সব
ঘাটাইল দিগড় ইউনিয়ন যুবলীগের দাপুটে নেতা জামালের তিনটি মাল্টি এগ্রো ও অটো ডায়ার মিলের ভয়াবহ দূষণের শিকার হচ্ছেন ছয় গ্রামের কয়েক হাজার অধিবাসী। কারখানাগুলো থেকে অনর্গল নির্গত বিষাক্ত ধোঁয়া, টন টন ছাই-বর্জের ধকলে জিম্মি মানুষজন টু শব্দটি করতেও সাহস পাচ্ছেন না।
অর্থবিত্ত, ক্ষমতার দাপটে মো. জামাল নিজের মালিকানায় ও অংশীদারিত্বে আইখালী ব্রিজ সংলগ্ন ফসলি জমি ও জনবসতির মাঝেই মেসার্স যমুনা এগ্রো ফুড, মেসার্স সততা মাল্টি এগ্রো ফুড ও মেসার্স মক্কা এগ্রো ফুড নামে তিনটি বিশালকায় অটো ডায়ার মিল স্থাপন করেন।
পরিবেশ অধিদপ্তরের কোনো ছাড়পত্র ছাড়াই সম্পূর্ণ অবৈধভাবে সচল রাখা কারখানাগুলো পরিবেশ বিপন্নতার ভয়াল অবস্থার সৃষ্টি করেছে। রাত দিন নিকষ কালো ধোঁয়া আর ছাইয়ের ওড়াওড়িতে বেহাল দশায় পড়েছেন বাসিন্দারা। পাশাপাশি তরল ময়লা, বিষাক্ত বর্জ সরাসরি ফেলা হচ্ছে আইখালীর খাল, আশপাশের জলাশয় ও ফসলি জমিতে। ফলে বিঘার পর বিঘা জমিতে ফসল বিনষ্ট হচ্ছে, পরিবেশেও বিরুপ প্রভাব দেখছেন বাসিন্দারা।
কারখানা সংলগ্ন চারপাশের কদমতলী, গারট, বাদে পার্শী, মোগল পাড়া, ব্রাহ্মণ শাসন ও নজুনবাগ গ্রামের বাসিন্দারা জানান, কারখানার ছাইভস্মের সঙ্গে এখানকার মানুষজনের জীবন বাধা পড়ে আছে। রাস্তায় পথ চলার উপায় নেই, বাড়িঘরেও কালো ছাইয়ের ওড়াওড়ি চলে। এসব কারখানায় এলাকার কারো কর্মসংস্থান হয়নি, অথচ সব ধরনের ধকল পোহাতে হচ্ছে আমাদেরই। সবচেয়ে বড় সমস্যা কারখানা চুল্লির ধোঁয়ার সঙ্গে তুষের ছাই মিলেমিশে চারদিকে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে পড়ছে।
ওই ছাই মানুষের চোখ-মুখে পড়লে রীতিমত জ্বালাপোড়া করে। স্থানীয়দের অভিযোগ, অটো রাইস মিলগুলোর বর্জ্য, ছাই, ধোয়া চারপাশের পরিবেশ নষ্ট করছে। এতে চোখের নানা সমস্যা, অ্যালার্জী, মারাত্মক শ্বাসকষ্টসহ বিভিন্ন রোগে ভুগছেন স্থানীয়রা।
মিলের উড়ে যাওয়া ছাই ও বর্জের কারণে কোমলমতি শিশুসহ সাধারণ মানুষ চোখের সমস্যাতেও ভুগছেন। এদিকে সরেজমিন অনুসন্ধানকালে শিশু স্বাস্থ্য ঝুঁকি সংক্রান্ত সবচেয়ে ভয়ংকর তথ্য পাওয়া গেছে। জামালের যমুনা, সততা ও মক্কা কারখানা ঘেষা গ্রামগুলোতে শতকরা ৭০ ভাগ শিশু বক্ষব্যাধিসহ শ্বাসকষ্টজনিত রোগ বালাইয়ের কবলে পড়েছে। স্থানীয় চিকিৎকরা জানিয়েছেন, কারখানা নির্গত ছাই-তুষ, ধোয়া মানুষের চোখে মারাত্মক সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। অ্যাজমা রোগীদের জন্য এটি অনেক ভয়ঙ্কর। এছাড়া বিভিন্ন ধরনের চর্মরোগ সৃষ্টি করতে পারে।
পরিবেশ আইনের তোয়াক্কা না করে আবাসিক এলাকা ও তিন ফসলি জমিতেই জামালের অটো রাইস মিলগুলো গড়ে তোলা হয়েছে। এসব মিলের বর্জ্য, ছাই, ধোয়া ও শব্দ দূষণে চারপাশের পরিবেশ নষ্ট করছে। যার ফলে মারাত্মক শ্বাসকষ্টসহ বিভিন্ন রোগে ভুগছেন স্থানীয়রা। শিশু ও শিক্ষার্থীরা মারাত্মক ঝুঁকিতে রয়েছে। এসব কারখানা অবিরত দূষণ করে চলছে মাটি, পানি, বায়ু, নদীসহ ভূগর্ভস্থ পানিও। কারখানার ধোঁয়া ও ছাইয়ে গাছপালার পাতা কালো হয়ে গেছে।
কারখানার বর্জ্য পরিশোধন ছাড়াই আইখালী খালে ও জলাশয়ে ফেলা হচ্ছে। এলাকাবাসী বলেন, আগে আমারা খালের পানিতে গোসল করতাম, গ্রীষ্মকালের গরমে ছোট ছোট বাচ্চারা স্কুল থেকে এসে খালের পানিতে সাঁতার কাটতো, মনের আনন্দে গোসল করাতো। গরু-বাছুর গোসলসহ নানা নিত্য প্রয়োজনীয় কাজে পানি ব্যবহার করতাম। পানিটা এতো পরিষ্কার থাকতো যে অনেকেই রান্নাবান্নার কাজসহ খাওয়ার জন্য ব্যবহার করত। এখন আর সেসবের সুযোগ নেই। খাল ও জলাশয়ের বেশিরভাগই ছাই বর্জে ভরাট করে ফেলা হয়েছে। পানির রং ধারণ করেছে কুচকুচে কালো।
মন্তব্য