সব
আম উৎপাদনে সাফল্যের তালিকায় প্রথম স্থান নওগাঁ জেলা। এ জেলার কৃষি যোদ্ধাদের আম উৎপাদনের সাফল্যে গাঁথা। বরেন্দ্র ভুমির ইতিহাস ঐতিহ্য বিষয়ে গবেষক ও লেখক, প্রভাষক মো.আব্দুর রাজজাক (রাজু) জানান, আদিকাল থেকেই কৃষকের সাফল্যর দিকে তাকিয়ে বরেন্দ্র ভূমির সোনালী ইতিহাসের পাতায় ছড়িয়ে আছে কৃষকদের সাফল্য। পাল আমলে কার্পাস তুলার চাষ হতো এ জেলায়। এখানকার মিহি সুতায় তৈরি গঙ্গা জলি শাড়ীর ইউরোপের বাজারে চাহিদা, কিংবা কৈবর্তদের জীবিকা নির্বাহের জন্য মৎস্য শীকার। প্রাচীন কাব্য চর্যাপদে বর্ণিত নদী, নৌকা বৈঠার উপস্থিতি সে ক্ষেত্রে সুলতানি আমলে কৃষকদের কৃষিক্ষেত্রে অগ্রগতি। জেলেদের বাণিজ্যিক ভিত্তিতে মৎস্য উৎপাদন সবিই ইতিহাস বোদ্ধাদের অতীত মন্থনে রসদ যুগিয়েছে।
ব্রিটিশ ভারতে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির অধীনে নওগাঁর কৃষকরা গাঁজা চাষে সাফল্য অর্জন করলেও ১৯৪৭ সালের দেশভাগের পর তা আস্তে আস্তে বিলুপ্ত হয় এবং ১৯৬৫ সালের ৬ সেপ্টেম্বরে ভারত-পাকিস্থান যুদ্ধের পর নওগাঁয় গাঁজা উৎপাদন ও বিপনন একে বারেই বন্ধ হয়ে যায়। সম্প্রতি বরেন্দ্র অঞ্চলের কৃষক সমাজ বাংলাদেশ সহ বিশ্বের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে পৃথিবীর সেরা ফল সুমিষ্ট আম উৎপাদনে। আম উৎপাদনের অগ্রগতি ২০১৯- ২০২০ অর্থবছরে নওগাঁ জেলায় আম বাগান ছিল ২৪ হাজার ৭শ ৭৫ হেক্টর জমিতে। হেক্টর প্রতি আম উৎপাদন হয়েছিল ২ লাখ ৮৫ হাজার ৯০০শ মেট্রিক টন। যার বিক্রয় মূল্য ছিল প্রায় ৪৪১ কোটি ৮০ লাখ টাকা।
২০২০-২০২১ মৌসুমী আম বাগান ছিল ২৫ হাজার ৮৫০ হেক্টর। হেক্টর প্রতি গড় ফলন হয়েছিল ১৩ দশমিক ৫০ মেট্রিকটন আম। যার বিক্রয় মূল্য ছিল প্রায় ১ হাজার ৫শ ৭০ কুটি ৩৮ লাখ ৭৫ হাজার টাকা। ২০২১-২০২২ মৌসুমী আমবাগান ছিল ২৯ হাজার ৪৭৫ হেক্টর জমিতে। হেক্টর প্রতি গড় ফলন হয়েছিল ১২ দশমিক ৫০ মেট্রিক টন।
উৎপাদন হয়েছিল ৩ লাখ ৬৮ হাজার ৪৩৫ মেট্রিক টন আম। যার বিক্রয় মূল্য ছিল প্রায় ১হাজার ৮৪২ কোটি ১৭ লাখ ৫০ হাজার টাকা।২০২২-২০২৩ চলতি মৌসুমে হেক্টর প্রতি আনুমানিক গড় আমের ফলন ধরা হয়েছে ১২ দশমিক ৬০ মেট্রিক টন আম। এ মৌসুমে আম উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৩ লাখ ৭৮ হাজার মেট্রিকটন। তবে প্রতি বছর আমের বাগান বর্ধিষ্ণু আকারে পার্শ্ববর্তী উপজেলাগুলোতেও ছড়িয়ে পড়ছে। আম চাষে সফলতা পাওয়াই অন্য কৃষকরাও উৎসাহ উদ্দীপনার মধ্যদিয়ে আম চাষের দিকে ঝুকছে বলে নওগাঁ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সুত্রে জানা যায়। চলতি মৌসুমে পোরশা উপজেলায় ১০ হাজার ৫৫০ হেক্টর জমিতে আম চাষ করা হয়েছে।
সাপাহার উপজেলায় ৯ হাজার ২৫৫ হেক্টর জমিতে আম চাষ করা হয়েছে। পত্নীতলা উপজেলায় ৫ হাজার ৮১৫ হেক্টর জমিতে। নিয়ামতপুর উপজেলায় ১ হাজার ৩৮৪ হেক্টর জমিতে এবং ধামইরহাট উপজেলায় ৬৭৫ হেক্টর জমিতে আম চাষের লক্ষ্য মাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। বাংলাদেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশে আম রপ্তানির সফলতা সাপাহার বরেন্দ্র এগ্রো পার্কের উদ্যোক্তা ও আমচাষী সোহেল রানা গত দুই বছর ধরে বিদেশে আম রপ্তানি করছেন। ৩৩ শতাংশে তার ৭০ বিঘা জমিতে আম্রপালি, বাড়ি-৪ গৌড়মতি, কাটিমন, ল্যাংড়া, হিমসাগর, মিয়াজাকী, সহ দেশিবিদেশি বিভিন্ন জাতের আম বিদেশে রপ্তানির জন্য নিগুড় যত্নে বড় হচ্ছে।
বর্তমানে আম চাষে নওগাঁ জেলা প্রথম, চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা দ্বিতীয়, ও রাজশাহী জেলা তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে। এছাড়া বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় আম ক্রয় বিক্রয়ের হাট নওগাঁ জেলার সাপাহার। (সূত্র, কৃষি কর্মকর্তা এ,কে,এম মন্জুরে মওলা)। আম সংগ্রহ, গোপালভোগ-৩০ মে, গুটি আম-২৫ মে, খিরসাপাতি-৫ জুন, হিম সাগর-৫ জুন।
নাক ফজলি-৮ জুন। হাড়ী ভাঙ্গা-২২ জুন। ল্যংড়া– ২২ জুন। আম্রপালি-২৫ জুন। দেশী ফজলি-২২ জুন। গৌড় মতি-১০ জুলাই। বারী ফোর–১০ জুলাই। আশ্বিনা–১০ জুলাই। (সূত্র, জেলা প্রশাসন নওগাঁ ও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর নওগাঁ)।বরেন্দ্রভূমির অভিজাত এলাকা বিলে, ধানে, আম্রকাননে ভরা নওগাঁ।
মন্তব্য