সব
সেই প্রেম তোমাকে দিলেম…তুমি আজ কত দূরে,,, আমার বলার কিছু ছিল না’ – বাঁশিতে এসব গানের সুর তুলে ধীরলয়ে হাঁটতে থাকেন আসাদুর রহমান আসাদ। হাঁটতে থাকেন তিনি আমব্রেলা চেয়ার আর সমুদ্র পানি সীমার মাঝ দিয়ে। তার বাঁশির সুর, সমুদ্রের গর্জন মিলিয়ে মোহনীয় পরিবেশের সূচনা ঘটায়। সেই সুর মূর্ছনায় মোহিত হন হাজারো পর্যটক। আসাদ দাঁড়িয়ে বাঁশি বাজালেই তাকে ঘিরে দর্শক শ্রোতাদের বৃত্তকার চক্র গড়ে উঠে, জমে ভিড় ভারাক্কা। এতে বখশিস বেশি মিললেও তার নিজের জন্য অন্য সমস্যা হয়।
ঢাকার উত্তরা আজমপুর মধ্যপাড়ার অধিবাসী
আসাদদের কপালে দুর্যোগ নেমে আসে বাবার মৃত্যুর পরেই। স্বজনরা কিছুদিনের মধ্যেই ঘরবাড়ি, ভিটে মাটি সবকিছুই গ্রাস করে নেয়। ফলে আসাদরা স্রোতের শ্যাওলার মতো দিগ্বিদিক ভাসতে থাকেন। সে সময় বরগুনায় বিয়ে দেয়া এক বোনের বাড়ি হয়ে উঠে আসাদের সাময়িক আশ্রয়স্থল। সেই সুবাদে ওখানেই বিয়ে করেন তিনি। খুব ভালো বাসতেন স্ত্রীকে, সুখও ছিল ঘরে। কিন্তু কপালে তাও সইলো না। বিয়ের আট বছর পর সিজারের মাধ্যমে সন্তান প্রসবকালে করুণ মৃত্যু ঘটে স্ত্রীর। এরপর থেকে আবারও ভাসমান হয়ে পড়েন আসাদ।
এক সময়ের প্রকৌশল বিভাগের কর্মী আসাদ বাউল হয়ে ঘুরেন ফিরেন সারাদেশ, হাতে তুলে নেন বাঁশি। আড়াই বছর যাবত আছেন কক্সবাজার পর্যটন এলাকায়। কাপড়ের কাধ ব্যাগে নানা আকারের ৩০/৩৫ টি বাঁশি নিয়ে হেঁটে চলেন, মুখের শিশে তুলেন সুর মূর্ছনা। কখনও সুরের বখশিস পান, কখনও বেচেন বাঁশি।
স্ত্রী হারা আসাদের মনে হঠাত করেই দোলা দিয়েছে সোনিয়া নামের এক নারী। তারও বাড়ি বরগুনার পাথরঘাটায়। আসাদ বলেন, সোনিয়ার মতো কাউকে এতো ভালোবাসিনি, তাকে নিয়ে সুখ স্বপ্ন বুনি। কিন্তু সে যেন আমায় বুঝতেই চায় না। কথায় কথায় মাইন্ড করে, অনেক মানসিক শাস্তি পাই আমি। ৬৫ কেজি ওজনের এই আমাকে কয়েকদিনে ৫৬ কেজি বানিয়ে ছেড়েছে।
বাঁশি বাজানোর সময়ই আসাদের মোবাইল ফোনে পরপর দুই বার রিং বেজে উঠে, কিন্তু কল রিসিভ করতে পারেননি। পরক্ষণেই মোবাইল বের করে সোনিয়ার মিস কল দেখে সে নাম্বারে ব্যাক কল দিতে থাকেন। কিন্তু সোনিয়া আর আসাদের কল রিসিভ করে না। হতাশ আসাদ বলে উঠেন, ‘এই দেখেন এখনই আমার নাম্বারটা ব্লক করে দিলো সোনিয়া। এ ব্লক পাঁচ দিনেও খুলতে পারে, আবার দশ দিনও ব্লক রাখতে পারে। সব তার মর্জি।’ দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে আসাদ বলতে থাকেন, ‘আহারে দুনিয়া,,, হাজারো পর্যটকের ভালোবাসা পাইলাম, শুধু সোনিয়াই আমাকে বুঝলো না!’
প্রেম জীবনের সোনিয়া ছাড়া কক্সবাজার সী বিচ আর পর্যটকদের প্রতি দারুণ মমত্ত্ব তার। সমুদ্র সৈকতকে তিনি কক্সবাজার বাসীর জন্য আল্লাহপাকের বিশেষ উপহার বলে মনে করেন। বলেন, সামান্য কয়েক কিলোমিটার সৈকত হাজারো মানুষের যুগ যুগের নিশ্চিত উপার্জনস্থল। সুব্যবহার আর সততার দ্বারাই তা টিকিয়ে রাখা সম্ভব।
মন্তব্য