সব
কোনোভাবেই ক্ষমতা ছাড়তে রাজি ছিলেন না শেখ হাসিনা। যে করেই হোক বলপ্রয়োগ কিংবা রক্তপাত ঘটিয়ে গণভবন আকড়ে ধরে থাকতে চেয়েছিলেন তিনি। রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন বাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তারা প্রাণপণ বোঝাচ্ছিলেন, ‘পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে।’ কিন্তু মানতে নারাজ ছিলেন হাসিনা।
জানা গেছে, সোমবার (৫ আগস্ট) সকাল সাড়ে ১০টার দিকে তিন বাহিনীর প্রধান ও পুলিশের মহাপরিদর্শককে (আইজিপি) প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন গণভবনে ডাকা হয়। এ সময় তাদের কাছে প্রধানমন্ত্রী ক্ষোভ প্রকাশ করে জানতে চান, নিরাপত্তা বাহিনী কেন পরিস্থিতি সামাল দিতে পারছে না। আইনশৃঙ্খলাবাহিনী কেন আরও কঠোর হচ্ছে না, সেটা নিয়েও ক্ষোভ প্রকাশ করেন তিনি। শেখ হাসিনা তাদের এ-ও মনে করিয়ে দেন, বিশ্বাস করেই তাদের পদে বসানো হয়েছিল।
সেনাপ্রধানের প্রতি বাড়তি ক্ষোভ ঝেড়ে আইজিপিকে দেখিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, পুলিশ তো ভালো করছে, সেনাবাহিনী কেন পারছে না? পাশ থেকে তখন আইজিপি জানান, তাদের পক্ষেও আর বেশি সময় পরিস্থিতি সামাল দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না।
ওই সময়ে শীর্ষ কর্মকর্তারা তাকে পদত্যাগের পরামর্শ দিয়ে বলেন, বলপ্রয়োগ করে এই পরিস্থিতি সামাল দেওয়া যাবে না। কিন্তু কারও কোনো কথা কিংবা পরামর্শ একদমই শুনতে নারাজ শেখ হাসিনা। নিরুপায় হয়ে শেখ রেহানার সঙ্গে আলাদা করে আলোচনায় বসেন কর্মকর্তারা। তাঁকে পরিস্থিতি জানিয়ে শেখ হাসিনাকে বোঝাতে অনুরোধ করেন। শেখ রেহানা এরপর বড় বোন শেখ হাসিনার সঙ্গে আলোচনা করেন। ক্ষমতার মায়ায় অনড় শেখ হাসিনা। একপর্যায়ে সজীব ওয়াজেদ জয়কে মাকে বোঝানোর পরামর্শ দেন শীর্ষ কর্মকর্তা। একমাত্র ছেলে বোঝানো পরেই শেখ হাসিনা পদত্যাগে রাজি হন।
এ সময় শাহবাগ ও উত্তরা থেকে গণভবন অভিমুখে জনতার ঢলের তথ্য জানিয়ে, ঘণ্টাখানেকের মধ্যে তাকে গণভবন ত্যাগের পরামর্শ দেন কর্মকর্তারা। শেখ হাসিনা তখন একটি ভাষণ রেকর্ড করতে চান। কিন্তু ততক্ষণে ভাষণ রেকর্ডের সময় আর নেই। কারণ, ভাষণ রেকর্ড করতে গেলে গণভবন থেকে বের হওয়ার সময় না-ও পাওয়া যেতে পারে। তাই গণভবন ছাড়তে কর্মকর্তারা তাকে পৌনে এক ঘণ্টা সময় বেঁধে দেন।
এরপর ছোট বোন রেহানাকে নিয়ে তেজগাঁওয়ের পুরোনো বিমানবন্দরে হেলিপ্যাডে আসেন শেখ হাসিনা। সেখানে তাদের কয়েকটি লাগেজ ওঠানো হয়। তারপর বঙ্গভবনে পদত্যাগের আনুষ্ঠানিকতা শেষে দুপুর আড়াইটার দিকে ভারতের উদ্দেশে উড়াল দেন শেখ হাসিনা।
মন্তব্য