নাই। তার বিরুদ্ধে ব্যাংক ঋণখেলাপীর অভিযোগও রয়েছে। অনেক নামিদামী রেস্টোরেন্ট থেকে খাবার নিয়ে বিল পরিশোধ না করার অভিযোগও রয়েছে। এ ব্যাপারে নাজমুল ইসলামের সাথে যোগাযোগ করলে তার বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ মিথ্যা দাবী করে বলেন, নিয়ম মেনেই কাজ করছি।
মন্তব্য