সব
শেরপুর জেলা শহরের শীববাড়ি মহল্লার বাসিন্দা ও জামালপুর জেলা বীজ প্রত্যয়ন কর্মকর্তা কৃষিবিদ মোহাম্মদ আব্দুল হামিদ-এর উপর সন্ত্রাসী হামলা করে তাকে গুরুতর আহত করার পাশাপাশি বাড়িঘর ভাঙ্গচুর করে স্বর্ণালংকার, নগদ টাকা, গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সম্বলিত একটি ল্যাপটপ ও জরুরি কাগজপত্র লুটপাট করে নিয়েগেছে চিহৃত মাদকসেবী সন্ত্রাসী দল।রাত আনুমানিক ৮টার দিকে এই ঘটনাটি ঘটে। এবিষয়ে ৯ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা আরো ২০/২৫ জনকে আসামী করে শেরপুর সদর থানায় একটি মামলা করা হয়েছে। কৃষিবিদ মোহাম্মদ আব্দুল হামিদ জেলার নকলা উপজেলার বানেশ্বরদী ইউনিয়নের ভূরদী গ্রামের মৃত জমসেদ আলীর বড় ছেলে। তিনি দীর্ঘদিন ধরে শেরপুর শহরের শীববাড়ি মহল্লায় বসবাস করছেন, তবে বর্তমানে তিনি জামালপুর জেলা বীজ প্রত্যয়ন কর্মকর্তা হিসেবে কর্মরত আছেন।থানায় লিখিত অভিযোগ ও পরিবার সূত্রে জানা গেছে, কৃষিবিদ মোহাম্মদ আব্দুল হামিদ শেরপুর শহরের শীববাড়ি মহল্লায় বাসার ঘরের কাজ শুরু করেছেন।কাজের শুরু থেকেই চিহৃত মাদকসেবী সন্ত্রাসী প্রকৃতির কিছু যুবক তার কাছে চাঁদা চেয়ে আসছিলো। অকারনে চাঁদা না দেওয়ায় প্রায়ই আগুন পোহানোর অজুহাতে আব্দুল হামিদের বাসার নির্মান সামগ্রী কাঠ ও বাঁশসহ অন্যান্য জরুরি জিনিসপত্র নিয়ে প্রকাশ্যে পুড়িয়ে ধ্বংস করে আসছে। ঘটনার দিন অফিস বন্ধ থাকায় বাসার কাজ চলছিলো।এদিন পূর্ব পরিকল্পনা মোতাবেক সন্ধ্যা থেকেই সন্ত্রাসী মাদকসেবীর দল হামিদের বাসার আশেপাশে একত্র হতে থাকে। কৃষিবিদ মোহাম্মদ আব্দুল হামিদকে রাত পৌণে ৮টার দিকে বাসার দিকে আসতে দেখেই তারা নির্মান সামগ্রী বেশ কিছু বাঁশ ও কাঠ নিয়ে আগুন জ্বালিয়ে দেয়। এসময় হামিদ অতিভদ্রতার সহিত তাদেরকে মৌখিক ভাবে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করা মাত্রই তার উপর দা,লাঠি ও দেশীয় অস্ত্রনিয়ে এলাপাথারি আঘাত করতে থাকে। পরে সে আত্মরক্ষার্থে কোন রকমভাবে বাসার ভিতরে প্রবেশ করে গেইট তালাবদ্ধ করে দেন। এতেও ক্ষান্ত থাকেনি ওই সন্ত্রাসীদল; তারা বাসার প্রাচীর টপকে গিয়ে বাসার ভিতের হামিদকে বেদম মারপিট শুরু করে। এতে কৃষিবিদ মোহাম্মদ আব্দুল হামিদ চোখ ও মাথায় গুরুতর আঘাত প্রাপ্ত হয়ে মাঠিতে লুটিয়ে পড়ে। তার ডাক চিৎকার শুনে তার ৬ বছরের শিশু সন্তান জারিপ নাবুঝে তার বাবার দিকে এগিয়ে আসলে তাকেও সন্ত্রাসীরা এলোপাথারি মারপিট করে। এমতাবস্থায় হামিদের স্ত্রী ও মেয়ে ঘর থেকে বেড়িয়ে আসলে তাদেরকে মেরে ফেলার উদ্দেশ্যে সন্ত্রাসীরা দা উচিয়ে গেলে তারা দৌঁড়িয়ে হাফবিল্ডিং ঘরে প্রবেশ করে দরজা লাগিয়ে কোনক্রমে আত্মরক্ষা করেন।