পিরোজপুরের ইন্দুরকানীতে জমি সংক্রান্ত বিরোধের জের ধরে এক বৃদ্ধকে কুপিয়ে জখম করেছে প্রতিপক্ষরা। সোমবার (১ মে) সকাল ৯ টায় উপজেলার উত্তর বালিপাড়া গ্রামের মৃধার হাট সংলগ্ন মল্লিক বাড়ির সামনে এ ঘটনা ঘটে। এতে ছোমেদ মাতুব্বর (৬৫) ও তার পুত্রবধু নাসরিন বেগম (২৫) গুরুতর আহত হয়।
ঘটনার পরে সজনরা আহতদের উদ্ধার করে ইন্দুরকানী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে তাদেরকে উন্নত চিকিৎসার জন্য পিরোজপুর সদর হাসপাতালে প্রেরন করেন। বর্তমানে আহতরা পিরোজপুর সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। হামলায় বৃদ্ধ ছোমেদ মাতুব্বরের মাথায় দুটি এবং একটি হাতে ধারালো অস্ত্রের যখম রয়েছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ছোমেদ মাতুব্বর এবং ইদ্রিস মৃধা সম্পর্কে আপন খালাতো ভাই। এদের মধ্যে বসতবাড়ির জমি জমা নিয়ে দীর্ঘদিন যাবত বিরোধ চলে আসছে। এর-আগে স্থানীয় ভাবে কয়েক দফা শালিস বৈঠক করেও এ ব্যাপারে কোন পক্ষ মীমাংসায় পৌছাতে পাড়েনি। এমনকি এ জমি সংক্রান্ত বিরোধের জেরে এর আগে উভয় পক্ষের মধ্যে দুই দুইবার সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।
আহত ছোমেদ মাতুব্বরের ছেলে রিয়াজুল ইসলাম সাংবাদিকদের জানান, আমার পিতা তার পৈত্রিক সম্পত্তিতে ঐদিন সকালে কলা গাছ রোপন করতে গেলে ইদ্রিস মৃধার ছেলে রুমান (৩০), স্ত্রী শাহিনুর বেগম(৫০), মেয়ে ইমার (২৩) সাথে ঝগড়া বাধে। এ সময় ইদ্রিস মৃধা খবর পেয়ে ইন্দুরকানী বাজার থেকে বাড়ি এসে রোপনকৃত কলাগাছ কেটে ফেলে। এ সময় উভয় পক্ষের মধ্যে কথা কাটাকাটি সৃষ্টির একপর্যায়ে ইদ্রিস মৃধা (৫৫) তার স্ত্রী সন্তান নিয়ে আমার পিতা ছোমেদ মাতুব্বরকে মারধর করে। এ সময় স্থানীয় জুয়েল হাওলাদার তাদের নিভৃত করে চলে যাওয়ার পর দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র দিয়ে আমার পিতাকে এলোপতাড়ি কুপিয়ে গুরুতর আহত করে। এসময়ে তাকে রক্ষা করতে আসলে পুত্রবধু নাসরিন বেগমকেও (২৩) মারধর করে আহত করেন তারা। রিয়াজুল আরো জানান, তাদের কাগজপত্র অনুযায়ী বাড়িতে চার শতক জমি রয়েছে। কিন্তু সেখানে আরো আধা শতক জমি বেশি ভোগ দখল করছে। ইদ্রিস মৃধা মায়ের স্বত্ত অনুযায়ী ৫৫৭ দাগে এক শতক নাল সম্পত্তি পাবে। কিন্তু সেখান থেকে না নিয়ে নিয়ম বহির্ভূত ভাবে আমাদের বসত বাড়ি থেকে ৫৫৯ দাগে এক শতক জমি দাবি করে ভোগ দখল করার চেষ্টা করে আসছে। এ নিয়ে দু পক্ষের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলছে। তবে এ ঘটনায় মামলার বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলে জানান তিনি।
উক্ত অভিযোগের বিষয়ে ইদ্রিস মৃধার কাছে জানতে চাইলে তিনি সাংবাদিকদের জানান, আমি ইন্দুরকানী বাজারে বাজার করতে গিয়েছিলাম তখন আমার খালাতো ভাই ছোমেদ সহ তার পুত্র ও পুত্রবধু আমার জমি দখলের উদ্দেশ্যে কলা গাছ রোপন করতে আমার জমিতে আসে। তখন আমার স্ত্রী শাহীনুর বেগম,পুত্র রোমান এবং মেয়ে ইমা তাদেরকে বাধা দিলে তারা আমার স্ত্রী পুত্র কন্যাদের উপরে হামলা করে। এতে আমার মেয়ে ইমা আহত হলে তাকে ইন্দুরকানী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে। তবে ছোমেদ মাতুব্বরকে কুপিয়ে যখম করার ঘটনাটি তিনি অস্বীকার করেন।
ছোমেদ মাতুব্বরের উপর হামলার বিষয়ে প্রত্যক্ষদর্শী স্থানীয় জুয়েল হাওলাদার নামে এক যুবক সাংবাদিকদের জানান, দুই পক্ষের মধ্যে জমি সংক্রান্ত বিরোধ দীর্ঘদিনের। ছোমেদ মাতুব্বর তার জমিতে ঐদিন সকালে কলা গাছ রোপন করার সময় দুপক্ষের মধ্যে ঝগড়াঝাঁটির খবর পেয়ে আমি ঘটনাস্থলে উপস্থিত হই। তারা রোপণ করা কলা গাছ তুলে ফেলার চেষ্টা করলে ছোমেদ মাতুব্বর লাঠি নিয়ে তেড়ে আসলে এসময় ইদ্রিস মৃধার পরিবারের সদস্যরা তাকে মারধর করলে আমি তাদের দুপক্ষকে নিভৃত করে চলে আসি। আমি ওখান থেকে চলে আসার পড়ে শুনেছি ছোমেদ মাতুব্বরকে ইদ্রিস মৃধা ও তার স্ত্রী সন্তানরা কুপিয়ে যখম করে আহত করেছে।
এব্যাপারে স্থানীয় ইউপি সদস্য রশিদ চৌকিদারের কাছে জানতে চাইলে তিনি জানান, দীর্ঘদিন ধরে দু- পক্ষের মধ্যে জমি জমা সংক্রান্ত বিবাধ চলছে। কয়েক দফা শালিস বৈঠকও হয়েছে। গতকালকের মারামারির ঘটনাটি আমি স্থানীয় ভাবে লোক মুখে শুনেছি।
ইন্দুরকানী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. এনামুল হক বলেন, জমিজমা সংক্রান্ত বিষয়ে দু-পক্ষের মধ্যে দীর্ঘ দিনের বিরোধ ছিল। এর জের ধরেই দু-পক্ষের মধ্যে মারামারির ঘটনা ঘটেছে। তবে এ ঘটনায় আহতরা চিকিৎসাধীন রয়েছেন। এখনো কোন পক্ষ থানায় মামলা করেননি। মামলা হলে তদন্ত সাপেক্ষে এ ব্যাপারে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
মন্তব্য