পিরোজপুরের ইন্দুরকানী উপজেলার পচ্চিম চরনী পত্তাশী রহিম উদ্দিন স্মৃতি দাখিল মাদ্রাসার সহ-সুপার মোঃ আবুল খায়ের কাজী’র জাল জালিয়াতি, অর্থ আত্মসাৎ এবং বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগের তদন্তের জেরে ঝুলে আছে ম্যানেজিং কমিটির অনুমোদন। গত ৪ জুন তফসিল ঘোষণার পর গত ২১ জুন ওই মাদ্রাসার ম্যানেজিং কমিটির সদস্য নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এরপর ২৫ জুন সদস্যদের ভোটে সভাপতি নির্বাচিত করা হয়। পরবর্তীতে ২৬ জুন নব গঠিত ম্যানেজিং কমিটি অনুমোদনের জন্য মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডে ই-ফাইলিং এর মাধ্যমে আবেদন করা হয়। তবে কমিটি অনুমোদনের দুই দিন আগেই তা অনুমোদন না দেওয়ার জন্য এক অভিভাবক সদস্যকে দিয়ে মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডে আবেদন করেন সহ-সুপার আবুল খায়ের। এর আগে ম্যানেজিং কমিটির সদস্য নির্বাচন বন্ধের আবেদন জানিয়ে নির্বাচনের দিনই আদালতে আবেদন করা হয়। তবে সবকিছু বিধি মোতাবেক হওয়ায় আদালত বাদীর আবেদন খারিজ করে দেয়।
ওই মাদ্রাসার সুপার মোঃ আমিনুল ইসলাম জানান, মাদ্রাসার ম্যানেজিংকমিটির সাবেক সভাপতি এম এ কালাম এবং কালামের নিকট আত্মীয় ওই মাদ্রাসার সহকারী শিক্ষক ইউপি সদস্য মোঃ নাজমুল হাসান এর সাথে সহ-সুপার আবুল খায়ের এর গভীর সখ্যতা ছিল। এর পর মাদ্রাসায় বিভিন্ন অনিয়মের বিষয়নিয়ে সহ-সুপার আবুল খায়ের এবং নাজমুলের সাথে আমিনুল ইসলাম ও অন্যান্য শিক্ষকদের দূরত্ব সৃষ্টি হয়। এরই জেরে কমিটির মেয়াদ শেষ হওয়ার মাত্র কিছুদিন পূর্বে এম এ কালাম ঢাকায় অবস্থানকালে তার স্বাক্ষর জাল করে সুপার আমিনুল ইসলামকে সাময়িক বরখাস্ত করে আবুল খায়ের এবং নাজমুল। এর পর স্বাক্ষর জালিয়াতির বিষয়টি তিনি এম এ কালামকে অবহিত করলে, তাকে বিভিন্ন ভাবে ভয়ভীতি প্রদর্শন করেন তিনি। পরবর্তীতে ক্ষতি হতে পারে এই ভেবে আমিনুল ইসলাম এ নিয়ে আর কোন কথা বলেননি। এর পর আবুল খায়ের ভারপ্রাপ্ত সুপারের দায়িত্ব পাওয়ার পর পুন রায় এম এ কালামের স্বাক্ষর ও রেজুলেশন জাল করে অগ্রনী ব্যাংকের পাড়েরহাট শাখা থেকে মাদ্রাসার টিউশন ফি’র ৪৭ হাজার টাকা উত্তোলন করে আত্মসাৎ করে। এ ছাড়া মাদ্রাসার উন্নয়নের লক্ষে একটি প্রকল্প কমিটি গঠন করা হয় যার আহবায়ক ছিল আবুল খায়ের। এই প্রকল্পের প্রায় আড়াই লক্ষ টাকা সঠিক ভাবে খরচ না করে তা আত্মসাৎ করেছে আবুল খায়ের। এমনকি সে চাকুরী গ্রহনের সময় যে কাগজ পত্র দিয়েছিল তারও বেশ কিছু জাল বলে জানান সুপার।
