সব
ঢাকায় পাকিস্তানের জাতির পিতা মুহাম্মদ আলী জিন্নাহর ৭৬তম মৃত্যুবার্ষিকী পালন করা নিয়ে মুখ খুলেছেন ঢালিউড চিত্রনায়ক নাঈম। ফেসবুকে এ বিষয়ে একটি স্ট্যাটাস শেয়ার করেছেন অভিনেতা।
নবাব সলিমুল্লাহ একাডেমির ব্যানারে ঢাকার জাতীয় প্রেসক্লাবে পাকিস্তানের জাতির জনক মুহাম্মদ আলী জিন্নাহর মৃত্যুবার্ষিকী পালন করা হয়।
বুধবারের (১১ সেপ্টেম্বর) এ অনুষ্ঠানের খবর ছড়িয়ে পড়লে বিষয়টি নিয়ে ভক্তদের স্পষ্ট ধারণা দিতে ফেসবুক পোস্ট দেন নাঈম।
চিত্রনায়ক নাঈম ঢাকার নবাব পরিবার খাজা সলিমুল্লাহর বংশধর। তাই বৃহস্পতিবার (১২ সেপ্টেম্বর) বিকেলে ফেসবুকে জিন্নাহর মৃত্যুবার্ষিকী পালনের একটি ছবি পোস্ট করেন তিনি।
ক্যাপশনে বড় করে নাঈম লেখেন, ঢাকার নবাব পরিবার এটা সাপোর্ট করে না।
‘আমি খাজা নাঈম মুরাদ নওয়াব সলিমুল্লাহর পৌপুত্র এবং গর্বিত বাংলাদেশি নাগরিক হিসেবে স্পষ্ট করে বলতে চাই যে, আমি এমন কোনো গোষ্ঠী বা কার্যকলাপের সাথে যুক্ত নই যা আমাদের জাতীয় পরিচয় বা ইতিহাসকে ক্ষুণ্ণ করে।’
নাঈম আরও লেখেন, ‘নবাব সলিমুল্লাহ একাডেমি’র সাথে আমাদের ঢাকা নবাব পরিবারের কোনো সম্পর্ক নাই এবং এদের প্রচারিত মূল্যবোধের বিরুদ্ধে আমরা অবস্থান করি।
দেশের মহান মুক্তিযুদ্বের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে নাঈম লেখেন, ‘১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধ এবং স্বাধীনতা, ২০২৪ সালের ছাত্র জনতার গণ অভ্যুত্থানের প্রতি যে কোনো কর্মকাণ্ড যা জনসাধারণের আশা এবং মূল্যবোধের বিরোধিতা করে আমি তা সমর্থন করি না। আমি বাংলাদেশের ছাত্র জনতার এবং তাদের স্বার্থের প্রতি দৃঢ়ভাবে অবস্থান করি।’
এ প্রসঙ্গে নাঈমের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে সময় সংবাদকে তিনি বলেন, ‘নবাব সলিমুল্লাহ বড় একটা ফ্যাক্ট। এই নাম দিয়ে অনেকে সুযোগ নেয়ার চেষ্টা করছে। আমাদের পরিবার এই সংগঠন সম্পর্কে স্পষ্ট জানেই না।’
ক্ষোভ প্রকাশ করে অভিনেতা আরও বলেন, ‘নবাব সলিমুল্লাহ একাডেমির ব্যানারে যারা এটা করেছেন তারা কেবল তাদের স্বার্থ রক্ষায় করেছেন। আমাদের নবাব পরিবারের সঙ্গে এর কোনো সম্পৃক্ততা নেই। আমরা এটা প্রত্যাশা করি না। যারা করেছেন তারা অন্যায় করেছেন। আমি অনুরোধ করব, আমাদের নাম নিয়ে এ ধরনের কর্মকাণ্ড করলে তা আমরা কঠোরভাবে প্রতিহত করব।’
প্রসঙ্গত, পুরান ঢাকার আহসান মঞ্জিল ছিল ঢাকার নবাব পরিবারের পারিবারিক বাসস্থান। চিত্রনায়ক নাঈম এ নবাব পরিবারের বংশধর। দেশের চলচ্চিত্র ও অভিনয়ের প্রতি আলাদা টান ছিল তার। তাই নব্বই দশকে ঢালিউড সিনেমায় পা রাখেন তিনি।
বুধবার জাতীয় প্রেসক্লাবে মুহাম্মদ আলী জিন্নাহর মৃত্যুবার্ষিকী স্মরণে আয়োজিত অনুষ্ঠানে আলোচনা সভার পাশাপাশি উর্দু গান-কবিতা পরিবেশন করা হয়। নওয়াব সলিমুল্লাহ একাডেমি আয়োজিত সভায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন অধ্যাপক ড. মোস্তাফিজুর রহমান। এতে তিনি মুহাম্মদ আলী জিন্নাহর জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত জীবনের নানা ঘটনা বর্ণনা করেন।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে ঢাকায় নিযুক্ত পাকিস্তানের ডেপুটি হাইকমিশনার কামরান ধাঙ্গাল উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠানে উর্দু ভাষায় দেয়া এক ব্যক্তির ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। কয়েকটি সংবাদমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, ওই ব্যক্তির নাম এসকে আজিম। তিনি ঢাকার একটি বিহারি ক্যাম্পের বাসিন্দা। তবে ৭৫ বাংলাদেশ তার পরিচয় নিশ্চিত হতে পারেনি।
১ মিনিট ১৭ সেকেন্ডের ভিডিওতে ওই ব্যক্তি উর্দুতে যা বলেন, তার বাংলা অনেকটা এরকম, “১৫-১৬ বছর পর আমরা এখানে উর্দু ভাষায় কথা বলছি এবং অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করতে পারছি। এ জন্য অনুষ্ঠানের আয়োজকদের ধন্যবাদ।
মিরপুর-মোহাম্মদপুরে আমাদের বাপ-দাদারা বসবাস করতেন, তারা পাকিস্তানের পক্ষে মারা গেছেন। ভারত থেকে বিভক্ত হয়ে পাকিস্তান হয়েছিল এই দেশ। মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ সাহেব না থাকলে এশিয়া মহাদেশে মুসলিমদের জন্য কোনো দেশ থাকত না। তার জন্য আমরা পাকিস্তান পেয়েছি, যেখানে আমরা মুসলমানরা সম্মানের সাথে ধর্মপালন করতে পেরেছি। ১৯৭১ সালে ভারত যুদ্ধ করে আমাদের এ দেশকে দুভাগ করে দিয়েছে। পঞ্চাশ-ছাপ্পান্ন বছর ধরে আমাদের বাপ-দাদারা এই পাকিস্তানের স্বপ্ন দেখে গেছেন। এজন্য আজ আমাদের এখানে পাকিস্তানের সবাইকে দেখে আর এ অনুষ্ঠানে এসে খুব খুশি লাগছে। ইনশাআল্লাহ, আগামীতেও এ ধারা অব্যাহত থাকবে।”
অনুষ্ঠানে নাগরিক পরিষদের আহ্বায়ক মো. সামসুদ্দিন বলেন, “৫ আগস্ট আমাদের বিজয় দিবস, এটিই আমাদের স্বাধীনতা দিবস।”
অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি পাকিস্তানের ডেপুটি হাইকমিশনার কামরান ধাঙ্গাল বলেন, “মুসলিম লীগে মুহাম্মদ আলী জিন্নাহর নেতৃত্ব ছিল অসাধারণ। সমগ্র ভারতে মুসলমানদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ গণআন্দোলনের সূচনা ছিল এটি।”
মন্তব্য