সব
বাণিজ্যিক প্রতিযোগিতা মূলক ফসল চাষে অধিক লাভের আগ্রহে মাটির স্বাস্থ্য সুরক্ষা বিষয়টি মাথায় নিচ্ছে না কৃষক থেকে শুরু করে রাসায়নিক বালাইনাশক খুচরা বিক্রেতা পর্যন্ত।
যার ফলে মানুষের দেহের মত মাটিরও স্বাস্থ্য আর স্বাভাবিক থাকছে না। নষ্ট হচ্ছে মাটির স্বাস্থ্য। দেখা দিচ্ছে ফসলে নানা ধরনের রোগ বালাই। জনস্বাস্থ্যের জন্য ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে। কমে নষ্ট হচ্ছে হ্রাস পাচ্ছে উর্বরতা শক্তির মতো ফসলের বল প্রয়োগের জায়গা। কারণ হিসেবে কৃষকরা মনে করছে মাত্রাতিরিক্ত বালাইনাশক রাসানিক প্রয়োগে প্রতিযোগিতা মূলক চাষাবাদ অধিক মুনাফা লাভের আশায় এমনটা হচ্ছে। আর কৃষি বিভাগ মনে করছে কৃষকের অজ্ঞতা অচেতনতার কারণে অধিক ফসল পাবার আশায় তারা মাত্রা না মেনে মাত্রাতিরিক্ত ব্যবহারের ফলে একদিকে মাটির স্বাস্থ্য সুরক্ষা ব্যাহত হচ্ছে আর খরচ বেড়ে যাচ্ছে চাষাবাদে। তবে কৃষক সার বালাইনাশক ব্যবসায়ীদের সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য কৃষি বিভাগ কাজ করছে। ফসলের মাঠে সেক্স ফেরোমন আঠালো ফাঁদ ব্যবহারও হচ্ছে। মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করেও যাচ্ছে বলেও জানালেন টাংগাইল জেলার মধুপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ রকিব আল রানা। কৃষি বিভাগ সূত্রে হানা গেছে, মধুপুর উপজেলার আয়তন ৩৭০.৮৪ বর্গ কিলোমিটার। ১১ টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভায় ১৩১ টি মৌজায় ৩৪ টি কৃষি ব্লক রয়েছে।
এর মধ্যে ক্ষুদ্র মাঝারি ছোট বড় মিলে মোট ৬০ হাজার ৮শ ৪৩ টি কৃষি পরিবার রয়েছে। অপর দিকে, এগ্রোভিম কোম্পানির মার্কেটিং অফিসার মধুপুর প্রেস্টিসাইড অফিসার্স এসোসিয়েশনের ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক মোখলেছুর রহমান মুদুল জানিয়েছে, ১৪০ টির বেশি কীটনাশক বালাইনাশক কোম্পানির প্রোডাক্ট চলে এ উপজেলায়। প্রায় ২০০ কোটির বেশি টাকার বাণিজ্য হয়ে থাকে বলে তার ধারণা। মহিষমারা কলেজের প্রতিষ্ঠাতা খ্যাতনামা কৃষক জানোয়ার বলেন, কৃষকরা জেনেই মাটির ক্ষতি করে যাচ্ছে। যে কারণে মাসমারা গামাক্সনের মত ক্ষতিকর রাসায়নিক স্প্রে করে মাটির স্বাস্থ্য ধাংস করে যাচ্ছে। যা আগামী দিনে ভয়াবহ সর্বনাশ ডেকে আনতে পারে। জৈব সারের ব্যবহার দিন দিন কমে যাচ্ছে, বাড়ছে রাসায়নিক সারের মাত্রাতিরিক্ত ব্যবহার। তিনি জৈব সারের ব্যবহার বাড়ানো মাধ্যমে মাটির স্বাস্থ্য সুরক্ষা ও প্রয়োগ বিধি মেনে চলার কথা বলেন। কৃষি বিভাগের সার কীটনাশক রাসায়নিক ব্যবহার নিয়ে এক সভায় জলছত্র গ্রামের এক কৃষক আব্দুর রহমান (৬০) জানালেন, সার কীটনাশক বালাইনাশক রাসায়নিক ব্যবহারের কথা। তারমতে, একটি আনারসের চারা রোপন থেকে ফল
