সব
জন্মদিনের আয়োজনে জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান ও বিরোধীদলীয় নেতা জনবন্ধু গোলাম মোহাম্মদ কাদের এমপি বলেছেন, ১৯৯০ সালের পর জাতীয় পার্টি ধীরে ধীরে দুর্বল হয়ে পড়েছে। ক্ষমতার বাইরে থাকলে আমাদের দেশের দলগুলো টিকতে পারে না।
ক্ষমতাসীনরা জুলুম-নির্যাতন করে আমাদের রাজনীতি করতে দেয়নি। যারা ক্ষমতাসীন দল করতে এসেছিলো তারা নব্বই সালের পর দল ছেড়ে চলে গেছে। তারা দল বা দেশের স্বার্থ দেখেনি। ২০০৮ সালে যখন আমরা মহাজোট করেছি, তখন অনেকেই বলেছে, আমরা পরজীবি হয়ে গেছি। তারা বলেছেন, আমরা নাকি অন্যের সহায়তা ছাড়া নির্বাজনে জয়ী হতে পারিনা।
দেশের বড় দুটি দলের নির্বাচনে অল্প ভোটের ব্যবধানে জয় পরাজয় নির্ধারণ হয়। সেই অল্প ভোট তো আমরা দিতে পারতাম। আমরা যদি পরজীবি হই তারপরও আমাদের কাছে টানতে প্রতিযোগিতা ছিলো। সেখানে আমাদের একটি বার্গেনিং পয়েন্ট ছিলো, আমরা বার্গেনিং করে অনেক কিছু আদায় করতে পারতাম। কিন্তু ২০১৪ সালের পর থেকে আমরা বার্গেনিং করার শক্তি হারিয়ে ফেলেছি। এখন আমাদের বলা হয় গৃহপালিত রাজনৈতিক দল। আমাদের দলের মধ্যে সরকারি দলের এজেন্ট ঢুকিয়ে দেয়া হয়েছে। তারা আমাদের দল করে কিন্তু রাজনীতি করে অন্য দলের।
আমাদের দল করে বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা নেয় কিন্তু রাজনীতি করার সময় তারা সরকারী দলের রাজনীতি করে। যখনই আমরা সঠিক রাজনীতি করতে চাই, তখনই আমাদের দলকে ভেঙে আরেকটি দল সৃষ্টির চেষ্টা করা হয়। এটা সরকারই করে, যাতে আমরা স্বাধীনভাবে রাজনীতি করতে না পারি। আগে আমরা পরজীবি হলেও আমাদের একটা পছন্দ ছিলো, আমরা যেকোন পক্ষে যেতে পারি, আমাদের বার্গেনিং পয়েন্ট ছিলো। এখন আমরা বন্দি হয়ে গেছি, একজনের কাছেই যেতে হবে। আমরা সঠিক রাজনীতি করতে গেলেই…. একজন একটা ডাক দেবেন, সরকার মদদ দেবেন, মিডিয়া কাভারেজ দেবে আর আমাদের দল ভেঙে এবং আইনের মাধ্যমে আমাদের লাঙ্গল নিয়ে নেয়ার হুমকী দেয়া হয়। দল বাঁচাই না রাজনীতি বাঁচাই এই সমস্যায় জাতীয় পার্টি ভঙ্গুর হয়ে যাচ্ছে। কারণ, আমরা লোভ-লালসা থেকে দূরে থাকতে পারি না।
আমাদের দলে থেকে যারা অন্য দলের রাজনীতি করে তাদের আমরা দল থেকে বের করে দিতে পারি না। রাজনীতি বাঁচাতে আমাদের ঝুঁকি নিতে হবে। সরকার আমাদের দূর্বল করতে আমাদের মাঝেই একটি জোট বানিয়ে রাখছে। আমরা সঠিক রাজনীতি করতে গেলেই সরকার আমাদের দল ভেঙে দেয়ার অপচেষ্টা করে। যারা জাতীয় পার্টি ব্যবহার করে অন্য দলের রাজনীতি করতে চায় তাদের দল থেকে বের করে দিতে হবে। এটা করতে পারলেই জাতীয় পার্টি টিকবে। দেশও জাতির কাছে গৃহপালিত বিরোধীদলের প্রয়োজনীয়তা নেই। আমরা একটি দলের কাছে বন্দি হয়ে গেলে জনগণের কাছে আমাদের প্রয়োজন থাকবে না। আর জনগণ কেন এমন দলকে ভোট দেবে? দলকে বাঁচাতে হলে গৃহপালিত অপবাদ থেকে বের হতে হবে। যারা গৃহপালিত হবার জন্য দায়ী তাদের বর্জন করতে হবে। আমাদের দলে থেকে অন্যদলের রাজনীতি করতে দেয়া হবে না। সরকারকে অনুরোধ করবো দেশের রাজনীতি শেষ করবেন না। রাজনৈতিক দলগুলোকে রাজনীতি করতে দেন। সবাইকে ধংস করে সরকার একক রাজনীতি করবে এটা দেশ ও জাতির জন্য ভালো হবে না।
