সব
রাজশাহী কলেজিয়েট স্কুলের সহকারী শিক্ষক মো. জাহাঙ্গীর আলম শাহ্ তিলে তিলে গড়ে তুলেছেন এই কৃষি তথ্য পাঠাগার ও কৃষি জাদুঘর। স্থানঃ কালীগ্রামে পৈত্রিক মাটির বাড়িতে। জমির পরিমান তিন বিঘা। স্থাপন কালঃ ২০০৮।
জাহাঙ্গীর আলম শাহ্ কর্মজীবনে রাজশাহী কলেজিয়েট স্কুলের সহকারী শিক্ষক ছিলেন। তিনি প্রথমে নিজের প্রয়োজনে কৃষির উপরের লেখা বিভিন্ন ধরণের বই সংগ্রহ শুরু করেন। একসময় উপলব্দি করেন এলাকার চাষীদের কৃষিকাজে দক্ষতা বৃদ্ধি ও পরামর্শের প্রয়োজন এই চেতনা বোধ থেকেই লাইব্রেরির বইয়ের সংখ্যা বাড়ানোর দিকে নজর দেন। লাইব্রেরি সমৃদ্ধি হলে তাঁর মাথায় কৃষি উপকরণ ও যন্ত্রপাতি সংগ্রহের নেশা পেয়ে বসে। বর্তমানে যাদুঘরটি পঞ্চাশটি কর্ণারে ও লাইব্রেরিটির সত্তরটি কর্ণারে বিভক্ত করা হয়েছে। লাইব্রেরির ছবি কৃষিতে অবদান রাখা ৪০ জন দেশী-বিদেশী গুনী ব্যক্তিদের ছবি কর্নারে নাম ও পরিচয়সহ সংযোজন করা হয়েছে। এখানকার নয়টি ঘরের মধ্যে একটি যাদুঘর, লাইব্রেরি ঘোয়াল ঘর, খাবার ঘর, হেশেল ঘর ও একটিতে অতিথী শোবার ঘর রয়েছে। বৃক্ষের মধ্যে দুই শতাধিক বিভিন্ন ঔষধি ও শতাধিক ফলজ গাছ রয়েছে। আরো রয়েছ বিরল প্রজাতির বুধবার সুদুর চট্রগ্রামের বন গবেষণা ইনস্টিটিউট থেকে কঞ্চির কলম সংগ্রক করে বাঁশের এজাতিয় তৈরী করা হয়েছে। তিন বছরের পরিচর্যায় বর্তমানে বাঁশের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৩ টি।
যোগাযোগঃ শাহ্ কৃষি যাদুঘর কৃষি তথ্য পাঠাগারটি নওগাঁ জেলা শহর থেকে ৪০ কিলোমিটার দক্ষিণে। ও মান্দা উপজেলা সদর থেকে ১৩ কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থিত। নওগাঁ থেকে মান্দা বাস যোগে ও মান্দা কিম্বা দেলুয়াবাড়ি থেকে বিভিন্ন উপায়ে কালিগ্রাম কৃষি যাদুঘরে পৌছা যায়। গ্রামের প্রবেশ পথে তীর চিহৃ দিয়ে যাদুঘরের নির্দেশনা রয়েছে। প্রবেশ পথে একটি বড় লোহার দরজা এরপর সুন্দর করে ফুলের গাছের গেট দিয়ে সাজানো রয়েছে অভ্যর্থনা গেট। প্রতি দিন সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত খোলা থাকে যাদু ঘর।
কৃষি যাদুঘরে যা রয়েছে, কৃষি সরঞ্জামাদি, বিলুপ্তির পথে গরুর গাড়ি, গোমাই, মাথাল, ঢেকি, মই, লাঙ্গল, জোয়াল, পানি সেঁচের জাঁত, পাল্কি, নৌকা, কোদাল, কাস্তে, ঝাড়ু, দাউল, বিদা, তেল ভাঙ্গার ঘানী, বাইস্কোপ, বাঁশের তৈরী টোপা, মাছ ধরার বিভিন্ন যন্ত্র, ধান রাখার মাটির থেরী বড় বড় হাড়ি, মটকি, ধান মাড়ায়ের মেশিন, কীটনাশক স্প্রে মেশিন, গোয়াল ঘর সহ আরও অনেক কিছু। কৃষি বিষয়ে নতুন কিছু উদ্ভাবন হলে এই যাদু ঘর থেকে এলাকার কৃষকদের প্রজেকক্টরের মাধ্যমে দেখানো হয়ে থাকে।
তদারকিঃ এই লাইব্রেরি দেখা শুনার জন্য জোস্না খাতুন। বাগান পরিচর্যার জন্য আজহার আলী ও যাদু ঘরের দায়ীত্বে হযরত আলী নামে মোট তিন জন কর্মী রয়েছে। যাদুঘরটি অসম্ভব ভালোলাগার একটি জায়গা।বিলুপ্তপ্রায় কৃষি যন্ত্রপাতি এখানে সংরক্ষণ করা হয়েছে। প্রাচিন কৃষি প্রধান বরেন্দ্রভূমির নওগাঁ অঞ্চলের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে কৃষিকাজের উপকরণ সামগ্রী পরিচিত করতে ও শিক্ষার্থীদের কৃষি শিক্ষা ও গবেষণার ক্ষেত্রে সহায়ক ভুমিকা পালন করবে এই প্রত্যাশা রইল।
লেখকঃ প্রভাষক মো. আব্দুর রাজজাক (রাজু)
মন্তব্য