পাকা পর্যন্ত প্যায় ৪-৬ বার রাসায়নিক প্রয়োগ করতে হয়। বাণিজ্যিক চাষ ও প্রতিযোগিতাকেই দায়ী মনে করেন তিনি। তিনি বলেন, রাসায়নিক বিহীন আনারসের রঙ তেমন উচ্ছ্বল হয় না। বাজারে নিয়ে আসলে বিক্রি করতে সমস্যা হয়। দাম কম আসে। স্বাদ কম বেশি পাইকার তা বুঝতে চায় না। তিনি একবার রাসায়নিক ছাড়া আনারস চাষ কর প্রায় লক্ষাধিক টাকার মতো লোকসান গুণেছে। একই গ্রামের ফারুক হোসেন জানালেন, দুই একজন কৃষক বিচ্ছিন্ন ভাবে রাসানিক কম বেশি দিয়ে চাষ করলে লাভহবে না। সবাইকে একযোগে একই পদ্ধতি অবলম্বন করতে হবে। মাত্রা মেনে সবাই চাষ করলে রঙ স্বাদ একই রকম হবে। এতে সবাই সমান লাভ ক্ষতি পাবে। আয়নাল হক জানালেন, প্রতিযোগিতার সময়ে কেউ কারো কথা মানে না। কে কার চেয়ে বেশি বিক্রি করতে পারবে, বেশি লাভ হবে সে চিন্তায় থাকে। মাটি ক্ষতির কথা কেউ মনে করে না। শুধু এরাই নয় এমনি ভাবে মাত্রারিক্ত রাসায়নিক ব্যবহারের ফলে মাটির জীব অনুজীব উপকারি পোকা মাকড় বিনষ্ট হচ্ছে। মাটির উর্বরতা শক্তি হ্রাস পাচ্ছে। যত্রতত্র নিষিদ্ধ রাসায়নিক বিক্রি বন্ধের দাবি জানিয়ে কৃষকরা বলেন, যদি বাজারে না আসে না পাওয়া যায় তাহলে তারা ব্যবহার করতে পারবে না। এর ফলে মাটির জৈব পদার্থের পরিমান আনুপাতিক হারে দিন দিন হ্রাস পাচ্ছে। কৃষকদের মাঠ পর্যায়ে সচেনতা বৃদ্ধি করে মাত্রা বিধি ও অতিরিক্ত রাসায়নিক ব্যবহারে নিরুৎসাহিত করার দাবি জানান। এতে রক্ষা পাবে কৃষি জমির স্বাস্থ্য। রক্ষা পাবে মাটির সুস্বাস্থ্য এমনটাই মনে করেছেন সংশ্লিষ্টরা। সাম্প্রতিক গবেষণাযর রিপোর্টে দেখা গেছে, প্রায় ৮০ শতাংশ কৃষি জমির জৈব উপাদান কমে যাচ্ছে, যার ফলে ফসল উৎপাদনে মাত্রাতিরিক্ত রাসায়নিক সার ব্যবহার করতে হচ্ছে। এ গবেষণায় বলা হয়েছে, ফসলি জমিতে যেখানে ৫ শতাংশ জৈব উপাদান থাকা দরকার সেখানে দেশের বেশিরভাগ কৃষি জমিতে জৈব উপাদান দিন দিন নিচে নেমে যাচ্ছে। বাংলাদেশের মুক্তিকা সম্পদ উন্নয়ন গবেষণা ইন্সটিটিউটের এক তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশের মোট আয়তনের ৫৬ শতাংশ জমিতে ফসলের আবাদ হয়। এর মধ্যে প্রায় ৮০ ভাগ জমিতেই জৈব উপাদানের ঘাটতি রয়েছে বলে তথ্যে জানা গেছে। মধুপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ রকিব আল রানা বলেন, কৃষকদের সচেতনতার জন্য কৃষি বিভাগ কাজ করছে। মাটির সুস্বাস্থ্য কৃষির জন্য সবার আগে দরকার। মাটির স্বাস্থ্য ঠিক থাকলে ফসল ভালো হবে। মাত্রাতিরিক্ত কীটনাশক রাসায়নিক সার মাটির জন্যই নয় জীব অনুজীব ও পরিবেশের জন্যও মারাত্মক ক্ষতিকর। এসব বন্ধে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হচ্ছে। এ জন্য কৃষক থেকে শুরু করে সকলের এগিয়ে আসার আহবান জানা তিনি।
মন্তব্য