সব
গত ১৮ সেপ্টেম্বর দুদকের করা মামলার প্রায় ১ মাসেও শাস্তির আওতায় আসেনি রেলের দুর্নীতিবাজ ১০ কর্মকর্তা। বহাল তবিয়তে অফিস করছেন দুদকের মামলার এজাহার ভুক্ত এইসব কর্মকর্তাগণ।
এদিকে দুদকের মামলায় বাংলাদেশ রেলওয়ের সাবেক প্রধান প্রকৌশলী রমজান আলীকে বহিষ্কার করা হলেও কোন এক অদৃশ্য শক্তির বলে বহিষ্কার হচ্ছেন না দুর্নীতিবাজ রেলের কর্মকর্তাগণ।
এ সকল কর্মকর্তা হলেন, ১ম মামলার এজাহারভুক্ত আসামি বাংলাদেশ রেলওয়ের পাহাড়তলী কার্যালয়ের প্রধান সরঞ্জাম নিয়ন্ত্রক ফরিদ আহমেদ, সাবেক অতিরিক্ত প্রধান সরঞ্জাম নিয়ন্ত্রক মুহাম্মদ রাশেদুল আমিন, প্রধান যন্ত্র প্রকৌশলী (পূর্ব) তাপস কুমার দাস, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এস এম ট্রেড অ্যান্ড টেকনোলজির স্বত্বাধিকারী এ এম এম ইকবাল মোর্শেদ।
২য় মামলার আট আসামি হলেন- রেলওয়ের পাহাড়তলী কার্যালয়ের সাবেক অতিরিক্ত প্রধান সরঞ্জাম নিয়ন্ত্রক ও বর্তমানে পরিচালক (ইনভেনটরি কন্ট্রোল) প্রকৌশলী মো. আনোয়ারুল ইসলাম, সাবেক পরিচালক (লোকো-মেইন্ট) ও বর্তমানের দিনাজপুরের পার্বতীপুরের কেন্দ্রীয় লোকোমোটিভ কারখানার প্রধান নির্বাহী মো. রফিকুল ইসলাম, সাবেক প্রধান সরঞ্জাম নিয়ন্ত্রক মো. রুহুল কাদের আজাদ, জেলা সরঞ্জাম নিয়ন্ত্রক (পি-২) মো. রাহিদ হোসেন, সাবেক সহকারী সরঞ্জাম নিয়ন্ত্রক (পি-২) মো. আনোয়ার হোসেন, সহকারী সরঞ্জাম নিয়ন্ত্রক (সদর/পূর্ব) মো. এমদাদুর রহমান, সাবেক এডব্লিউএম/ডিএল ও বর্তমানে পাহাড়তলীর ডিজেল শপের কর্মব্যবস্থাপক (ডিজেল) এতেসাম মো. শফিক, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এম এস দ্য কসমোপলিটন কর্পোরেশনের স্বত্বাধিকারী নাবিল আহসান।
এদিকে ১৮ সেপ্টেম্বর দুদকের মামলার পরে ২২ সেপ্টেম্বর পদোন্নতি দেয়া হয় ২ জনকে। এই ২ জন হলেন ফরিদ আহমেদ ও রফিকুল ইসলাম। উপসচিব উজ্জ্বল কুমার ঘোষ স্বাক্ষরকৃত প্রজ্ঞাপনে ফরিদ আহমেদ কে সরকারি রেল পরিদর্শক পদে বদলী করা হলেও তিনি একই সাথে প্রধান সরঞ্জাম নিয়ন্ত্রক, পাহাড়তলী চট্টগ্রাম পদেও বহাল আছেন। ওই দিনই অপর এক প্রজ্ঞাপনে মো: রফিকুল ইসলাম (প্রধান নির্বাহী, কেলোকা) কে পদন্নোতি দিয়ে যুগ্ম মহাপরিচালক(যান্ত্রিক) এর মত গুরুত্বপূর্ণ পদে পদায়ন করা হয়। রফিকুল ইসলাম ছিলেন সাবেক রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজনের বেয়াই কৃষকলীগের সহ-সভাপতি তারিনের চাচাতো ভাই।
এদিকে দুদকের মামলার এজাহার ভুক্ত আরেক কর্মকর্তা আনোয়ারুল ইসলামও পরিচালক ইনভেন্ট্রি কন্ট্রোল এর পাশাপাশি সরঞ্জাম নিয়ন্ত্রক/পূর্ব পদেও বহাল আছেন। এই আনোয়ারুল ইসলাম সাবেক রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজনের ভাগ্নি জামাই।
জানা যায় নূরুল ইসলাম সুজন রেলমন্ত্রী হওয়ার পরে আনোয়ারুল ইসলাম আনন্দিত হয়ে সরঞ্জাম বিভাগের সকল কর্মকর্তা এবং ব্যবসায়ীদের মাঝে ৫ মণ মিষ্টি বিতরণ করেন। পরবর্তীতে সাবেক রেলমন্ত্রী সুজন আনয়ারকে একই সাথে ২/৩ টা লাভজনক পদের দায়িত্ব দিয়ে থাকেন। যার বদৌলতে আনোয়ার এখন নামে বেনামে শত কোটি টাকার মালিক। এছাড়াও দুর্নীতিবাজ বাকী কর্মকর্তারা আছেন নিজ নিজ পদে বহাল তবিয়তে ।
এদিকে দুদকের মামলার পরেও ২২ সেপ্টেম্বর পদন্নোতির পরে দুদকের অভিযোগকারী আবুল বশর রেলপথ মন্ত্রণালয়ের মাননীয় উপদেষ্টা বরাবর চিঠি প্রেরণ করেন। চিঠির অনুলিপিতে ছিলেন রেল সচিব , রেল ডিজি সহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। এই চিঠিতে তিনি উল্লেখ করেন, যেহেতু দুদক আনুসন্ধান কালে দুর্নীতির প্রমাণ পেয়েছেন, সেহেতু তাদেরকে স্থায়ী বহিষ্কার অথবা চাকরিচ্যুত করে রেলকে দুর্নীতি মুক্ত করতে হবে।
এছাড়াও গত ২৯ সেপ্টেম্বর অভিযোগকারী আবুল বশর দুদক চেয়ারম্যান বরাবর একটি চিঠি প্রেরণ করেন। এই চিঠিতে তিনি উল্লেখ করেন যে আসামীদের বিরুদ্ধে রেল প্রশাসন কোন ব্যবস্থা না নেওয়ায় এবং তাদেরকে পদোন্নতি দেওয়ায় এবং কোন কোন কর্মকর্তাকে একই সংগে একাধিক পদে দায়িত্ব দেওয়ায় হয়তো রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সচিব এবং ডিজি কোন অনৈতিক সুবিধার আশ্রয় নিতে পারেন বলে অভিযোগে উল্লেখ করেন। যার ফলে আসামীগণ এখনো বহাল তবিয়তে অফিস করছেন । এদিকে আওয়ামীলীগের সুবিধাভোগী এইসব কর্মকর্তা দেশ থেকে পালিয়ে যেতে পারেন বলে ধারণা থেকে তিনি চিঠিতে তাদের পাসপোর্ট জব্দ, ব্যাংক হিসাব, জব্দ ও বিদেশ যাত্রা বন্ধের জন্য অনুরোধ করেন।
এবিষয়ে বক্তব্য নেয়ার জন্য রেলসচিব আব্দুল বাকী ও রেলের মহাপরিচালক সরদার শাহাদত আলীকে ফোন দেওয়া হলে তাদের কেউই ফোন রিসিভ করে।
মন্তব্য