সব
এমপি আনোয়ারুল আজিম আনারের নৃশংস হত্যাকাণ্ড (!) ঘিরে তদন্ত ভ্রমণ, খালে বিলে জেলে নামানো, ডুবুরি ডোবানো, কুকুর দিয়ে মাংস খণ্ড তল্লাশিসহ অনেক কিছুই করা হলো। কিন্তু ধৃত আসামিদের দেয়া জবানবন্দির সূত্রে কলকাতার ফ্ল্যাট থেকে উদ্ধারকৃত রক্তমাখা জামা কাপড় ও মেঝেতে থাকা ছোপ ছোপ রক্ত মিললেও সেসবের ডিএনএ টেস্ট হলো না। ফলে প্রাপ্ত রক্ত এমপি আজিমেরই কি না সেটাও নিশ্চিত করা গেল না এখনও।
অপরদিকে আসামিরা অভিন্ন জবানবন্দিতে হত্যাকাণ্ডের সকল বিষয় ফুটিয়ে তুললেও এখন পর্যন্ত তা কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় রেকর্ড করানো সম্ভব হলো না। তাছাড়া হত্যার মূল পরিকল্পনাকারী শাহীন যুক্তরাষ্ট্রে ‘ধরা ছোঁয়া’র বাইরে থাকায় হত্যাকাণ্ডের মোটিভও নাকি নিশ্চিত করা যাচ্ছে না।
এতসব অনিশ্চিত কাণ্ড শেষে বলা হচ্ছে, এমপি আজিমের মৃতদেহ কিংবা দেহের অংশ বিশেষ উদ্ধার না হলে এ হত্যাকাণ্ডের আইনি ভাবে প্রমাণ করাই কঠিন হবে। বিচার প্রাপ্তিও হবে আরো অনিশ্চিত। এ ধরনের অবাস্তব কথাবার্তা কেন বলা হচ্ছে? সেসব ফলাও প্রচার করে কেউ কি আসামিদের খালাস দিতে চান? তাদের কি জানা নেই যে, হত্যাকাণ্ডের পর লাশের অস্তিত্ব মেলেনি অথচ আসামিদের স্বীকারোক্তিতেই কঠোর বিচারের বহু নজির এদেশে রয়েছে।
২০১২ সালের ৫ এপ্রিল বগুড়া কাহালু পাইলট উচ্চবিদ্যালয়ের ৭ম শ্রেণির ছাত্র নাইমকে অপহরণ করে দুর্বৃত্তরা ৫ লাখ টাকা মুক্তিপণ চায়। এরপর ৯ এপ্রিল মুক্তিপণের ৫ লাখ টাকাও নেয় আসামীরা। কিন্তু ভিকটিম আসামীদের চিনে ফেলায় নাইমকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয় এবং ইটভাটার আগুনে ভস্মিভূত করা হয় লাশ। স্কুল ছাত্র নাইমের জামা কাপড়, রক্ত পাওয়া দূরের কথা- লাশ পোড়া একমুঠো ছাইও পায়নি পুলিশ। অথচ ওই মামলায় দুই আসামির ফাঁসিসহ অন্য আসামিদের ১৭ বছর করে কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ড দিয়েছে আদালত।
সব লাশ নিশ্চিহ্ন করেও কিন্তু কুখ্যাত খুনি এরশাদ শিকদারের রেহাই মেলেনি। তার এক সহযোগী নূরে আলমের মতে, এরশাদ শিকদার কমপক্ষে ৬০টি হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছেন। তবে তিনি ২৪টি হত্যাকাণ্ডের বর্ণনা দিয়ে আদালতে জবানবন্দি দেন। নূরে আলম জানিয়েছিলেন, কুখ্যাত খুনি এরশাদ শিকদার তার রাজত্বকালে রূপসার যুবলীগ কর্মী খালিদ, দৌলতপুরের অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবীর ফটিক, সোনাডাঙ্গার ইনসাফ, কামাল, খালেক, সেনহাটির টাক আজিজ সহ ২৪ জনকে হত্যা করে জমাট সিমেন্টের বস্তায় বেঁধে ভৈরব নদে ফেলে দেন। এর মধ্যে শুধু খালিদের লাশ উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে। অন্য কারো লাশ পাওয়া যায়নি। কিন্তু আদালত ওই ২৪টি হত্যাকাণ্ডের ব্যাপারেই দোষী সাব্যস্ত করে এরশাদ শিকদারের ফাঁসির দিয়েছিলেন। তাহলে কি দাঁড়ালো? লাশবিহীন শুধু সাক্ষীর ভিত্তিতে অন্যদের ফাঁসির রায় হলেও এমপি আজিমের ক্ষেত্রে উল্টোটা হওয়ার শঙ্কা কেন?
মন্তব্য