সব
দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) আইন-২০০৪-এর সংশোধিত অধ্যাদেশ জারি করা হয়েছে, যার মাধ্যমে সংস্থাটির কাঠামো এবং ক্ষমতায় আমূল পরিবর্তন আনা হয়েছে। বুধবার (২৪ ডিসেম্বর) রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের অনুমোদনক্রমে এই অধ্যাদেশটি কার্যকর করা হয়েছে। নতুন এই বিধানে কমিশনের সদস্য সংখ্যা বৃদ্ধি, তদন্তের পরিধি বাড়ানো এবং নিয়োগ প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা আনার ওপর বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।
অধ্যাদেশ অনুযায়ী, এখন থেকে দুর্নীতি দমন কমিশন অনধিক পাঁচজন কমিশনারের সমন্বয়ে গঠিত হবে, যা আগে ছিল তিনজন। এই পাঁচজনের মধ্যে অন্তত একজন নারী এবং একজন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) বিষয়ে অভিজ্ঞ বিশেষজ্ঞ থাকা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। রাষ্ট্রপতি এই কমিশনারদের মধ্য থেকে একজনকে চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ প্রদান করবেন। আইটি বিশেষজ্ঞদের অন্তর্ভুক্ত করার মূল উদ্দেশ্য হলো আধুনিক ও ডিজিটাল দুর্নীতির রহস্য উন্মোচন এবং প্রযুক্তিগত তদন্ত কার্যক্রমকে আরও শক্তিশালী করা।
কমিশনার নিয়োগের জন্য গঠিত কমিটি প্রক্রিয়ায় বড় পরিবর্তন আনা হয়েছে। আগের ‘সার্চ কমিটি’র নাম পরিবর্তন করে এখন রাখা হয়েছে ‘যাচাই-বাছাই কমিটি’। এই কমিটির নেতৃত্বে থাকবেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের একজন জ্যেষ্ঠ বিচারক, যা আগে ছিল প্রধান বিচারপতির দায়িত্ব। কমিটির অন্যান্য সদস্যদের মধ্যে থাকবেন প্রধান বিচারপতি কর্তৃক মনোনীত হাইকোর্ট বিভাগের একজন বিচারক, মহা হিসাব-নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক (সিএজি), সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) চেয়ারম্যান এবং জাতীয় সংসদের স্পিকার কর্তৃক মনোনীত সরকারি ও বিরোধী দলের দুইজন সংসদ সদস্য। তবে সংসদ ভেঙে যাওয়া অবস্থায় সংসদ সদস্যদের ছাড়াই এই কমিটি গঠন করা যাবে।
দুদকের তদন্ত ও অভিযানের ক্ষমতাও উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি করা হয়েছে। প্রথমবারের মতো এনফোর্সমেন্ট ও গোয়েন্দা কার্যক্রম পরিচালনার বিষয়টি সরাসরি আইনের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে, যা আগে কেবল বিধির ওপর নির্ভরশীল ছিল। এ ছাড়া মানিলন্ডারিং সংক্রান্ত অপরাধের অনুসন্ধানে দুদককে ব্যাপক ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। এখন থেকে কেবল ঘুষ ও দুর্নীতি নয়, বরং দলিল জালকরণ, প্রতারণা, মুদ্রা পাচার, চোরাচালান, শুল্ক ও কর সংক্রান্ত অপরাধ এমনকি পুঁজিবাজারে ইনসাইডার ট্রেডিং বা মূল্য সংবেদনশীল তথ্য ব্যবহার করে জালিয়াতির মতো অপরাধগুলোও দুদকের তদন্তের আওতায় আসবে।
উল্লেখ্য, ২০২৪ সালের ৩ অক্টোবর টিআইবি-র নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামানকে প্রধান করে গঠিত দুদক সংস্কার কমিশনের সুপারিশের ভিত্তিতে এই পরিবর্তনগুলো আনা হয়েছে। যদিও টিআইবি কিছু কৌশলগত সুপারিশ বাদ পড়ায় অসন্তোষ প্রকাশ করেছিল, তবে সরকার মনে করছে এই নতুন অধ্যাদেশের মাধ্যমে দুদক আরও বেশি কার্যকর ও স্বাধীন প্রতিষ্ঠানে পরিণত হবে। বিশেষ করে আর্থিক অপরাধ ও অর্থ পাচার রোধে দুদকের এই বর্ধিত ক্ষমতা দুর্নীতি দমনে এক নতুন মাত্রা যোগ করবে।
মন্তব্য