সব
ময়মনসিংহে ধর্ম ব্যবসায়ীদের উদ্যোগে দুই দিন ব্যাপী হযরত আয়েত আলী শাহ (রঃ) এর শান্তিপূর্ণ ভাবে মেলা, নাগরদোলা, মাদক সেবন ও কোন প্রকার অসামাজিক কর্মকাণ্ড এবং ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত না করার সকল তৎপরতা ব্যতি রেখে ময়মনসিংহ জেলা প্রশাসক বরাবরে অনুমতির আবেদন করলে প্রশাসনের দেয়া ১৪টি শর্তে জেলা প্রশাসকের পক্ষে সহকারী কমিশনার (ভারপ্রাপ্ত) শারমিন আক্তার রিমা স্বাক্ষরিত অনুমতি প্রদান করেন। অনুমতি পত্রের ১৪টি শর্ত বাস্তবায়ন ও সার্বিক আইন শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণের জন্য জেলা পুলিশকে অনুলিপি প্রদান করেন।
ময়মনসিংহ জেলা পুলিশ আইন শৃঙ্খলা সার্বিক তদারকি ও অনুমতির শর্ত সাপেক্ষে সহযোগিতা করার জন্য ময়মনসিংহ কোতোয়ালী মডেল থানার অফিসার ইনচার্জকে নির্দেশনা প্রদান করেন।
ওরছ মাহফিল উদযাপনের ১৪টি শর্তের মধ্য ১২টি শর্ত ভঙ্গ করে প্রায় অর্ধকোটি টাকা চাঁদাবাজি, মেলা, নাগরদোলা, অশালীন গান বাজনার মাধ্যমে আখেরী মোনাজাতের আংশিক পরিচালনার মধ্য দিয়ে দুই দিন ব্যাপী বাৎসরিক ওরছ মাহফিল ইতিমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে ময়মনসিংহ সদর উপজেলা ৭নং চর নিলক্ষীয়া ইউনিয়নের রাজগঞ্জ (সাহেব কাচারি) বাজারে অবস্থিত পীরে কামেল হযরত আয়েত আলী শাহ (রঃ) এর মাজার শরিফে।
প্রশাসনের নাকের ডগায় সকল নিয়ম ভঙ্গ করে সীমিত পরিসরে আয়োজনের কথা শর্তে উল্লেখ থাকলেও, মাস্ক পরিধান, ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত, মেলা, নাগরদোলাসহ নানান অনিয়মের মধ্য দিয়ে বাৎসরিক ওরছ মাহফিল সমাপ্ত হলেও কোতোয়ালি পুলিশের ভূমিকা ছিলো উদাসীন।
অনুমোদনের শর্ত ভঙ্গের বিষয়ে থানা পুলিশ’কে একাধিক গণ্যমান্য ব্যাক্তিবর্গ অবগত করলে থানা পুলিশ ব্যাবস্থা গ্রহণ না করায় এসব অনৈতিক, ধর্মের নামে অস্লীল গান বাজনাসহ স্থানীয় সাবেক এক মেম্বারকে লাঞ্ছিত হওয়ার বিষয়টি নিয়ে স্থানীয়রা একাধিক বার জাতীয় সেবা ৯৯৯ নাম্বারে কল করে জানালেও কোন প্রকার ব্যবস্থা গ্রহণ করেননি থানা পুলিশ।
একাধিক সূত্র মতে, মাজারের ওরছ উপলক্ষে বিতর্কিত কমিটির বিরুদ্ধে সীমাহীন অভিযোগ থাকা সত্ত্বেও অনুমোদনের পূর্বে পুলিশ প্রশাসনের প্রতিবেদনের জন্য প্রেরন করেন জেলা প্রশাসক। জেলা পুলিশ সার্বিক আইন শৃঙ্খলার বিষয়ে প্রতিবেদনের জন্য নির্দেশ প্রদান করেন কোতোয়ালী মডেল থানাকে। কোতোয়ালী মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ শাহ কামাল আকন্দ ৭টি শর্ত সাপেক্ষে পুলিশ সুপার (ডিএসবি) বরাবর অনুমতি প্রদানের সুপারিশ করেছেন।
পুলিশ প্রশাসনের প্রতিবেদন প্রাপ্ত হয়ে ১৪টি শর্ত সাপেক্ষে জেলা প্রশাসকের পক্ষে সহকারী কমিশনার (ভারপ্রাপ্ত) শারমিন আক্তার রিমা স্বাক্ষরে অনুমতি প্রদান করেন।
সরকার যখন স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষায় কাজ করে যাচ্ছেন, সেই প্রেক্ষাপটে ময়মনসিংহ জেলা বিএনপি নেতার নেতৃত্বে ও সভাপতিত্বে জিকির দোয়া ও মিলাদ মাহফিলের আয়োজনের নামে প্রশাসনের ১৪টি শর্তের কোন তোয়াক্কা না করে শর্তভঙ্গ করে মেলা, নাগরদোলা, নারী-পুরুষ সমন্বিত বাউল গানের নামে অস্লীল গান বাজনার আয়োজনের বিরুদ্ধে কোন পদক্ষেপ না নিয়ে কোতোয়ালী মডেল থানা পুলিশের উদাসীন ভূমিকায় মিশ্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে স্থানীয় সচেতন মহলসহ রাজনৈতিক অঙ্গনে।
এব্যাপারে কোতোয়ালি মডেল থানা পুলিশের অফিসার ইনচার্জ এর মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে তিনি জানান, এক শ্রেণীর ধর্ম ব্যবসায়ী এসব করে থাকেন। ওরছ মাহফিলে মেলা বা নাগরদোলাসহ অস্লীল কিছু হলে তা বন্ধ করে দেওয়ার জন্য এসআই কামরুল হাসান’কে পাঠিয়েছিলাম।
তাৎক্ষণিক এসআই কামরুল হাসান এর মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে তিনি জানান, ওরছ মাহফিলে অফিসার ইনচার্জ মহোদয়ের নির্দেশে গিয়েছিলাম। অস্লীল গান, মেলা ও নাগরদোলা সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি প্রথমে অস্বীকার করেন, পরে মেলায় শতাধিক দোকান ও তিনটি নাগরদোলা চলছে বলে স্বীকার করে বলেন, আমি কোতোয়ালী মডেল থানার স্মার্ট অফিসার ইনচার্জ মহোদয়কে অবগত করেছি এবং অফিসার ইনচার্জ মহোদয়ের নির্দেশনা মাজার কমিটিকে অবগত করে চলে এসেছি। এক জায়গায় কি এতক্ষণ থাকা যায়!
