সব
ময়মনসিংহ জেলায় জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতরের বহুল আলোচিত বিতর্কিত নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ ছামিউল হককে ঘিরে আবারও শুরু হয়েছে তীব্র ক্ষোভ ও সমালোচনা। দুর্নীতি, টেন্ডার সিন্ডিকেট, ঘুষ বাণিজ্য ও ক্ষমতার অপব্যবহারের কারণে গত ২০২১ সালে শেরপুরে বদলি হয় এই বিতর্কিত কর্মকর্তা।দীর্ঘ ৪ বছর ময়মনসিংহ থাকার পরও তদবির ও ঘুষ বাণিজ্যের মাধ্যমে তিনি ফের ময়মনসিংহে পোস্টিং নেন।
তবে সম্প্রতি তিনি ফের শেরপুরে বদলি হলেও, মাত্র ৭ দিনের মাথায় ৩ কোটি টাকা ঘুষের বিনিময়ে পুনরায় ময়মনসিংহে পোস্টিংয়ের চিঠি ইস্যু হয়, যা জনমনে প্রবল ক্ষোভ সৃষ্টি করেছে। জনমনে প্রশ্ন: আলাদীনের চেরাগ না পেলে সম্ভব? সচেতন মহল বলছে, “বদলির মাত্র ৭ দিনের মাথায় একজন বিতর্কিত কর্মকর্তাকে আবারও একই পদে বসানো দেশের প্রশাসনিক ইতিহাসে বিরল। এই ঘটনা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতরে নিয়মনীতি ও আইনের সম্পূর্ণ অবমূল্যায়নের জ্বলন্ত উদাহরণ!” অভিযোগের পাহাড়: টেন্ডার সিন্ডিকেট, ফাইল আটকে ঘুষ আদায়! ময়মনসিংহে দায়িত্বকালীন সময়ে নির্বাহী প্রকৌশলী ছামিউল হকের বিরুদ্ধে ঠিকাদার ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অসংখ্য অভিযোগ রয়েছে। বিলের চেক আটকে ঘুষ আদায়, প্রাপ্ত কাজের অনুকূলে অনাপত্তিপত্র প্রদানে ঘুষ গ্রহণ, চুক্তিপত্র ও ফাইল আটকে অতিরিক্ত অর্থ হাতিয়ে নেওয়া, নির্দিষ্ট ঠিকাদার ছাড়া অন্য কাউকে কাজ না দেওয়ার একাধিক অভিযোগ উঠেছে।
ভুক্তভোগীরা জানান, ৫%-৭% ঘুষ না দিলে টেন্ডারের গোপন রেট ফাঁস করা হতো না এবং টেন্ডার প্রক্রিয়া শেষে নোটিফিকেশন অব অ্যাওয়ার্ড পেতে হতো আরও ১%-১.৫% ঘুষে! বিল পরিশোধের সময়ও বিশেষ জামানতের নামে আদায় করা হতো ৩% ঘুষ! ফাইলের সঙ্গে টাকা না দিলে দিনের পর দিন ফাইল আটকে রাখা ছিল তার নিয়মিত কৌশল। একজন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ঠিকাদার বলেন,“টেন্ডার কমিটি, যাচাই-বাছাই, চূড়ান্ত অনুমোদন— প্রতিটি ধাপে ঘুষ ছাড়া কিছুই হতো না। রাজনৈতিক প্রভাব ও সিন্ডিকেটের কাছে আমরা জিম্মি ছিলাম। আওয়ামীলীগের কেন্দ্রীয় নেত্রী পপির ডানহাত ছামিউল হক? সম্প্রতি সচিব,স্থানীয় সরকার বিভাগ এবং দুর্নীতি দমন কমিশনের চেয়ারম্যান বরাবর জমা দেওয়া এক লিখিত অভিযোগে এই বিতর্কিত প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে আরও ভয়াবহ তথ্য উঠে এসেছে। অভিযোগপত্রে বলা হয়েছে, ছামিউল হক ছিলেন নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের সাবেক ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও কেন্দ্রীয় আওয়ামীলীগের নেতা মারুফা আক্তার (পপি)-এর ঘনিষ্ঠ সহযোগী ও ডানহাত। সরকারি চাকরির আড়ালে ঠিকাদারি ও টেন্ডার নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে তিনি জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতরে এক মাফিয়া সাম্রাজ্য গড়ে তোলেন। মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপন উপেক্ষা করে ক্ষমতাশালী মহলের তদবিরে তিনি নির্বাহী প্রকৌশলীর পদে বসেন। ২০১৭ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত তিনি ময়মনসিংহে নির্বিঘ্নে দায়িত্ব পালন করেন। ওই সময় প্রায় প্রতিটি ওয়ার্ক অর্ডারের জন্য ন্যূনতম ৫% কমিশন আদায় করতেন।
কাজের মানের তোয়াক্কা না করে পছন্দের ঠিকাদারদের দিয়ে কোটি কোটি টাকার প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয় নিম্নমানের উপকরণ দিয়ে। তৎকালীন ধর্মমন্ত্রী ফরিদুল হক খান দুলাল ও ছাত্রলীগ নেত্রী পপির প্রত্যক্ষ শেল্টারে তিনি অদম্য ছিলেন বলে অভিযোগ পত্রে উল্লেখ করা হয়েছে। ৭দিনের মাথায় পুনরায় ময়মনসিংহ পোস্টিং: ক্ষোভে ফুঁসছে স্হানীয়রা। তীব্র সমালোচনার মধ্যেই বদলির মাত্র ৭ দিনের মাথায় ছামিউল হককে পুনরায় ময়মনসিংহে পোস্টিং দেওয়ার ঘটনায় ক্ষোভে ফুঁসছে জেলার সচেতন মহল। স্থানীয়রা বলছে,৩ কোটি টাকা ঘুষের বিনিময়ে গোপন মহলের প্রভাবে এই চিঠি ইস্যু হয়েছে! চিঠি প্রত্যাহারের দাবি:সচেতন মহল ও ঠিকাদার সংগঠনগুলো ছামিউল হককে ময়মনসিংহে পুনরায় পোস্টিং দেওয়ার চিঠি অবিলম্বে প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছে।
তারা হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছে,“চিঠি প্রত্যাহার না হলে কঠোর আন্দোলনের মাধ্যমে তার প্রত্যাহার নিশ্চিত করা হবে।” সরকারের ভাবমূর্তি প্রশ্নের মুখে! ময়মনসিংহ জুড়ে এই ঘটনায় তীব্র ক্ষোভ ও সমালোচনা চলছে। জনমনে প্রশ্ন উঠছে— কে এই ক্ষমতাধর সিন্ডিকেট যারা কোটি কোটি টাকা লুটপাট করেও নির্বিঘ্নে এই কর্মকর্তাকে রক্ষা করছে? প্রশাসন কি ঘুষের বিনিময়ে সিদ্ধান্ত নিচ্ছে? দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে কোনোদিন কি কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হবে?সচেতন মহল মনে করছে,বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার যদি অবিলম্বে ছামিউল হকের পুনরায় ময়মনসিংহ পোস্টিং প্রত্যাহার না করে তবে সরকারের ভাবমূর্তি মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
মন্তব্যের জন্য যোগাযোগের চেষ্টা: কেন বারবার ময়মনসিংহে পোস্টিং? ও বিভিন্ন দুর্নীতি,অনিয়ম ও অপকর্মের গুরুতর এসব অভিযোগের ব্যাপারে প্রকৌশলী মোহাম্মদ ছামিউল হকের মন্তব্য জানতে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও তার সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।
মন্তব্য