সব
বাংলাদেশে সাংবাদিকদের ওপর অব্যাহত হামলা-মামলা-নির্যাতন ও হত্যা স্বাভাবিকতায় পরিণত হয়েছে। সরকারের নির্লিপ্ততা ও নানা মহলের উস্কানিতে একের পর এক সাংবাদিক নির্যাতনের ঘটনা ঘটলেও কোনো ক্ষেত্রেই প্রতিকার মিলছে না। সাংবাদিকদের জন্য সবচেয়ে বিপজ্জনক পাঁচ দেশের মধ্যে বাংলাদেশের নাম উঠে এসেছে আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষণে। তবুও ভাগ্যিস, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা এই সময়ে গণমাধ্যম নজিরবিহীন স্বাধীনতা ভোগ করছে বলে ঘোষণা করেছেন। অন্যথায় পরিস্থিতি হয়তো আরো ভয়াবহ কোনো রূপ নিতো।
ড. ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর সাংবাদিকদের ওপর নিপীড়ন, সংবাদ প্রতিষ্ঠানে হামলা এবং অ্যাক্রেডিটেশন কার্ড বাতিলের মতো বিষয়গুলো উঠে এসেছে। ৫ই আগস্টের রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর বিভিন্ন ক্ষেত্রে সংস্কার ও পরিবর্তনের কথা বলা হলেও ৫৬১ জন সাংবাদিক বিভিন্নভাবে নির্যাতন, হয়রানি, হুমকি এবং পেশাগত কাজে বাধার সম্মুখীন হয়েছেন। তাঁদের মধ্যে অন্তত ২৬৯ জন সংবাদকর্মী পেশাগত দায়িত্ব পালনকালে হামলার শিকার হয়েছেন। ৫ই আগস্টের পর অন্তত ২৯৬ জন সাংবাদিকের নামে প্রায় ৬ শতাধিক মামলা দায়ের হয়েছে। যার অধিকাংশই হত্যা মামলা।
হিউম্যান রাইটস সাপোর্ট সোসাইটি (এইচআরএসএস) এর এক জরিপ সূত্রে জানা গেছে, ২০২৫ সালের জানুয়ারি মাসেই ১৯টি হামলায় ২৮ জন সাংবাদিক নির্যাতিত হয়েছেন। আহত হয়েছেন ১৯ জন, হুমকির শিকার ২ জন, গ্রেফতার ১ জন। অপর এক তথ্যসূত্রে উল্লেখ রয়েছে, ২১ জন সাংবাদিক গ্রেপ্তার।হলেও মাত্র তিন জন জামিন পেয়েছেন। ১০০ জন সাংবাদিক আহত ও প্রায় ৯০০ সাংবাদিক চাকুরীচ্যূত। আবার অনেক সাংবাদিকদের পদত্যাগে বাধ্য করা হয়েছে। ৯৬ জন সাংবাদিককে বিএফআইইউ কর্তৃক আর্থিক বিবরণী চাওয়া হয়েছে। ১৬৮ জনের প্রেস স্বীকৃতি বাতিল। ১৮ জন সাংবাদিকের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট জব্দ। ৮৩ জন সাংবাদিকের জাতীয় প্রেসক্লাবের সদস্য পদ বাতিল। অনেক গুলো মিডিয়া হাউজের মালিকানা পরিবর্তন হয়েছে।
যে মুহূর্তে এই স্ট্যাটাসটি দেওয়া হচ্ছে ঠিক সেই মুহূর্তে বরিশাল শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মৃত্যু যন্ত্রণায় ছটফট করছে কুয়াকাটাস্থ বাংলাভিশনের সাংবাদিক জহিরুল ইসলাম মিরন। গতরাতে দুর্বৃত্তরা তাকে উপর্যুপরি কুপিয়ে মৃত ভেবে ফেলে রেখে যায়।
আজ খোদ সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণেও হামলার শিকার হয়েছেন অন্তত তিন গণমাধ্যমকর্মী। আগামীকাল সকালে প্রেসক্লাবের সামনে আয়োজন করা হয়েছে সাংবাদিক হাফিজুর রহমান শফিকসহ তিনজন সাংবাদিকের উপর নির্মম হামলার বিচার দাবিতে।
দৈনিক প্রতিদিনের কাগজের কক্সবাজারস্থ স্টাফ রিপোর্টার সাংবাদিক মনসুর আলম মুন্নাকে কক্সবাজার শহর থেকে তুলে নিয়ে চকরিয়া থানা হেফাজতে আটক করে নির্যাতনের অভিযোগে ওসি মনজুর কাদেরসহ চার পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে।
শরীয়তপুরে হাতুড়ি নিয়ে একদল সন্ত্রাসী চার সাংবাদিকের ওপর হামলা চালিয়েছে। আহত সাংবাদিকরা হলেন, দৈনিক সমকালের সোহাগ খাঁন সুজন, নিউজ২৪ এর বিধান মজুমদার অনি, বাংলা টিভির প্রতিনিধি নয়ন দাস ও দেশ টিভির প্রতিনিধি সাইফুল ইসলাম আকাশ।
এর আগে সোনারগাঁ প্রেসক্লাবের সদস্য ও দৈনিক সময়ের আলো পত্রিকার সোনারগাঁ প্রতিনিধি আনিসুর রহমানের ওপর সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা ঘটে। রাজশাহী পবা থানাধীন বড়গাছি ইউনিয়নের ৭ নং ওয়ার্ডে পুকুর খননের সংবাদ সংগ্রহ করতে গিয়ে হামলা ও মারধরের শিকার হয়েছেন নিউজ পোর্টাল উত্তরবঙ্গ প্রতিদিনের বার্তা সম্পাদক রমজান আলীসহ ৭ জন সাংবাদিক।
তারেক জিয়াসহ বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব সাংবাদিকদের ব্যাপারে সহনশীল মনোভাব প্রদর্শন করলেও তাদের মাঠ পর্যায়ের নেতা কর্মীরা অনেকেই সরাসরি বিদ্বেষপূর্ণ ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছেন।
সাংবাদিক নির্যাতনের বিপরীতে হাতেগোণা দুই-একটি ব্যতিক্রম নজির হচ্ছে- জুলাইয়ের বিপ¬বকে শহিদ ৫ সাংবাদিক পরিবারকে কালেরকন্ঠ এক কোটি টাকা সহায়তা দিয়েছেন। অন্যদিকে কুমিল্লা প্রেসক্লাব মিলনায়তনে সাংবাদিক কল্যাণ পরিষদ আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে বিভিন্ন সময় পেশাগত দায়িত্ব পালনকালে হামলার শিকার ও নির্যাতিত সাত সাংবাদিককে সম্মাননা দেওয়া হয়েছে। এছাড়া গাজীপুর সদর প্রেসক্লাবের সম্মিলিত প্রতিবাদে সেখানে সাংবাদিক নির্যাতনের ঘটনায় জড়িত পুলিশ কর্মকর্তাদের জরুরি ভিত্তিতে প্রত্যাহারের ঘটনা ঘটেছে।
মন্তব্য