শেরপুরের শ্রীবরদী উপজেলার সিংগাবরুনা ইউনিয়নের মাধবপুর পূর্বপাড়া জামে মসজিদের উন্নয়ন কাজের নামে,টিআর প্রকল্পের অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে প্রকল্পের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা সামছুল হকের বিরুদ্ধে। স্থানীয়দের দাবি, প্রকল্পের অর্থে নামে মাত্র কাজ দেখিয়ে বরাদ্দকৃত টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে। অন্যদিকে সভাপতি বলছে, স্থানীয় দুই ইউপি সদস্য এই টাকা আত্মসাতের সাথে জড়িত। তিনি যে পরিমাণ টাকা হাতে পেয়েছেন তা দিয়েই মসজিদের উন্নয়ন কাজ করা হয়েছে। স্থানীয় মুসল্লিরা বলছেন,সভাপতি সহ জড়িতরা তাদের বলেছেন এই টাকা উত্তোলন করতেই নাকি বেশি অর্ধেক টাকা খরচ হয়েছে।স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরে টিআর এর আওতায় মসজিদটি উন্নয়নের জন্য বরাদ্দ দেওয়া হয় ২ লাখ ১৯ হাজার ৯১৪ টাকা।
এই টাকা থেকে মসজিদের টিন ও মাটি ভরাটের কাজের ৮৫ হাজার টাকার কাজ দেখানো হলেও বাকী টাকার হদিস নেই। স্থানীয়রা মসজিদের সভাপতির কাছে টাকার হিসাব চাইলে তিনি বলেন যে টাকা পেয়েছি তারই কাজ করেছি। স্থানীয়দের দাবি,মসজিদের উন্নয়নে প্রকল্পের সমুদয় অর্থ দিয়ে কাজ করা হোক। এছাড়াও মসজিদের টাকা আত্মসাতের মতো দৃষ্টতা যারা দেখিয়েছে তাদের আনা হোক শাস্তির আওতায়। স্থানীয়রা আরও জানান,মসজিদের প্রকল্প সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা সামছুল হক হলেও প্রকৃত নিয়ন্ত্রণে ছিলেন তার পুত্রবধূ, সংরক্ষিত মহিলা মেম্বার রাবিয়া বেগম এবং তার সহযোগী হলো ওয়ার্ড মেম্বার সিদ্দিক মিয়া। তার প্রভাবেই সামছুল হককে সভাপতি করা হয় এবং অর্থ আত্মসাতের মূল পরিকল্পনাকারী ছিলেন তিনিই। সঠিক তদন্ত হলে সব সত্য বেরিয়ে আসবে।
আমরা উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কাছে এর তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি করছি। স্থানীয় বাসিন্দা লাভলু মিয়া বলেন,২ লাখ টাকার বেশি বরাদ্দ থাকার পরও মাত্র ৮৫ হাজার টাকার কাজ হয়েছে। বাকি অর্থ না থাকায় উন্নয়ন থেমে গেছে। আমাদের ওযু ও টয়লেটের ব্যবস্থাপনা নেই। জনপ্রতিনিধিরা এতো নিচে নামবে এটা বিশ্বাস করাও কষ্টের। আমরা সমুদয় টাকার কাজ চাই। মুসুল্লি আব্দুর রহমান বলেন,প্রকল্প সভাপতি সামছুল হক নিজেই বলেছেন, তিনি ২ লাখ ১৯ হাজার টাকা উত্তোলন করেছেন। কিন্তু হাতে পেয়েছেন মাত্র ৯৫ হাজার।
অথচ কাজে খরচ হয়েছে মাত্র ৮৫ হাজার টাকা। বাকি টাকা কোথায় গেল,তার সঠিক হিসাব তিনি দিতে পারছে না।একই এলাকার বাসিন্দা আবু তাহের বলেন,সভাপতির কাছে টাকার কথা বললে আমাদের সাথে দুর্ব্যবহার করেন। টাকার খবর নাই কাজের ও খবর নাই। আমরা এর প্রতিকার চাই। এ বিষয়ে প্রকল্প সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা সামছুল হক বলেন, “শুন ব্যাডা (ছেলে) আমি যে বলতেছি আমি টাকা পাই নাই এই কথা কেউ বিশ্বাসই করেনা। আমারে সিদ্দিক মেম্বার সাথে করে শ্রীবরদী নিয়ে গিয়ে স্বাক্ষর নিয়েছে। এছাড়াও একটা কাগজে আমার বাড়িতেও স্বাক্ষর নিয়েছে। তারা আমাকে ২ লাখ ১৯ হাজার টাকার কথা বললেও দিয়েছে মাত্র ৯৫ হাজার। আমি এই টাকা দিয়ে মসজিদের কাজ করেছি।
এর হিসাব আমার কাছে আছে। টাকা উত্তোলনের সময় আমার ছেলের বউ রাবিয়া বেগম এবং সিদ্দিক মেম্বার ছিলো। এ ব্যাপারে ইউপি সদস্য রাবিয়া বেগমের সাথে মুঠোফোনে কথা হলে তিনি বলেন,মসজিদের প্রকল্পের জন্য ২ লাখ ১৯ হাজার টাকা বাজেট হলেও হাতে পেয়েছি ২ লাখ। বাকি টাকা খরচ হয়েছে। তবে ১৯ হাজার কোন খাতে খরচ হয়েছে এই প্রশ্নের কোন উত্তর দিতে পারেন নি তিনি। বাকি টাকার ব্যাপারে প্রকল্পের সভাপতি বলতে পারবে বলেও তিনি জানান। অপরদিকে ইউপি সদস্য সিদ্দিক মিয়ার সাথে টাকার ব্যাপারে কথা হলে তিনি বলেন,আমি এই ব্যাপারে কিছু জানিনা।
এই কথা বলে ফোন কেটে দিয়ে মোবাইল বন্ধ করে দেয়। এ বিষয়ে জানতে চাইলে শ্রীবরদী উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) আমির হোসেনের সাথে কথা হলে তিনি বলেন,সেই মসজিদে প্রকল্প আছে কিনা আমার এই মুহুর্তে মনে নাই। আমি বাইরে আছি। বিষয়টি দেখে পরে জানাবো। এ ব্যাপারে শ্রীবরদী উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) শেখ জাবের আহমেদ বলেন,আমি বিষয়টি অবগত ছিলাম না। এই বিষয়ে কোন অভিযোগও পাইনি। অভিযোগ পেলে তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা নেয়া হবে।
মন্তব্য