এসব অনিয়মের সত্যতা যাচাইয়ের জন্য একজন প্রথম শ্রেণির কর্মকর্তার নেতৃত্বে আবুল খায়ের এর অনিয়মের বিরুদ্ধে একটি তদন্ত চলমান রয়েছে। তার ধারণা বর্তমান ম্যানেজিং কমিটি অনুমোদন হলে, সে ক্ষতিগ্রস্থ হতে পারে। আর সেই আশংকায় আবুল খায়ের ওই মাদ্রাসার একজন তালিকা ভূক্ত ভোটার মন্নান মৃধাকে ভোটার করা হয়নি এ মর্মে মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডে একটি অভিযোগ দিয়েছে। মন্নান সহাকরী শিক্ষক ও ইউপি সদস্য নাজমুলের ঘনিষ্ট জন হিসেবে পরিচিত এবং সে মন্নানকে ইউনিয়ন পরিষদ থেকে বিভিন্ন ধরণের সুবিধা পাইয়ে দেয়। এ ছাড়া আবুল খায়ের এর বিরুদ্ধে কোন ধরণের আইনগত ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে না এ মর্মে সে একাধিক বার একটি লিখিত চেয়েছিল। বিধি বহির্ভূত ভাবে সেই লিখিত না দেওয়ায় আবুল খায়ের সুপার আমিনুল ইসলাম এর উপর ক্ষিপ্ত হয়ে ম্যানেজিংকমিটি বাতিলের পায়তারা করছে বলে দাবি আমিনুল ইসলামের।
আমিনুল ইসলাম আরও জানান, ২০২১ সাল থেকে দুইবার ওই মাদ্রাসার ম্যানেজিংকমিটি গঠনের উদ্যোগ নেওয়া হয়। তবে সহ-সুপার আবুল খায়ের এবং সহ কারী শিক্ষক নাজমুল হাসান এর বিরোধী তার কারনে তা সম্ভব হয়নি। পর বর্তীতে বিগত দুই বছরধরে এডহক কমিটির মাধ্যমে ওই মাদ্রাসা পরিচালিত হয়ে আসছে। সুপার আমিনুল ইসলাম জানান, ম্যানেজিং কমিটি গঠনের সকল বিধিমালা মেনেই নির্বাচন সম্পন্ন করা হয়েছে। আর নির্বাচনের বিষয়টি সকল অভিভাবকেরাই অবগত। এ ছাড়া তফসিল ঘোষণার পরই তা নোটিশ বোর্ডে টাঙানো হয়েছে।
তিনি আরও দাবী করেন, স্থানীয় রাজনৈতিক দ্বন্দ্বের জেরে স্থানীয় দুইজন জনপ্রতিনিধি এবং ম্যানেজিংকমিটির সাবেক এক সভাপতির পরোক্ষ সহযোগীতায় আবুল খায়ের এবং নাজমুল হাসান মাদ্রাসার ম্যানেজিং কমিটি গঠনে বাধা প্রদান করছে। তবে বর্তমান কমিটি অনুমোদন হলে নিজে ক্ষতিগ্রস্থ হবে বলে দাবি করেছে সহ-সুপার আবুল খায়ের। তিনিও জানান, একাধিক বার সুপারের সাথে সহ কারী শিক্ষকদের নিয়ে বসা হলেও, সুপার তাকে কোন লিখিত দেয়নি। আর তার সমস্যার সমাধান না হলে, সে কমিটি গঠন করতে দিবেনা বলে জানায়। প্রয়োজনে সে সব ধরণের উদ্যোগ নিবে।
অন্যদিকে সহকারী শিক্ষক নাজমুল হাসানের দাবি শিক্ষকদের না জানিয়ে সুপার ম্যানেজিং কমিটি গঠন করেছে। আবুল খায়ের এবং নাজমুল হাসান বাদে অন্য সকল শিক্ষক ম্যানেজিংকমিটির সদস্য নির্বাচনের বিষয়টি অবগতি ছলেন বলে স্বীকার করেছে। এছাড়অর্ধশতাধিক অভিভাবক সদস্যরা লিখিত ভাবে বিষয়টি স্বীকার করেছেন।
মন্তব্য