আজ দুপুরে জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যানের বনানীস্থ কার্যালয়ে নিজ জন্মদিনের আয়োজনে প্রধান অতিথির বক্তৃতা করেন গোলাম মোহাম্মদ কাদের। এসময় তিনি আরো বলেন, আরো কিছু দিন পরে আমার সঠিক মূল্যায়ন হবে। এখন যারা আমাকে মূল্যায়ণ করছেন সেটা হয়তো সঠিক হচ্ছে না। সময়ের ব্যবধানে সব কিছুই পরিস্কার হয়ে যাবে। গেলো নির্বাচনে আমি অনেক কিছুই শিখেছি। দেখেছি… রাজনীতি কত বেশি নোংড়া হতে পারে আবার কত বেশি মহৎ হতে পারে। দেখেছি, ক্ষুদ্র স্বার্থের জন্য মানুষ কত বেশি নিচে নেমে যেতে পারে। দেখেছি, দেশ ও জাতির জন্য মানুষ কত বেশি ত্যাগ স্বীকার করতে পারে। এগুলো আমার চলার পথে পাথেও হয়ে থাকবে। মহান আল্লাহ যেনো এই শিক্ষাগুলো দেশ ও জাতির স্বার্থে কাজে লাগাতে দেন।
ভাষার মাসে ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে গোলাম মোহাম্মদ কাদের বলেন, মাতৃভাষার প্রতি ভালোবাসা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু রাষ্ট্রভাষা আন্দোলন হচ্ছে অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করা। আমাদের ভাষাকে রাষ্ট্রভাষা করা হয়নি, আমাদের সাথে বৈষম্য করা হয়েছিলো। সংখ্যাগরিষ্ঠদের ভাষাকে রাষ্ট্রভাষা করা হচ্ছিলো না। তখন উদ্বেগ, উৎকন্ঠা ও সংশয় ছিলো, পশ্চিম পাকিস্তানীরা আমাদের সাথে বৈষম্য করেছিলো। আমরা এই অন্যায়ের প্রতিবাদ করেছিলাম, আমরা বাংলাকে রাষ্ট্রভাষার দাবিতে সংগ্রাম করেছিলাম। সেই আন্দোলনেই আমাদের ভাষা শহীদরা জীরন দিয়েছিলেন। বৈষম্য দূর করতেই রাষ্ট্রভাষা আন্দোলন হয়েছিলো। মায়ের ভাষায় কাজ করতে না পারলে আমাদের সন্তানরা ভালো চাকরি পাবে না, ব্যবসায়ীরা ব্যবসা করতে পারবে না। রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে বাঙালীদের কোন মর্যাদা থাকবে না। আমরা শহীদ মিনার করে ভাষা শহীদদের সম্মান জানাচ্ছি। কিন্তু যে বৈষম্য দূর করতে ভাষা শহীদরা জীবন দিয়েছিলো, সেই বৈষম্য কি দূর হয়েছে? ধনী-গরিবের বৈষম্য প্রতিদিন বাড়ছে, দলীয়করণের মাধ্যমে বৈষম্য চলছে। এটা কী অন্যায় নয়? সরকারি দল করলে এক নিয়ম ও সুযোগ সুবিধা আর সাধারণ মানুষের জন্য অন্য নিয়ম। এটা বৈষম্য এবং অন্যায়। এই অন্যায়ের বিরুদ্ধেই রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম হয়েছিলো। সেই অন্যায় এখনো চলছে। বৈষম্য ও দলীয়করণের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করতে একুশে আমাদের শিক্ষা