সব
শেরপুরের সীমান্ত অঞ্চলে পাহাড় থেকে নেমে আসা বন্য হাতির পালকে প্রায় প্রতিনিয়ত পটকা ফাটিয়ে,ঢিল ছুড়ে ও হই-হুল্লোড় করে উত্ত্যক্ত করছে একদল কনটেন্ট ক্রিয়েটর ও উৎসুক মানুষ। বন বিভাগের পক্ষ থেকে জনসচেতনতায় প্রচার চালালেও হাতিকে উত্ত্যক্ত করা বন্ধ হচ্ছে না।
সম্প্রতি শেরপুরের গারো পাহাড়ের সীমান্ত এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে,এক দল কনটেন্ট ক্রিয়েটর হাতির পালকে উত্ত্যক্ত করে সেগুলো ভিডিও করছেন। এই ভিডিও অনলাইনে‘ভাইরাল’করার নেশায় হাতিকে ক্ষিপ্ত করে তুলছেন। তবে এসব ঘটনায় বাধা দিতে গেলে বনকর্মীদের ওপর চড়াও হচ্ছেন কনটেন্ট ক্রিয়েটররা। পরিবেশবাদীরা বলছেন,অতি উৎসাহী স্থানীয় কিছু মানুষ ও কনটেন্ট ক্রিয়েটর হাতিকে ক্ষেপিয়ে তুলছে। এতে হাতি-মানুষের দ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে চলে আসছে। জীবন ও ফসলের জন্য ঝুঁকির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। কখনো হাতি মারা যাচ্ছে,কখনো মানুষ মারা যাচ্ছে,ঢিল ছুড়ে,চিৎকার করে ক্ষিপ্ত করা হলে হাতি লোকালয়ে আক্রমণ করতে ছুটে যায়। এতে ক্ষেতের ফসলের ক্ষতি বাড়ছে, পাশাপাশি বাড়ছে মানুষের প্রাণহানির ঝুঁকি।
গত সোমবার জেলার শ্রীবরদী উপজেলার বালিজুড়ী রেঞ্জের মালাকুচা বিটের বনে অবস্থান নেয় ৪০-৫০ টি হাতি। এমন খবর পেয়ে সেখানে ছুটে যান ঝিনাইগাতী উপজেলার ফাকরাবাদ এলাকার ফারুক হোসেন নামে এক যুবক। বেলা সাড়ে ৩ টার দিকে উৎসুক মানুষের সঙ্গে বন্য হাতির ভিডিও করতে সোনাঝুড়ি এলাকায় বনের ভেতরে ঢুকে পড়েন ফারুক। এ সময় তিনি সামনে গিয়ে ভিডিও করতে গেলে হঠাৎ হাতির সামনে পড়েন। তখন একটি হাতি পা দিয়ে তাঁর মাথা পিষ্ট করে মেরে ফেলেন। স্থানীয়দের সহযোগিতায় বন বিভাগের লোকজন তাঁকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসক।
বিষয়টি নিশ্চিত করে বালিজুরী রেঞ্জের বন কর্মকর্তা সুমন মিয়া বলেন,পাহাড়ে হাতি দেখতে গিয়ে ভিডিও করার সময় হাতির পায়ে পিষ্ট হয়ে মারা গেছেন ফারুক নামে এক যুবক। ফারুক হোসেনের ফেসবুক আইডিতে গিয়ে দেখা যায়,সেখানে ঘটনার দিন সকালেও হাতির একটি ভিডিও আপলোড করা হয়েছে। তিনি প্রতিনিয়তই জেলার বিভিন্ন জায়গার বন্য হাতির ভিডিও ধারণ করে সেগুলো তাঁর ফেসবুক আইডিতে আপলোড করতেন। এটি করতে গিয়ে তিনি অনেক সময়ই ঝুঁকিপূর্ণভাবে হাতির কাছাকাছি চলে যেতেন। ভিডিওগুলোতে বেশ কয়েকবারই হাতির ধাওয়া খেয়ে তাঁকে দৌড়ে পালাতে দেখা গেছে।
পরিবেশবাদী সংগঠন শাইনের নির্বাহী পরিচালক ও শেরপুর বার্ড ক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা, সাংবাদিক মুগনিউর রহমান মনির ভাষ্য,হাতিকে হাতির মতো চলতে দিলে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটবে না। আজকাল দেখা যায় অনেকেই ভিডিও বানাতে গিয়ে হাতিকে দৌড়ানি দিচ্ছে। এতে বিরক্ত হয়ে লোকজনের ওপর আক্রমণ করছে হাতির পাল।
বালিজুড়ি রেঞ্জের রেঞ্জ কর্মকর্তা সুমন মিয়া জানান, সম্প্রতি অতিউৎসাহী কিছু কনটেন্ট ক্রিয়েটর বনে উৎপাত শুরু করেছে। তারা হাতিকে উত্ত্যক্ত বিরক্ত করছে। এসব বন্ধ করতে মাইকিং করেছেন তারা (বন বিভাগ)। রাংটিয়া রেঞ্জ কর্মকর্তা মো,করিম বলেন কেউ যদি বন্যপ্রাণীকে বিরক্ত করে,তাহলে তাদের বিরুদ্ধে বন ও বন্যপ্রাণী আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তিনি বলেন,হাতির আক্রমণে কোনো ব্যক্তি মারা গেলে বা কৃষকের ফসল নষ্ট হলে সেক্ষেত্রে বন বিভাগ ক্ষতিপূরণ দিয়ে থাকে। বন বিভাগের লোকজনের কথা মতো চলতে থাকলে তাহলে হাতি মানুষের দ্বন্দ কমে আসবে অনেকআংশে।
মন্তব্য