সব
রাজধানীতে প্রতি বছর কোনো কারণ ছাড়াই বাড়ি ভাড়া বাড়ানো যেন নিয়মে পরিণত হয়েছে। আইনি বাধ্যবাধকতার তোয়াক্কা না করে নিজ নিয়মে ভাড়া বাড়িয়ে চলেছেন বাড়িওয়ালারা। লাগামহীন বাসা ভাড়া নিয়ন্ত্রণে সরকারের হস্তক্ষেপ চান ভাড়াটিয়ারা। অতিরিক্ত জনসংখ্যার চাপ সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছে রাজধানী ঢাকা। বিভিন্ন পরিসংখ্যান বলছে, ৩০৬ বর্গ কিলোমিটারের এই শহরের বর্তমান জনসংখ্যা ২ কোটির বেশি। জনসংখ্যার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে বাসা ভাড়া।
বাসা ভাড়ার জন্য মোট আয়ের ৩০ শতাংশ নির্ধারিত থাকলেও এলাকা ভেদে তা দ্বিগুণ হয়। একদিকে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি অন্যদিকে বছর বছর বর্ধিত বাড়ি ভাড়ায় নাভিশ্বাস উঠেছে কর্মজীবীদের। ভাড়া নিয়ন্ত্রণে ‘বাড়ি ভাড়া নিয়ন্ত্রণ আইন’ প্রণয়ন করা হয়েছে ১৯৯১ সালে। প্রায় তিন যুগ পেরলেও গঠিত হয়নি স্বতন্ত্র নিয়ন্ত্রক সংস্থা। নজরদারির জন্যও নেই কোনো মনিটরিং সেল।
এদিকে সাত বছর ধরে ধানমন্ডিতে বসবাস করছেন চম্পা আক্তার নামে এক নারী। আয়ের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে খুঁজতে বেরিয়েছেন বাসা। কথা প্রসঙ্গে তিনি জানান, বাড়িওয়ালার মনমত ভাড়া বলে। ভাড়ার সঙ্গে সার্ভিস চার্জ সবচেয়ে বেশি সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। ফলে পছন্দের বাসায় উঠতে বাজেট ছাড়িয়ে যায়।
ক্যালেন্ডারের পাতা ঘুরে জানুয়ারি এলেই যেমন বেড়ে যায় বাসা ভাড়া তেমনি সরকারের টাকায় মেট্রোরেল নির্মিত হলেও বাড়ির মালিকের যেন পোয়াবারো। যে কারণে মেট্রোরেল চালুর পর থেকে হু হু করে বেড়েছে মিরপুরের বাসা ভাড়া।
এলাকা ভেদে যেখানে অনেক সচ্ছল মানুষও হিমশিম খাচ্ছে বাড়তি ভাড়া নিয়ে, সেখানে মধ্য ও স্বল্প আয়ের মানুষের কাছে এটা এখন গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে। বাংলাদেশ ভাড়াটিয়া পরিষদের তথ্য বলছে, গেল ১০ বছরে রাজধানীতে ভাড়া বেড়েছে পাঁচ গুণ। ভাড়াটিয়াদের পক্ষে কথা বলা এ সংগঠন বাড়তি ভাড়ার যৌক্তিকতা চ্যালেঞ্জ করে একাধিক সরকারি দফতরের দ্বারস্থ হলেও আসেনি কোনো সমাধান।
এদিকে ভাড়াটিয়া পরিষদের সভাপতি বাহারানে সুলতান বাহার বলেন, বাসার বাড়তি ভাড়া নিয়ে আমরা বার বার কথা বলছি। কিন্তু কর্ণপাতও করছে না বাড়িওয়ালারা। সরকার তো কোনো কথাই বলে না। ভাড়া নৈরাজ্য নিয়ে কোনো রাজনৈতিক দলও কথা বলতে রাজি নয়। কারণ তাদের মধ্যেই ঢাকার অনেক বাসার মালিক রয়েছেন।
বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের সভাপতি ড. আদিল মুহাম্মদ খান mp news কে বলেন, নিরাপদ আবাসন নাগরিকের মৌলিক অধিকার। কিন্তু ভাড়া নিয়ন্ত্রণে আইন প্রয়োগে ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে সরকার।
তিনি আরও বলেন, ভাড়াটিয়ারা সরাসরি ভাড়া দিলে যত আইনই করুক না কেন বাড়িওয়ালাদের ভাড়া বাড়ানো নিয়ে আটকানো যাবে না। ভাড়ার বিষয়ে সরকার যদি কোনো একটা সংস্থা তৈরি করে, সেখানে যদি ভাড়াটিয়ারা ভাড়া দেয় তাহলে নিয়ন্ত্রণে থাকবে। পাশাপাশি সরকারও একটা রাজস্ব পাবে। বিশ্বের অনেক দেশেই এমনটা চালু রয়েছে।
মন্তব্য