সব
ফাইল ছবি
ময়মনসিংহ জেলার সদরসহ বিভিন্ন উপজেলায় অনুমোদনহীন অন্তত তিনশত ইটভাটার দৌরাত্ম্যে চরম ঝুঁকির মুখে পড়েছে কৃষকের ফসলি জমি ও পরিবেশ। আইন ও পরিবেশগত বিধি উপেক্ষা করে বছরের পর বছর ধরে এসব ইটভাটা পরিচালিত হলেও কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণে প্রশাসনের নামমাত্র অভিযান ছাড়া দৃশ্যমান তৎপরতা নেই বলে অভিযোগ উঠেছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, অধিকাংশ ইটভাটার কোনো পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র নেই, নেই জেলা প্রশাসনের অনুমোদন। কৃষিজমির টপসয়েল (উপরিভাগের উর্বর মাটি) কেটে ইট তৈরির কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে, ফলে জমির স্বাভাবিক উৎপাদন ক্ষমতা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। একসময় যেখানে বছরে দুই থেকে তিন ফসল হতো, সেখানে এখন ফসল ফলছে না বা ফলন আশঙ্কাজনকভাবে কমে গেছে।
কৃষকদের অভিযোগ, ইটভাটার মালিকরা প্রভাব খাটিয়ে জোরপূর্বক কম দামে জমির মাটি কেটে নিচ্ছেন। এতে জমি চাষের অনুপযোগী হয়ে পড়ছে। অনেক কৃষক জীবিকার একমাত্র সম্বল হারিয়ে পড়েছেন চরম আর্থিক সংকটে।
অনুমোদনহীন ইটভাটাগুলোতে জ্বালানি হিসেবে অবাধে পোড়ানো হচ্ছে কাঠ, পুরোনো টায়ার ও নিম্নমানের কয়লা। এর ফলে আশপাশের এলাকায় ভয়াবহ বায়ুদূষণ সৃষ্টি হচ্ছে। কালো ধোঁয়ায় ঢেকে যাচ্ছে আকাশ, ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে গাছপালা, বাড়ছে শ্বাসকষ্ট, হাঁপানি ও চর্মরোগসহ নানা রোগ।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ইটভাটার ধোঁয়ায় নির্গত কার্বন মনোক্সাইড ও সালফার ডাই অক্সাইড পরিবেশের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। দীর্ঘমেয়াদে এটি জলবায়ু পরিবর্তনকে ত্বরান্বিত করছে।
ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন (নিয়ন্ত্রণ) আইন অনুযায়ী, ফসলি জমিতে ইটভাটা স্থাপন সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। একইসঙ্গে পরিবেশ ছাড়পত্র ছাড়া কোনো ইটভাটা পরিচালনা করা বেআইনি। অথচ বাস্তবে এসব আইন কার্যকর হচ্ছে না।
অভিযোগ রয়েছে, কিছু অসাধু কর্মকর্তা ও প্রভাবশালী মহলের যোগসাজশেই এই অনিয়ম চলমান রয়েছে।
ময়মনসিংহ সদর উপজেলার ইটভাটা মালিক সমিতির সভাপতি (আলম ব্রিকস) এর মালিক খোরশেদ আলম ও (নিউ স্টার ব্রিকস) এর মালিক রফিকুল ইসলাম প্রশাসনের প্রতি পাল্টা অভিযোগ করে বলেন আমরা সকল নিয়ম মেনে কাগজপত্র জামা দিয়েছি কিন্তু নবায়ন করা হচ্ছে না।
বারবার অভিযোগ দেওয়ার পরও ভ্রাম্যমাণ আদালত বা নিয়মিত অভিযান না হওয়ায় ক্ষোভ বাড়ছে সাধারণ মানুষের মধ্যে। পরিবেশবাদীরা বলছেন, এখনই ব্যবস্থা না নিলে অদূর ভবিষ্যতে কৃষি ও পরিবেশ দুটিই ভয়াবহ সংকটে পড়বে।
অবিলম্বে সকল অনুমোদনহীন ইটভাটা বন্ধ করে ফসলি জমি থেকে মাটি কাটার সঙ্গে জড়িতদের আইনের আওতায় আনতে হবে। পরিবেশ রক্ষায় নিয়মিত মনিটরিং ও কঠোর অভিযান জোরদার করতে হবে।
এ বিষয়ে দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ না নিলে কৃষি নির্ভর অর্থনীতি ও পরিবেশ দুটোই চরম হুমকির মুখে পড়বে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
মন্তব্য