পরে সন্ত্রাসীরা সুকৌশলে হামিদের বসত ঘরের দরজা ভেঙ্গে প্রবেশ করে ওয়াড্রপের তালা ভেঙ্গে বাসার কাজের জন্য রাখা নগদ ৫ লাখ টাকা, স্ত্রী ও মেয়ের সব মিলিয়ে অন্তত ১০ ভরি ওজনের স্বর্ণালংকার, গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সম্বলিত একটি ল্যাপটপ ও জরুরি কাগজপত্র লুটপাট করে নিয়ে যায় এবং বেশ কিছু আসবাবপত্র এলোপাথাড়ি কুপিয়ে ভেঙ্গে ফেলে। পরে স্থানীয় ও হামিদের আত্মীয়স্বজন গুরুতর আহত অবস্থায় কৃষিবিদ আব্দুল হামীদকে রাতেই শেরপুর জেলা সদর হাসপাতালে ভর্তি করেন। এবিষয়ে চিহ্নিত মাদকসেবী সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে শেরপুর সদর থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়।
মামলায় উল্লেখিত চিহ্নিত সন্ত্রাসী ৯ জন হলো- শীববাড়ি মহল্লার কার্তিকের ছেলে তিলক (২২), শিশির (২৪) পিতা অজ্ঞাত, সিয়াম (২২) পিতা অজ্ঞাত, তানভির (২৪) পিতা অজ্ঞাত, অর্পণ (২৫) পিতা অজ্ঞাত, শান্ত (২২) পিতা অজ্ঞাত, বালা ঠাকুর (২৫) পিতা মন ঠাকুর ও গৃর্দ্দানারায়ণপুর মহল্লার মৃত হাছুইন্নার ছেলে ছামিউল আলিম (৩০)। এছাড়া এ ঘটনার সাথে জড়িত অজ্ঞাতনামা আরো ২০ থেকে ২৫ জনকে মামলায় আসামী করা হয়েছে।
নকলা উপজেলার বানেশ্বরদী ইউনিয়নের ভূরদী খন্দকারপাড়া কৃষিপণ্য উৎপাদক কল্যাণ সংস্থার সকল সদস্য কৃষকগন কৃষি ও কৃষক বান্ধব কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মোহাম্মদ আব্দুল হামিদ ও তার পরিবারের সদস্যদের উপর নির্মম হামলা ও সন্ত্রাসী কায়দায় তালা ভেঙ্গে স্বর্ণালংকার, নগদ টাকা, গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সম্বলিত ল্যাপটপ ও জরুরি কাগজপত্র লুটপাটের সাথে জড়িত গ্রেফতার করে আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শস্তির দাবি জানান।এছাড়া দেশের কৃষি কর্মকর্তাদের বিভিন্ন সংগঠন, উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তাদের সংগঠন ও কৃষক সংগঠনের পক্ষ থেকে তীব্রনিন্দা জ্ঞাপনের পাশাপাশি সুষ্ঠ বিচার দাবী জানিয়েছেন। সঠিক সময়ে সুষ্ঠ বিচার করা না হলে কৃষিবিদ ও বিভিন্ন কৃষক সংগঠনের উদ্যোগে প্রয়োজনে দেশবাপি কর্মসূচির ডাক দেওয়া হতে পারে বলে অনেকে জানান।নকলা উপজেলার ভূরদী ছাল্লাকুড়া উচ্চ বিদ্যালয়ের কৃষি বিষয়ের শিক্ষক মজিবর রহমান বলেন ‘আমার দেখা কৃষি কর্মকর্তাদের মধ্যে জামালপুর জেলা বীজ প্রত্যয়ন কর্মকর্তা কৃষিবিদ মোহাম্মদ আব্দুল হামিদ সবচেয়ে শান্ত প্রকৃতির, ভেজাল মুক্ত ও মেধাবী একজন কৃষি কর্মকর্তা। মেধার জন্য শিশুকাল থেকেই সে সবার প্রিয়পাত্র ছিলে।এব্যাপারে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা শেরপুর সদর থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মেহেদী হাসান মামলার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, এঘটনার সাথে জড়িতদের গ্রেফতারের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। দ্রুত সময়ের মধ্যেই অপরাধীদের গ্রেফতার করা সম্ভব বলে পুলিশ বিভাগসহ অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থার কর্মকর্তাগন বলেছেন।
মন্তব্য