সব
ময়মনসিংহের তারাকান্দায় হেনস্থা করে বৃদ্ধ হালিম উদ্দিন আকন্দ ফকিরের চুল ও দাড়ি কাটার ঘটনায় সুজন মিয়া (৩০) নামে আরও ১ আসামি গ্রেপ্তার হয়েছে। এনিয়ে গত দুইদিনে ২ আসামি গ্রেপ্তার হয়েছে। তাদের প্রত্যেকের বিরুদ্ধে ৩ দিন করে রিমান্ড প্রার্থনা করা হয়েছে।
বুধবার (১ অক্টোবর) বিকাল ৩টার দিকে সংশ্লিষ্ট মামলায় আসামিদের ময়মনসিংহ চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে সোর্পদ করা হয়েছে। এ সময় বিজ্ঞ আদালতে আসামিদের বিরুদ্ধে এই রিমান্ড আবেদন করা হয়।
পৃথক পৃথক অভিযানে গতকাল (৩০ সেপ্টেম্বর) বিকেলে ও রাতে ময়মনসিংহ নগরীর বিভিন্ন এলাকা থেকে প্রথমে আসামি মজনু মিয়া (৪৭) এবং পরে মো. সুজন মিয়া (৩০) কে গ্রেপ্তার করা হয়। তারা দু’জনেই উপজেলার কাশিগঞ্জ এলাকার বাসিন্দা।
এর আগে শনিবার (২৭ সেপ্টেম্বর) বিকালে তারাকান্দা থানায় ভুক্তভোগীর ছেলে মো. শহীদ আকন্দ বাদি হয়ে এই মামলা দায়ের করেন বলে জানিয়েছেন তারাকান্দা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুহাম্মদ টিপু সুলতান।
ভুক্তভোগী হালিম উদ্দিন আকন্দ অভিযোগ করেন, ওইদিন (ঘটনার দিন) আমি বাজারে গেলে তারা আমাকে জোর করে ধরে আমার চুল ও দাড়ি কেটে দিয়েছে। বাজারে তখন লোক কম ছিলো। আমি চেষ্টা করেও তাদের হাত থেকে রেহাই পাইনি। তখন আমি আল্লাহর কাছে বিচার দিয়েছি। এখনও আল্লাহর কাছে বিচার চাই।
তবে পরিবারের কথায় এখন আমি থানায় অভিযোগ দিয়েছি, দেখি তারা কী বিচার করে।
তিনি আরও বলেন, আমার চুল দাড়ি কাটার সময় বাইরের ২ জন লোকসহ প্রায় ৮ থেকে ৯ জন লোক ছিল। তাদের মধ্যে এলাকার নয়ন এবং মজনুও ছিল। তারা এখনো এলাকায় আছে। তারা আমাকে ভয় দেখাচ্ছে। তারা আমার মান ইজ্জত মারছে, আমি বিচার চাই।
এলাকায় খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, হালিম উদ্দিনের বাড়ি তারাকান্দা উপজেলার কোদালিয়া গ্রামের বাসিন্দা।
স্থানীয় বাসিন্দারা তাঁকে হালিম ফকির হিসেবেই চেনেন। একেবারেই গরীব একজন মানুষ। হালিম উদ্দিন কোনো অপ্রকৃতিস্থ বা পাগল ব্যক্তি না। তিনি হজরত শাহজালাল (র.) ও শাহ্ পরানের (র.) ভক্ত। প্রায় ৩৪ বছর আগে উনাদের মাজারে যাওয়ার পর থেকেই তিনি বেশভূষাকে বদলে যান। সেই থেকে তিনি চুল দাড়ি কাটা বন্ধ করে দেন। এরপর থেকে তিনি এলাকায় টুকটাক কবিরাজি করতেন। নিজের মতো চলতেন। তাকে নিয়ে পরিবার বা এলাকাবাসীরও কোনো অভিযোগ ছিল না।
স্থানীয়রা আরও জানান, হেনস্থার পর চুল-দাড়ি কেটে দেওয়ার পরই বিষন্নতা ভর করে তার জীবনে। সেই বিষন্নতা এখনও কাটেনি। কারো সঙ্গে সেদিনের ঘটনা নিয়ে কথা বললে, কখনও আবেগ, কখনও রাগ আবারও কখনো ক্ষোভ ঝরে পড়ে তার কন্ঠে।
এদিকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে হেনস্থা করে হালিম উদ্দিনের চুল কাটার ঘটনার পর নিন্দার ঝড় বইছে। বিশেষ করে হেনস্থা করে চুল কাটার সময় অসহায়ের মতো তিনি বলেছিলেন, আল্লাহ, তুই দেহিস’। তার এ বাক্যটিই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এখন প্রতিবাদের ভাষা হয়ে উঠেছে।
প্রতিবেশিরা জানান, হালিম উদ্দিন পাগল বা মানসিক রোগি নন। সংসার জীবনে তিনি পুত্র ও কন্যা সন্তানের জনক। দীর্ঘ ৩৪ বছর যাবৎ জট ছিল তাঁর মাথায়। এক সময় কৃষক ছিলেন। ধীরে ধীরে ফকিরি হালে চলে আসেন। টুকটাক কবিরাজিও করেন। এলাকায় স্বাভাবিক মানুষের মতোই তার আচরণ ও চলাফেরা। আছে হাট বাজারেও যাতায়াত। গত কোরবানির ঈদের কয়েক দিন আগে উপজেলার কাশিগঞ্জ বাজারে হঠাৎ করেই একদল লোক এসে তাঁর মাথার জট, দাড়ি ও চুল জোরপূর্বক কেটে দেন। তখন হালিম উদ্দিন প্রাণপণ চেষ্টা করেন, তাদের আটকাতে। কিন্তু আগত ব্যক্তিদের শক্তির সাথে তিনি আর পেরে উঠেননি।
মন্তব্য