সব
সবেমাত্র সূর্য অস্ত যাচ্ছে, বাজারে কেনা–বেচা কেবল শুরু হয়েছে। যথা নিয়মে বাজারের মসজিদে মাগরিবের আযান শেষ। দোকানিরা দোকান সাজিয়ে বাতি জ্বালিয়ে চললেন নামাজে। প্রতিটি দোকানে একই অবস্থা! ক্রেতা থাকলেও সে সময় দোকানে বসে নেই কোনো বিক্রেতা। আজান শোনার পরেই ফাঁকা হয়েছে পুরো সবজি বাজার।
এমন অভাবনীয় দৃশ্য আমাদের কাছে কল্পনা মনে হলেও দিনাজপুরের চিরিরবন্দর উপজেলা সদর থেকে ৩ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত ৬ নং অমরপুর ইউনিয়নের শান্তির বাজার থেকে তোলা এমন একটি ছবি অল্প সময়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পৌঁছাতেই দিনাজপুর সহ আশেপাশের জেলায় আলোচনার সৃষ্টি করেছে।
স্থানীয় বাসিন্দা মোঃ আরিফ হোসেন বলেন, ‘মাগরিবের নামাজ পড়তে সবজি বাজার হয়ে তাঁর পাশের মসজিদে নিয়মিত নামাজ পড়তে যাই। এমন দৃশ্য প্রতিদিনের হলেও হঠাৎ বিষয়টা আমার নজরে আসে এবং সেই মুহূর্তের কিছু ছবি ফেসবুকে আপলোড করি। কিন্তু ভাবতে পারি নাই এত দ্রুত এভাবে ছবিগুলো ভাইরাল হবে।’
সরজমিনে বাজারে গেলে এমন দৃশ্যের দেখা মেলে। বাজারে সবজি কিনতে আসা স্থানীয় কয়েকজন ক্রেতাদের সাথে কথা হয়। এ সময় ক্রেতা সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘আমি সবজি কিনতে এই শান্তির বাজারে নিয়মিত আসি। কাঁচাবাজার কিনতে এসে প্রায় সময়ে মসজিদে মাগরিবের আজান হয়ে যায়। সে সময় আমি অনেক সময়ে খেয়াল করেছি, এই সবজি বাজার মাগরিবের নামাজের সময় ফাঁকা থাকে। বিক্রেতারা সবাই একসঙ্গে নামাজে যায়। তাই বাজারে ভেতরে আর কোনো ক্রেতা প্রবেশ করে না।’
সবজি বিক্রেতা মোঃ শহীদুল ইসলাম, আজিজুল হাকিম, হামিদুল ইসলাম, দুলাল ইসলামসহ আরও অনেকের সাথে কথা হলে তারা বলেন, এ বাজারটি মসজিদের জায়গায় অবস্থিত। প্রতি বিক্রেতার দোকানের ভাড়া মসজিদ কমিটিকে দেওয়া হয়। যা মসজিদ উন্নয়নের কাজে ব্যবহার করা হয়। নামাজ পড়ার কোনো বাধ্যবাধকতা নেই। নিজে থেকেই সবাই একসঙ্গে নামাজে যায়। আর মাগরিবের ওয়াক্ত খুব অল্প সময়ে শেষ হয় বলে সবাই একসঙ্গে যায়।
কাঁচা বাজারের ভেতরে চা ব্যবসায়ী মোঃ আনিছুর রহমান বলেন, ‘নামাজের সময়ে আমিও দোকান খোলা রেখেই নামাজে যাই। সে সময় কোনো বিক্রেতাই থাকে না।’
কাঁচা বাজারের সামনে পান ব্যবসায়ী মোঃ ওয়াজেদ আলী বলেন, ‘আমি দীর্ঘদিন ধরে এই বাজারে পানের ব্যবসা করে আসতেছি। আমার দোকানের সামনেই বাজারের জামে মসজিদ। আযান দেওয়া মাত্রই আমি দোকান খোলা অবস্থায় রেখে নামাজ আদায় করতে যাই। শুধু আমি না বাজারের প্রায় সকল ব্যবসায়ীরাই নামাজ আদায় করে।’
মাগরিবের নামাজ শেষে ওই এলাকার ইউপি সদস্য আশিকুর রহমানের সাথে কথা হলে তিনি বলেন, বাজারটি ৬ নং অমরপুর ইউনিয়নের অন্যান্য বাজারের তুলনায় মোটামুটি বড়। বাজারে তিন রাস্তা মোড় ও কাঁচা বাজার সংলগ্ন একটি দোতলা মসজিদ আছে। এই বাজারের অধিকাংশ মানুষ নামাজ পরে। আমার জানা মতে সবজি বাজারের বিক্রেতারাসহ বাজারের অন্যান্য দোকানদারা অধিকাংশই মুসলিম। সবাই পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করে। মাগরিবের নামাজের সময় অল্প হওয়ায় নামাজের সময় বাজারটি ফাঁকা হয়ে যায়।
এ বিষয়ে শান্তির বাজার জামে মসজিদের ইমাম মোঃ আব্দুল লতিফের সাথে কথা হলে তিনি বলেন, শান্তির বাজার একটি মসজিদ ভিত্তিক বাজার। তাই এখানে মোটামুটি সব ব্যবসায়ীরাই নামাজ পরে।
মন্তব্য