সব
ময়মনসিংহের ভূমি সহকারী নাসরিন সুলতানার ঘুষ গ্রহনের ভিডিও ফুটেজের সত্যটা কি? এব্যপারে জানতে অনুসন্ধানী টিম ত্রিশাল উপজেলার কানিহারি ইউনিয়নের ভূমি অফিসের ভূমি সহকারী কর্মকর্তা নাসরিন সুলতানা ও ঘটনার দিন ভূমি অফিসে উপস্থিত লোকজনের অনুসন্ধানে আলোচনায় বেরিয়ে আসে চাঞ্চল্যকর তথ্য।
ভিডিও ফুটেজে ঘুষ গ্রহনের ঘটনার বিষয়ে ভূমি সহকারী কর্মকর্তা নাসরিন সুলতানার নিকট জানতে চাইলে তিনি জানান, কানিহারি মৌজার বাড়িসহ ভূমির বকেয়া খাজনা পরিশোধ করার জন্য জৈনক শামিম তার নিকট আসিলে তিনি ক্যালকুলেটরে হিসাব করে ১০ হাজার টাকা খাজনা আদায়ের রশিদের মাধ্যমে জমা দিতে বলেন। শামিম ভূমির মালিকের পক্ষে চার হাজার টাকা দিয়ে জমা করতে বললে নাসরিন সুলতানা টাকা হাতে নিয়ে বলেন, এই টাকা জমা দিলে চাকুরী থাকিবেনা। সরকারি কোষাগারে খাজনা দাখিলা ১০হাজার টাকাই জমা করতে হবে।
এসময় নানা ভাবে কথোপকথনে জোড়াজুড়ি করতে থাকলে কৌশলে তাদের মধ্যে কেউ গোপনে ভিডিও ধারন করতে থাকে, যার আংশিক ভিডিও ঘুষ গ্রহনের দায় চাপিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করে ভাইরাল করা হয়। (৩১ অক্টোবর ২০২২) আজকের পত্রিকার নিউজ পোর্টালসহ বিভিন্ন অনলাইনে প্রকাশিত হয়।
এই ঘটনায় জেলা প্রশাসকের কার্যালয় এসএ শাখা স্মারক নং- ০৫.৪৫.৬১০০.০২৪.০০০. ১৫-২২১৪ তাং ১-১১-২০২২ইং মোতাবেক জেলা প্রশাসক মোঃ এনামুল হক সাক্ষরিত পত্রে সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা ২০১৮এর ৩ (খ) মতে অসদাচরণের সামিল এবং শাস্তিযোগ্য অপরাধের বিষয়ে সহকারী কমিশনার (ভূমি) ত্রিশাল উপজেলার তদন্ত প্রতিবেদন এবং ভিডিও ফুটেজের বক্তব্যে ঘুষ বা উৎকুচ গ্রহনের বিষয়টি প্রাথমিক ভাবে প্রমানিত হওয়ায় অপর একটি পত্রে বিভাগীয় মামলা নং-০১/২০২২ গ্রহন করে নাসরিন সুলতানাকে সাময়িক ভাবে বরখাস্ত করনের সিদ্ধান্ত গ্রহন করেন।
সরেজমিনে প্রকৃত সত্য উদঘাটনে ভূমি সহকারী কর্মকর্তা নাসরিন সুলতানার নিকট এবিষয়ে জানতে চাইলে তিনি জানান, ঘটনার সময় অনলাইনে প্রায় ৯৮১৩ হাজার টাকার রিসিটের ৩ নং রেজিস্ট্রারের খাজনা দাখিলার টাকা জমা দেয়ার জন্য কাজ করিতেছিলেন। তখন শামিম নামে এক ব্যাক্তি এসে হাতে লেখা একটা কাগজের টুকরা দিয়ে খাজনার হিসাব চাইল, ঐকাগজে কানিহারি মৌজার বাড়িসহ- ৫৩৭৭, ৫৩৮০, ৫৩৮১, ৫৩৮৩, ৫৩৮৪, ৫৩৮৮ এই দাগগুলির মোট জমির পরিমান ১.৭৯ একর এবং ০.৪২০০ একর ভূমি শ্রেনি বাড়ি উল্লেখ ছিল।