দেয়। একুশের মুল মেসেজ হচ্ছে বৈষম্যমুক্ত সমাজ গড়া। কিন্তু বর্তমান সরকার বৈষম্যের দিকে দেশকে ঠেলে দিচ্ছে, রাষ্ট্রীয়ভাবেই বৈষম্য করা হচ্ছে। চাকরি পেতে গেলে জিজ্ঞেস করা হয় তুমি ও তোমার পরিবার কি আওয়ামী লীগ করে? আওয়ামী লীগ না করলে চাকরী মেলেনা। এই বৈষম্যের বিরুদ্ধেই তো একুশের সংগ্রাম। একুশের চেতনা ভুলন্ঠিত হচ্ছে। এই সংগ্রামের ধারাবাহিকতায় ছয় দফা আন্দোলন ও স্বাধীনতা সংগ্রাম হয়েছে। যেটাকে আমরা মুক্তিযুদ্ধ বলি। স্বাধীনতা যুদ্ধে আমরা জয়ী হলেও মুক্তিযুদ্ধে আমরা জয়ী হতে পারিনি।
সকাল থেকেই জাতীয় পার্টি, অঙ্গ ও সহযোগি সংগঠনের নেতারা ফুল ও মিষ্টি নিয়ে জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যানের বনানীস্থ কার্যালয়ে জড়ো হন। তারা শ্লোগানে শ্লোগানে মুখর করে তোলেন অফিস এলাকা। এসময় পার্টি চেয়ারম্যানের সুস্বাস্থ ও দীর্ঘায়ু কামনায় দোয়া মুনাজাত অনুষ্ঠিত হয়েছে।
জাতীয় পার্টি ঢাকা মহানগর উত্তর এর আহ্বায়ক বীরমুক্তিযোদ্ধা তৈয়বুর রহমান এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান ও জাতীয় মহিলা পার্টির আহ্বায়ক এ্যাড. সালমা ইসলাম এমপি, প্রেসিডিয়াম সদস্য মীর আব্দুস সবুর আসুদ, এ্যাড. মোঃ রেজাউল ইসলাম ভূঁইয়া, নাজমা আখতার, মোস্তফা আল মাহমুদ, প্রেসিডিয়াম সদস্য ও জাতীয় সাংস্কৃতিক পার্টির সভাপতি শেরীফা কাদের, চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা ও ঢাকা মহানগর উত্তর এর আহ্বায়ক বীর মুক্তিযোদ্ধা তৈয়বুর রহমান। ফুলেল শুভেচ্ছা জানান অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ এবং ঢাকা মহানগর উত্তর এর সকল থানার নেতৃবৃন্দ। মাননীয় চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা মনিরুল ইসলাম মিলন, মোঃ খলিলুর রহমান খলিল, ডা. মোস্তাফিজুর রহমান আকাশ, ভাইস চেয়ারম্যান আমিনুল ইসলাম ঝন্টু, সুলতান আহমেদ সেলিম, এইচ এম শাহরিয়ার আসিফ, জসীম উদ্দিন ভূঁইয়া, যুগ্ম মহাসচিব মোঃ সামছুল হক, মোঃ বেলাল হোসেন, সৈয়দ মঞ্জুর হোসেন মঞ্জু, সাংগঠনিক সম্পাদক মোঃ হুমায়ুন খান, এ্যাড. ইউসুফ আজগর, কাজী আবুল খায়ের, আনিস উর রহমান খোকন, সম্পাদকমন্ডলী সুলতান মাহমুদ, এমএ রাজ্জাক খান, মাসুদুর রহমান মাসুম, জহিরুল ইসলাম মিন্টু, আহাদ চৌধুরী শাহীন, ইঞ্জিনিয়ার এলাহান উদ্দিন, যুগ্ম সম্পাদক মাহমুদ আলম, দ্বীন ইসলাম শেখ, হাফেজ ক্বারী ইসারুহুল্লাহ আসিফ, কেন্দ্রীয় নেতা আব্দুস সাত্তার, সামছুল হুদা, পারুল বেগম, প্রিন্সিপাল গোলাম মোস্তফা চৌধুরী, মিথিলা রোয়াজা, আলমগীর হোসেন, মেহেদী হাসান শিপন, জায়েদুল ইসলাম জাহিদ, শাকিল আহমেদ, সোহেল রহমান, শাহজাহান মিয়া, এসএম ইকবাল আহমেদ, নাজমুল, গরিবুল্লাহ সেলিম, মোঃ আশরাফুল ইসলাম খান, আলাল মেম্বার, মোড়ল জিয়াউর রহমান, আব্দুর রহিম।
মন্তব্য