সব
ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের নাম ব্যবহার করে অভিনব প্রতারণার ফাঁদ পেতে বসেছে সংঘবদ্ধ দুর্বৃত্তরা। কেউ একজন হন্তদন্ত হয়ে ০১৩১০৮২৫৯৬১ নম্বরের মোবাইল থেকে বসুন্ধরা এলাকার এক বাসিন্দাকে ফোন করেন। বলেন, এই….নামে আপনার কোনো ছেলে আছে? বিপরীত পাশ থেকে হ্যাঁ বলতেই টেলিফোনকারী ব্যক্তি আরোও বেশি ব্যস্ত হয়ে পড়েন।
বলতে থাকেন, ভয়াবহ রকমের হোন্ডা এ্যাকসিডেন্টের পর আপনার ছেলেকে কে বা কারা হাসপাতালের ইমার্জেন্সি বিভাগের বারান্দায় রক্তাক্ত অবস্থায় ফেলে রেখে গেছে। সে বেঁচে আছে কি মারা গেছে- কিছুই বুঝা যাচ্ছে না। আপনারা ৫ মিনিটের মধ্যে হাসপাতালে আসুন। দিশেহারা বাবা অজানা শঙ্কায় আর্তনাদ করে ওঠেন, কোনোমতে প্রশ্ন করেন- কোন হাসপাতালে আসতে হবে? জবাব আসে-ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ইমার্জেন্সি বিভাগে আসেন। তাড়াতাড়ি আসেন, তাড়াতাড়ি।
কান্নারত বাবা ছুটে যান রাস্তায়, খুঁজতে থাকেন রাইড শেয়ারের প্রাইভেটকার কিংবা মোটর সাইকেল। ততক্ষণে আবারও কল আসে আগের সেই নম্বর থেকে। এবার বলা হয়, আপনার ছেলের ব্যাপারে ডাক্তারের সঙ্গে কথা বলেন, এই নিন। একজন ভরাট কণ্ঠের লোক বলতে থাকেন, চা-নাস্তা করতে মিনিট বিশেক যাবত আমরা ডক্টরস রুমে ব্যস্ত ছিলাম, ফিরেই দেখি আপনার ছেলে রক্তাক্ত অবস্থায় বারান্দায় পড়া। এক্ষণই জরুরি পরীক্ষা নিরীক্ষা করে তার বাঁচা মরার বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে। এবার আগেরজন ফোনটি হাতে নিয়েই বলে উঠেন, গাড়ি থেকে এক্ষণই নেমে আগে ৩/৪ হাজার টাকা বিকাশ করুন। এসব কথাবার্তায় দিশেহারা বাবা জানতে চান- টাকা পাঠাবো কোন নাম্বারে? সঙ্গে সঙ্গেই এসএমএসে দেওয়া হয় টাকা পাঠানোর বিকাশ নাম্বার-০১৩৪৪৬৯৫৮৬৯
অবাক করার বিষয় হচ্ছে-প্রতারকচক্র যতক্ষণ যাবত যোগাযোগ করতে থাকে ততক্ষণ চেষ্টা করেও ভুক্তভোগী বাবা তার ছেলেটির (কথিত দুর্ঘটনার শিকার) মোবাইল নাম্বারে বারবার ফোন করেও নাগাল পান না। ছেলের মোবাইলে রিং বাজে না, অথবা কল ঢুকতেই বন্ধ হয়ে যায়। … প্রথম দফায় টাকা পাঠানোর পর থেকেই ফোনগুলোতে আর কল রিসিভ করে না, অত:পর বুঝা যায় পুরোটাই প্রতারণা।
মানুষের জীবন মৃত্যু নিয়েও কী জঘন্যতা চলছে অহরহ। তবুও সেসব বন্ধের ব্যাপারে এগিয়ে আসে না প্রশাসন। স্পষ্ট অক্ষরের সচল দুটি মোবাইল নাম্বার ব্যবহার করে চালানো প্রতারণা উদ্ঘাটন করতে আহামরি কোনো গোয়েন্দাবৃত্তিরও প্রয়োজন হওয়ার কথা নয়। বরং ঘটনার তিনটি প্রক্রিয়ার সঙ্গেই মোবাইল অপারেটর কোম্পানি সংশ্লিষ্টদের প্রত্যক্ষ-পরোক্ষ ভূমিকা যে রয়েছে- তা বুঝতে সিআইডির ট্রেনিং স্কুলে যাতায়াতেরও দরকার নেই। ‘হালকা বুদ্ধির সহজ অপরাধটা’ থামিয়ে দিতেও দেশের প্রশাসন নির্লজ্জ ব্যর্থতা দেখাচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
মন্তব্য