সব
ভবন নির্মাণের ক্ষেত্রে বেশ কিছু শর্ত শিথিল করে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) প্রণীত ডিটেল এরিয়া প্ল্যানের (ড্যাপ) সংশোধনী চূড়ান্ত করা হয়েছে। সংশোধিত ড্যাপে সরকারি-বেসরকারি আবাসন, ব্লকভিত্তিক আবাসন, একত্রীভূত প্লটের মালিকদের কিছুটা ফ্লোর এরিয়া রেশিও (ফার) বাড়ানো হয়েছে। এতে আগের চেয়ে ভবনের প্রশস্ততা ও উচ্চতা বাড়ানোর সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। ফলে ভবন নির্মাণে উচ্চতা কেন্দ্রিক বাধা কাটতে যাচ্ছে।
সবকিছু ঠিক থাকলে যেকোনো সময় প্রজ্ঞাপন জারি হতে পারে বলে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) সূত্রে জানা গেছে।
এলাকাভিত্তিক জনঘনত্ব বিন্যাস, নগরজীবন রেখা, ট্রানজিটভিত্তিক উন্নয়ন, নাগরিক সুযোগ-সুবিধার মানদণ্ড প্রণয়ন, ব্লকভিত্তিক উন্নয়ন ও উন্নয়ন স্বত্ব বিনিময়—সবমিলিয়ে রাজধানী ঢাকার সমস্যাগুলো কমিয়ে পরিকল্পিত শহর গড়ার লক্ষ্যে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনা (ড্যাপ) গেজেট আকারে প্রকাশিত হয়েছিল ২০২২ সালের ২৪ আগস্ট।
ড্যাপে জনঘনত্ব ও অন্যান্য নাগরিক সুযোগ-সুবিধা বিবেচনায় নিয়ে ভবনের উচ্চতা বেঁধে দেওয়া হয়। এজন্য বিভিন্ন মহল, বিশেষ করে স্থপতি ও আবাসন ব্যবসায়ীরা বেঁকে বসেন। শুরু হয় ড্যাপের নানা সংশোধন। আগে প্রশস্ত রাস্তা না থাকলেও আট থেকে ১০তলা পর্যন্ত ভবন করা যেত। কিন্তু গেজেট আকারে ড্যাপ প্রকাশ হওয়ার পর সেই সুযোগ বন্ধ করে দেওয়া হয়। অপ্রশস্ত রাস্তার ক্ষেত্রে চার থেকে পাঁচতলা ভবন নির্মাণের বিধান রাখা হয়। ফলে জমির মালিক, হাউজিং প্রতিষ্ঠান, ডেভেলপারদের মধ্যে চরম অসন্তোষ দেখা দেয়। তারা বাণিজ্যিকভাবে বাড়ি ও ভবন নির্মাণ তুলনামূলক কমিয়ে দেন। বেড়ে যায় রাজধানীর ফ্ল্যাটগুলোর দাম। বাড়তে থাকে বাড়ি ভাড়াও। এ অবস্থায় আবাসন ব্যবসায়ী, জমির মালিকসহ সংশ্লিষ্টরা বারবার ড্যাপ সংশোধন নিয়ে চাপ দিতে থাকেন। যে কারণে রাজউক ড্যাপ সংশোধনী আনতে যাচ্ছে।
ড্যাপ সংশোধনের বিষয়ে মতামত দিলেন সংশ্লিষ্টরা সংশোধীন আগে ড্যাপে ১২ থেকে ১৬ ফুট পর্যন্ত রাস্তার পাশে ফ্লোর এরিয়া রেশিও (ফার) ধরা হয়েছিল ১.৭৫ অর্থাৎ এমন প্রশস্ত রাস্তার পাশে পাঁচ কাঠার প্লটে পার্কিংসহ পাঁচ তলা ভবন নির্মাণ করা যাবে। এমন হিসাব বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, নতুন ড্যাপে ৬-৮ ফুট প্রশস্ত রাস্তার পাশে ফ্ল্যাটের ফার ধরা হয়েছে ১.২৫। ৮-১২ ফুট প্রশস্তের রাস্তার ফার ১.