সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলায় মঙ্গলবার(১৬ জানুয়ারী) মুন্সিগঞ্জ জেলেখালী ও সুন্দরবন সংলগ্ন কালিঞ্চি,ধূমঘাট, ভেটখালী নতুন ঘেরী গ্রামে কথিত সুন্দরবনের দেবতা বনবিবির পূজা ও মেলা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
মুন্সিগঞ্জ জেলেখালী বনবিবি পুজার প্রধান কর্তা বা পূজারী সতীশ মন্ডল জানান প্রতি বছর মাঘ মাসের ১ম দিনে এ বন বিবির পূজা অনুষ্ঠিত হয়। দেখা যায় এ পূজায় মাটির তৈরি বনবিবি, শাহা জংগুলি, আলি মোদন, গাজী, কালু, দুঃখে, রাখাল বালক, সুন্দরবনের বাঘের মূর্তি করে কোন ব্রা¥ণ ছাড়াই পুঁথি পড়ে পূজা করা হচ্ছে। জানা যায় এ পূজায় প্রধান দেবতা হল বনবিবি। বাকী অন্যরা বনবিবির সঙ্গী সাথি। বিশেষ করে যারা সুন্দরবনে যান তারা বাঘের আক্রমণসহ অন্যান্য জীব জন্তুর আক্রমণ থেকে রা পেতে কথিত বনবিবির পূজা করে থাকেন। এ ছাড়া সুন্দরবন সংলগ্ন এলাকায় কবিরাজ বা স্থানীয়ভাবে ঝাঁড় ফুঁক করে থাকেন তারাও এ বন বিবির পুজা করে থাকেন বলে জানা যায়।
আরও জানা যায় এ বন বিবির পুজায় নারী,পুরুষ মানত করে থাকেন বিশেষ করে যাদের সন্তান নেই তারা সন্তানের জন্য ও কোন বিশেষ রোগ থেকে মুক্তি পেতে। যখন এ মানত অনুযায়ী মানতকারীর কামনা বা বাসনা পরিপূর্ণ হয় ঠিক তার পরবর্তী বছর মুরগি ছেড়ে দেওয়া, পাঁঠা বলি দেওয়া, বন বিবির মূর্তি তৈরী করে দেওয়া সহ অন্যান্য নিয়ম মেনে চলেন। এ পুজার পুজারী সতিষ মন্ডল বলেন সুন্দরবনের বাওয়ালী, মেীয়ালীরা সাধারণত বনে যাওয়ার পূর্বে তার নিকট এসে বনবিবির সামনে থেকে মাটি নেওয়া বা এক চিলতে কাপড় মন্ত্র দিয়ে পড়ে নিয়ে যান। বনে থাকা কালিন এটি সার্বণিক সাথে রাখেন।
এ দিকে উপজেলার বাদঘাটা গ্রামে আলি মোদন তলায় আলি মোদনের নামে স্থানীয়রা শিন্নী দিয়েছেন। এখানকার বিশ্বনাথ মন্ডল জানান বিশ্বাসের ভিত্তিতে পূর্ব পুরুষ থেকে এ নিয়ম প্রচলিত রয়েছে বলে মাঘ মাসের প্রথম দিনে এ মোদমী তলায় আলি মোদনের শিন্নি দেওয়া হয়।
বনবিবির পুজার দিনে এক ধরনের স্থানীয়ভাবে মেলা বসে। এ মেলায় বিভিন্ন প্রকার দোকান বসে। মেলা উপলে স্থানীয়ভাবে বেশ সাড়া পড়ে প্রতি বছর।
সতিষ চন্দ্র বলেন তার এ বনবিবির মেলার বয়স প্রায় এক শত বছর হতে চলেছে। তার ঠাকুরদাদা যোগেশ্বর মন্ডল পূজা ও মেলা করেছেন ছোট কাল থেকে , তার পিতা নীল কান্ত মন্ডল জীবিত থাকা কালিন পুজা ও মেলা করেছেন ও তার ছেলে সতিষ মন্ডল (৬২) বর্তমানে পুজা ও মেলা করছেন। তিনি বলেন পূর্বে এ মেলা উপলে যাত্রা, লাঠিখেলা ও অন্যান্য বিনোদনের ব্যবস্থা করা হত। বিভিন্ন এলাকার লোকজন মেলায় আসত। বর্তমানে এ মেলার পরিসর কমে গেছে বলে জানান।
জানা যায়, উপজেলার সুন্দরবন সংলগ্ন কালিঞ্চি, জেলেখালী, ভেটখালী নতুন ঘেরী, বুড়িগোয়ালিনী ও অন্যান্য স্থানে এ বনবিবির পূজা ও মেলা অনুষ্ঠিত হয়েছে। মুন্সিগঞ্জ জেলেখালী, ভেটখালী নতুন ঘেরী বনবিবির মেলায় শ্যামনগর উপজেলা ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান প্রভাষক সাঈদ উজ জামান সাইদ সহ অন্যান্যরা মেলা পরিদর্শন করেন এবং আয়োজকদের সাথে মতবিনিময় করেন।