প্রশাসনের অনুমতির প্রেক্ষিতে সার্বিক পরিস্থিতি তদন্ত করেছেন এসআই আবুল কাশেম। তাঁর মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে তিনি জানান, ১৪টি শর্তে ওরছ’র অনুমতি দিয়েছে প্রশাসন, আমি অনুষ্ঠানে গিয়ে দেখব, শর্ত সাপেক্ষ অমান্য করে কোন কিছু করতে দেওয়া হবে না। অনুমতিপত্র দেখতে চাইলে তিনি ভিন্ন ভিন্ন অযুহাত দেখিয়ে তা সাংবাদিকদের দেখাননি।
পরে আবার মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে তিনি জানান, আমি ওরছ মাহফিলে গিয়েছিলাম রাষ্ট্র বিরোধী কোন বিষয় চোঁখে পরেনি, ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করার মত কিছু নাই। অপ্রিয় হলেও সত্য মেলা ও নাগরদোলার পাশে দাঁড়িয়ে তিনি বলেন, মেলা বা নাগরদোলা চোঁখে পরেনি। এসময় তিনি বিরক্তিকর মনোভাব পোষণ করে প্রশ্ন করেন, আপনি কেমন সাংবাদিকতা করেন? এসব প্রশ্ন আমাকে করেন কেন? আপনি থানার অফিসার ইনচার্জকে প্রশ্ন করুন। কেমনে কি হয় আপনি বুঝেন না?
প্রচার রয়েছে বিভিন্ন রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গের নামে অসত্য তথ্য প্রকাশ করার দায়ে স্ত্রী-সন্তান এবং নিজে আপ্যায়নের শিকার হওয়া কথিত পুলিশের দালাল খ্যাত বদরুলের মাধ্যমে মোটা অংকের অর্থ পুলিশ প্রশাসনের দায়িত্ব জ্ঞানহীন কতিপয় কর্মকর্তাকে ম্যানেজ করার দায়িত্ব নেওয়ার।
নিয়ম ভঙ্গের বিষয়ে দেখে না দেখার উদাসীন চিত্র এবং মেলা, নাগরদোলা, অস্লীল গান বাজনার স্থলে পুলিশের দালাল খ্যাত বদরুলের পদ-চারণায় পুলিশ’কে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে।
মাজারের বাৎসরিক ওরছ মাহফিলে জিকির, দোয়া ও মিলাদ মাহফিলের নামে এমন জগন্য বেহায়াপনা কর্মকাণ্ডের চিত্র সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুকে ভাইরাল হলেও মাজারের বিতর্কিত কমিটির শর্ত ভঙ্গের বিষয়ে থানা পুলিশের ভূমিকা ও কোতোয়ালী মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ শাহ কামাল আকন্দের দায়িত্বহীন বিচক্ষণ ভূমিকার জন্য নিন্দা জ্ঞাপন করেছেন ধর্মপ্রাণ মুসুল্লিসহ সমাজের সুশীল সমাজ। এসআই আবুল কাশেম ও এসআই কামরুল হাসানের কথায় বাংলা প্রবাদটির সাথে মিল খোঁজে পাওয়া যায়। যেমন ( প্রবাদ কথায় আছে চোরকে বলে চুরি কর, সাধুকে বলে সজাগ থাক )।
ইতিপূর্বে মাজারের পবিত্রতা রক্ষা ও অবকাঠামো রক্ষণাবেক্ষণ সহ মাজারের অর্থ আত্মসাৎকারীদের হাত থেকে মাজারকে রক্ষায সরকারী ভাবে ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য এবং দীর্ঘদিনের মাজারের আয়ের অর্থ উদ্ধারের জন্য ময়মনসিংহ বিভাগীয় কমিশনার বরাবর সাংবাদিক ও মানবাধিকার কর্মীসহ স্থানীয় একাধিক ব্যক্তি ভিন্ন ভিন্ন অভিযোগ দায়ের করেন।
ইতিমধ্যে কোতোয়ালী মডেল থানা পুলিশ একটি অভিযোগ নিয়ে তদন্ত শুরু করেছেন। সুষ্ঠ তদন্ত সাপেক্ষে প্রতিবেদন দাখিলের দায়িত্ব প্রাপ্ত হয়েছেন ময়মনসিংহ কোতোয়ালী মডেল থানার পুলিশ পরিদর্শক (অপারেশন) ওয়াজেদ আলী।
মন্তব্য