নাসরিন সুলতানা ক্যালকুলেটর এর মাধ্যমে বাড়ির খাজনার হিসাব দিলেন ১০ হাজার টাকা। কিন্তু সে তাকে ৪ হাজার টাকা দেয়। তখন তিনি বলেন, খাজনার রিসিট কাটা যাবে না। ১০ হাজার টাকা খাজনার মধ্যে ৪ হাজার টাকা দিলে আমার চাকরি যাবে এই বলে তিনি জানতে চান এই খাজনাটা কার? শামিম বলেন আরেক জনের, তখন তাকে বলা হলো যার কাগজ, যার খাজনা তাকেই আসতে হবে।
এরইমধ্যে শামিমের চাচা বুলবুল নাসরিন সুলতানার পাশে এসে বসা এবং শামিমকে বললেন তুমি এখানে কেন, সে বললো আমার দুইটা খারিজ আছে। তাদের কথোপকথনের সময় শামিমের লোক গোপনে ভিডিও ধারন করে তা এডিট করে।
নাসরিন সুলতানা জানায়, তার সকল কথা না দিয়ে আংশিক কথার ভিডিও প্রচার করে বাকি অংশ কেটে দেয় যাতে দোষী সাব্যস্ত করা যায়।
ঐসময় তিনি আরও বলেন, আমার অফিসের কাজ আমি করে দিব এবং আপনি এসিল্যান্ড অফিসে যেয়ে আপনি আপনার কাজ করে নিবেন। তখন শামিমের চাচা বুলবুল বলেন, আপনিই করে দিয়েন।
নাসরিন সুলতানা বুলবুল সাহেবকে জিজ্ঞেস করলে তিনি বললেন জন্ম নিবন্ধন নিয়ে একটু কথা আছে, উত্তরে বলেন আমি চালানের টাকাটা রেডি করে নিই পরে কথা বলব।
এসময় জানা যায়, ওখানের কিছু লোক বিভিন্ন সময়ে, বিভিন্ন ভাবে অন্যের খাজনার দাখিলার কাগজ নিয়ে আসে দালাল সেজে, কিন্তু মূল ব্যক্তি না থাকার কারনে দালালদের কাজ করে না দেওয়ায় তারা ক্ষিপ্ত হয়ে নাসরিন সুলতানার বিরুদ্ধে নানাবিধ মিথ্যা বানোয়াট অভিযোগ আনায়ন করে বলে দাবী করে।
তিনি অভিযোগ করে বলেন, আউটসোর্সিং দেলোয়ার নামের ছেলেটি এসব দালালদের দিয়ে খাজনা খারিজের জন্য পাঠায়। এরমধ্যে উল্লেখযোগ্য মোহাম্মদ রুবেল মিয়া, বুলবুল মিয়া (শামিমের চাচা বুলবুল সাহেব নয়), হুসাইন নূর, বাবুল মিয়া, রশহিদ মিয়া এদের দিয়ে দালালি কাজ করায়। এদের কাজ না করায় ক্ষিপ্ত হয়ে যাতা ব্যবহার করে বলে দুঃখ প্রকাশ করেন। এই ঘটনার সত্যতা যাচাইয়ের জন্য বুলবুলসহ উপস্থিত সংশ্লিষ্টদের খোঁজ নিয়ে পাওয়া যায়নি।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল আংশিক ভিডিও ফুটেজের সম্পুর্ন অংশ পাওয়া গেলে অথবা ঘটনার দিন ও সময়ে ঘটনাস্থলে উপস্থিত লোকজনের বক্তব্য নেওয়ার চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।
ভুক্তভুগী নাসরিন সুলতানা সুষ্ঠ তদন্ত করলে ন্যায় বিচার পাবেন বলে দাবি করেন।
চলমান…
মন্তব্য