৫, ১৬-২০ ফুট প্রশস্ত রাস্তার ফার ২, ২০ ফুট রাস্তার ফার ২.৫, ৩০ ফুট রাস্তার ফার ৩, ৪০-৬০ ফুট রাস্তার ফার ৩.৫ থেকে ৩.৭৫ ধরা হয়েছে। ফলে পাঁচ কাঠার একটি জমিতে আগে আট ও দশ তলার নকশা পাওয়া যেত, এখন পাওয়া যাবে পাঁচ তলার। ভবনের ব্যবহারযোগ্য স্পেসের পরিমাণও সেই অনুপাতে হবে। আগে যেখানে প্রশস্ত রাস্তা না থাকলেও ৮/১০ তলা ভবন করা যেত, এখন সেখানে অনুমোদন পাওয়া যাবে ৪/৫ তলার। এ কারণে স্বল্প প্রস্থের রাস্তার পাশের জমির মালিকরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। দাম বেড়ে যাচ্ছে ফ্ল্যাটের। সেই সঙ্গে আবাসন বা ডেভেলপার কোম্পানিগুলো ব্যাপকভাবে ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন। এরপর থেকেই বেঁকে বসেন আবাসন ব্যবসায়ীরা। শুরু হয় ড্যাপ সংশোধনের দাবি। এর প্রেক্ষিতেই ভবন নির্মাণের ক্ষেত্রে বেশ কিছু শর্ত শিথিল করে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) প্রণীত ডিটেল এরিয়া প্ল্যানের (ড্যাপ) সংশোধনী চূড়ান্ত করা হয়েছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে রাজউকের একাধিক কর্মকর্তা বলেন, সংশোধিত ড্যাপে সরকারি-বেসরকারি আবাসন, ব্লকভিত্তিক আবাসন, একত্রীভূত প্লটের মালিকদের কিছুটা ফ্লোর এরিয়া রেশিও (ফার) বাড়ানো হয়েছে। সবকিছু ঠিক থাকলে যেকোনো সময় প্রজ্ঞাপন জারি হতে পারে।
ড্যাপ কী : ঢাকা শহরকে নতুন করে পরিকল্পিত নগরীতে পরিণত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল ২০১০ সালে। সে জন্য প্রণয়ন করা হয় ডিটেইল্ড এরিয়া প্ল্যান বা বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনা (ড্যাপ)। ১৯৫৩ সালের ‘টাউন ইমপ্রুভমেন্ট অ্যাক্ট’-এর আওতায় ২০১০ সালে ড্যাপ প্রণয়ন করা হয়েছিল। প্রথম ড্যাপের মেয়াদ ছিল ২০১৫ সাল পর্যন্ত। পরে মেয়াদ বাড়ানো হয়।
পরবর্তীকালে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) নতুন ড্যাপ (২০২২-৩৫) তৈরি করে। ঢাকা মহানগরসহ আশপাশের এক হাজার ৫২৮ বর্গকিলোমিটার এলাকা নিয়ে এ মহাপরিকল্পনা করা হয়। ড্যাপে ছয়টি স্বতন্ত্র অঞ্চলে ভাগ করা হয়েছে ঢাকাকে। সেগুলো হচ্ছে ‘কেন্দ্রীয় অঞ্চল’- ঢাকা শহর, উত্তর অঞ্চল, গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন; ‘পূর্ব অঞ্চল’- কালীগঞ্জ ও রূপগঞ্জ উপজেলা; ‘দক্ষিণ অঞ্চল’- নারায়ণগঞ্জ; ‘দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চল’- কেরানীগঞ্জ উপজেলা এবং ‘পশ্চিম অঞ্চল’- সাভার উপজেলা।
মন্তব্য