সব
উপকূলীয় সুন্দরবন সংলগ্ন
সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলায় সম্ভাব্য সাইকোন মোখা মোকাবেলায় উপজেলা
প্রশাসন থেকে ১৬২টি সাইকোন শেল্টার প্রস্তত করা হয়েছে। উপজেলার ১২টি
ইউনিয়নে প্রস্ততকৃত ১৬২ টি সাইকোন শেল্টারে লক্ষাধিক মানুষ আশ্রয় গ্রহণ
করতে পারবেন বলে জানা যায়। প্রস্তত করা হয়েছে তিন হাজার সিপিপি
স্বেচ্ছাসেবক সহ অন্যান্য স্বেচ্ছাসেবকদের। উপজেলার সকল ইউনিয়ন দূর্যোগ
ব্যবস্থাপনা কমিটির সভা করা হয়েছে।
প্রস্ততকৃত সাইকোন শেল্টার গুলি হল বিভিন্ন পর্যায়ের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান,
ইউনিয়ন পরিষদ, রেডক্রিসেন্ট মাতৃসদন সহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠান। ইউনিয়ন
অনুযায়ী সাইকোন শেল্টারের সংখ্যা হল ভূরুলিয়ায় ৭টি, কাশিমাড়ী-১৪টি,
শ্যামনগর-১৫টি, নুরনগর-৭টি, কৈখালী-১৮টি, রমজাননগর-১৪টি,
মুন্সিগঞ্জ-১৭টি, ঈশ^রীপুর-১১টি, বুড়িগোয়ালিনী-১৩টি, আটুলিয়া-১৩টি,
পদ্মপুকুর-১৭টি ও গাবুরায়-১৬টি। সরকারি হিসাব অনুযায়ী ১০৩টি সাইকোন
শেল্টার এর সাথে যুক্ত ৫৯টি সাইকোন শেল্টার আপদকালীন সময়ে ব্যবহার করা
হয়।
উপজেলার দ্বীপ ইউনিয়ন গাবুরায় সাইকোন মোখা মোকাবেলায় ইতোমধ্যে উপজেলা
প্রশাসন থেকে প্রস্ততি সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। প্রস্ততি সভায় উপজেলা
নির্বাহী অফিসার মোঃ আক্তার হোসেন ইউপি সদস্য, গ্রাম পুলিশ, স্বেচ্ছাসেবক
সহ অন্যান্যদের বিভিন্ন দিকনির্দেশনা দিয়েছেন। পর উপজেলা নির্বাহী অফিসার
সরজমিনে কয়েকটি সাইকোন শেল্টার সহ ক্ষতিগ্রস্থ বেড়ীবাঁধ পরিদর্শন করেছেন।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা শাহিনুল ইসলাম বলেন সম্ভাব্য সাইকোন
মোখা মোকাবেলায় সুন্দরবন লাগায়ো গ্রাম গোলাখালীর জনসাধারণকে নিরাপদ
আশ্রয়ে নিয়ে আসার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।
উপজেলায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের বেড়ী বাঁধের কয়েকটি স্থানে দুর্বল থাকার
জন্য এলাকার মানুষের মধ্যে ভাবনার সৃষ্টি হয়েছে। গাবুরা ইউপির প্যানেল
চেয়ারম্যান এস এম রবিউল ইসলাম বলেন ইউনিয়নের দৃষ্টিনন্দন, জেলিয়াখালী,
পাশের্^মারী, গাবুরা ও ৯ নং সোরা নামক স্থানে ঝুঁকিপূর্ণ বেড়ী বাঁধ
রয়েছে। সাইকোন মোখা প্রবল আকার ধারণ করলে যে কোন সময়ে বেড়ীবাঁধে ভাঙ্গন
সৃষ্টি হতে পারে বলে জানান। বুড়িগোয়ালিনী ইউপি সচিব রিয়াজুল ইসলাম বলেন
ইউনিয়নের দূর্গাবাটি, দাতিনাখালী নামকস্থানে প্রায় ৫টি পয়েন্টে বেড়ী বাঁধ
ঝুঁকিপূর্ণ রয়েছে। পদ্মপুকুর ইউপি চেয়ারম্যান জি এম আমজাদ হোসেন বলেন
ইউনিয়নে ঝাঁপা, চন্ডিপুর, পাতাখালী,কামালকাটি নামক স্থানে বেড়ী বাঁধ
সামান্য দুর্বল রয়েছে।
শ্যামনগর পানি উন্নয়ন বোর্ডের এসডি মোঃ জাকির হোসেন বলেন উপজেলায় বেড়ী
বাঁধের অবস্থা মোটামুটি ভাল আছে। বুড়িগোয়ালিনী ইউপির দূর্গাবাটি, গাবুরার
দৃষ্টিনন্দন এলাকার বেড়ী বাঁধ দুর্বল রয়েছে বলে তিনি জানান। তিনি আরও
বলেন দুর্বলকৃত স্থানে সংস্কার কার্যক্রম চলমান রয়েছে।
সিপিপি শ্যামনগর উপজেলার দায়িত্বরত অফিসার সহকারী পরিচালক মুনশী নূর
মোহাম্মদ বলেন উপজেলার বার টি ইউনিয়নে সম্ভাব্য সাইকোন মোখা মোকাবেলায়
২৯৮০ জন সিপিপির স্বেচ্ছাসেবক সাংকেতিক যন্ত্রপাতি সহ প্রস্তত রয়েছে।
প্রয়োজন হলে জনসাধারণকে সচেতন করতে মাইকিং করতেও প্রস্তত করা হয়েছে।
প্রস্ততকৃত স্বেচ্ছাসেবকদের মধ্যে রয়েছে ১৪৯০ জন নারী।
এদিকে সাইকোন মোখা মোকাবেলায় উপজেলা দূর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির সভা
বৃহস্পতিবার (১১ মে) সকাল ১০টায় উপজেলা পরিষদ হল রুমে করা হয়েছে। উপজেলা
নির্বাহী অফিসারের সভাপতিত্বে সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন
সাতক্ষীরা-৪ আসনের এমপি এস এম জগলুল হায়দার। বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন
উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান এস এম আতাউল হক দোলন, উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান
সাঈদ উজ জামান সাইদ, মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান খালেদা আইয়ুব ডলি, শ্যামনগর
থানার অফিসার ইনচার্জ নুরুল ইসলাম বাদল, ইউপি চেয়ারম্যানবৃন্দ প্রমুখ।
শ্যামনগর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ আক্তার হোসেন বলেন যে কোন দূর্যোগে
উপকূলে ক্ষয়-ক্ষতি হওয়ার সম্ভবনা থাকে। সম্ভাব্য সাইকোন মোখা বেলায় নদী
সংলগ্ন ইউনিয়নের জনসাধারণকে নিরাপদ আশ্রয়ে আনার জন্য নৌকা, যন্ত্র চালিত
ট্রলার প্রস্তত রাখা হয়েছে। এছাড়া সকল ইউনিয়নে সাইকোন শেল্টার প্রস্তত
করা হয়েছে এবং যথা সময়ে খুলে রাখার জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের
নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে। তিনি বলেন আশ্রয়কেন্দ্র ছাড়াও পাকা স্থাপনা
যেমন মসজিদ, মাদ্রাসা, স্কুল, কলেজ সাইকোন শেল্টার হিসাবে ব্যবহার করা
হবে।
মন্তব্য