সব
রেলের যন্ত্রাংশ ক্রয়ের ভুয়া রেকর্ডপত্র বানিয়ে ১ কোটি ৬২ লাখ ৫ হাজার ২৭৩ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে রেলওয়ের পাহাড়তলী কার্যালয়ের ১০ কর্মকর্তা ও দুজন ঠিকাদারের বিরুদ্ধে দুটি মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
দুর্নীতি দমন কমিশন(দুদক) প্রধান কার্যালয়ের উপপরিচালক মো. আহসানুল কবির বুধবার বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে কমিশনের চট্টগ্রাম সমন্বিত জেলা কার্যালয়ে মামলা দুটি করেন। চট্টগ্রাম-১ সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের উপপরিচালক মো: নাজমুচ্ছায়াদাত বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
একটি মামলার এজাহারে আসামি—বাংলাদেশ রেলওয়ের পাহাড়তলী কার্যালয়ের প্রধান সরঞ্জাম নিয়ন্ত্রক ফরিদ আহমেদ, সাবেক অতিরিক্ত প্রধান সরঞ্জাম নিয়ন্ত্রক মুহাম্মদ রাশেদুল আমিন, প্রধান যন্ত্র প্রকৌশলী (পূর্ব) তাপস কুমার দাস, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এস এম ট্রেড অ্যান্ড টেকনোলজির স্বত্বাধিকারী এ এম এম ইকবাল মোর্শেদ। তাঁদের বিরুদ্ধে অভিযোগ তারা পরস্পর যোগসাজশ এবং ক্ষমতার অপব্যবহার করে অযোগ্য কোম্পানিকে কাজ দিয়ে সরকারের ১ কোটি ৩৭ লাখ ৮৭ হাজার টাকা আত্মসাৎ করেছেন।
অন্য একটি মামলার আট আসামি হলেন রেলওয়ের পাহাড়তলী কার্যালয়ের সাবেক অতিরিক্ত প্রধান সরঞ্জাম নিয়ন্ত্রক ও বর্তমানে পরিচালক (ইনভেনটরি কন্ট্রোল) প্রকৌশলী মো. আনোয়ারুল ইসলাম, সাবেক পরিচালক (লোকো-মেইন্ট) ও বর্তমানের দিনাজপুরের পার্বতীপুরের কেন্দ্রীয় লোকোমোটিভ কারখানার প্রধান নির্বাহী মো. রফিকুল ইসলাম, সাবেক প্রধান সরঞ্জাম নিয়ন্ত্রক মো. রুহুল কাদের আজাদ, জেলা সরঞ্জাম নিয়ন্ত্রক (পি-২) মো. রাহিদ হোসেন, সাবেক সহকারী সরঞ্জাম নিয়ন্ত্রক (পি-২) মো. আনোয়ার হোসেন, সহকারী সরঞ্জাম নিয়ন্ত্রক (সদর/পূর্ব) মো. এমদাদুর রহমান, সাবেক এডব্লিউএম/ডিএল ও বর্তমানে পাহাড়তলীর ডিজেল শপের কর্মব্যবস্থাপক (ডিজেল) এতেসাম মো. শফিক, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এম/এস দ্য কসমোপলিটন করপোরেশনের স্বত্বাধিকারী নাবিল আহসান। তাঁদের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তারা মালামালের পরিমাণ ও কাগজপত্র পরিবর্তন করে মালামাল ক্রয়ের ভুয়া রেকর্ডপত্র তৈরি করে সরকারের ২৪ লাখ ১৮ হাজার ৭২৩ টাকা আত্মসাৎ করেছেন।
মামলা সূত্রে জানা যায়, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এস এম ট্রেড অ্যান্ড টেকনোলজির টেন্ডার সংক্রান্ত যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতা না থাকায় তার অভিজ্ঞতা নাই বলে কারিগরি রিপোর্টে কমিটির সদস্যবৃন্দ কর্তৃক মতামত প্রদান করা হয়। ফলে টেন্ডারে নেওয়া সকল প্রতিষ্ঠানের সাথে বিজয়ী প্রতিষ্ঠান কে অযোগ্য ঘোষণা করে পূণ: দরপত্র আহবান না করে ট্রেড এন্ড টেকনোলজিকে অনৈতিক সুবিধা গ্রহণের মাধ্যমে উত্তীর্ণ ঘোষণা করার মাধ্যমে কার্যাদেশ প্রদান করা হয়।
দুদকের অনুসন্ধানকালে অপর মামলায় দেখা যায়, প্রধান সরঞ্জাম নিয়ন্ত্রক, বাংলাদেশ রেলওয়ে, পাহাড়তলী, চট্টগ্রাম দপ্তরে পাঠানোর সত্যায়িত রেকর্ডপত্র এবং প্রধান হিসাব অধিকর্তা (পূর্ব), বাংলাদেশ রেলওয়ে, চট্টগ্রাম দপ্তরের পাঠানো সত্যায়িত রেকর্ডপত্র পর্যালোচনায় দেখা যায়, চুক্তিপত্রের মোট মূল্য একই থাকলেও মালামালের পরিমাণ ও একক মূল্যের মধ্যে মিল নেই। যেমন—প্রধান হিসাব অধিকর্তার (পূর্ব) পাঠানো পরিশোধিত বিলে ১ টি পাম্প লুব্রিকেটিং ওয়েল কেনা হয় ১১ লাখ ৪৫ হাজার ১৫০ দশমিক ৫০ টাকায়, যার ৭ দশমিক ৫ শতাংশ হারে সরকার কর্তৃক উৎসে কর কাটা হয় ৭৯ হাজার ৮৯৪ টাকায়। অপর দিকে প্রধান সরঞ্জাম নিয়ন্ত্রকের পাঠানো রেকর্ডপত্রে অতিরিক্ত মুল্য কম করে দেখানোর জন্য তারা একটা জাল চুক্তিপত্র তৈরি করে যেখানে ১টি মালের পরিবর্তে ৩টি কেনা হয়েছে দেখানো হয় এবং প্রতিটির একক মূল্য ৪ লাখ ৮৫ হাজার টাকা দরে ৩টির মোট মূল্য ১৪ লাখ ৫৫ হাজার টাকা দেখানো হয়।
এছাড়াও প্রধান হিসাব অধিকর্তার (পূর্ব) পাঠানো পরিশোধিত বিলে পাম্প ওয়াটার উইথ গিয়ার ১টি মাল কেনা হয় ৯ লাখ ৯৯ হাজার ৮৭০ টাকায়। এটির মূল্যও কম করে দেখানোর জন্য তারা একটা জাল চুক্তিপত্র তৈরি করে এবং তাদের পাঠানো জাল চুক্তিপত্রে দেখানো হয়েছে, ১টির পরিবর্তে ৩টি কেনা হয়েছে এবং প্রতিটির একক মূল্য ২ লাখ ৭০ হাজার ৮৪১ টাকা দরে ৩টির মোট মূল্য ৮ লাখ ১২ হাজার ৫২৩ টাকা।
এমন অনিয়মের তথ্য প্রমাণ পাওয়ায় দুদক মামলা করেছেন বলে তথ্য পাওয়া যায়।
মন্তব্য