সীমান্তবর্তী শেরপুরের হীম হীম শীতে কাবু।ঝিনাইগাতী গারো পাহাড়ে জেঁকে বসেছে শীত। ঘন কুয়াশার চাদরে ঢাকা পড়ছে মাঠ-ঘাট-জনপদ। চিকচিক করছে শিশির বিন্দু মুক্তাদানার মত ঘাস আর ফুলে ফলে। কুয়াশার চাদরে উঁকি দিচ্ছে প্রায় প্রতিদিনের সূর্য্য।যে সব কৃষক এখনো সেই মান্ধাতা আমলের গরু-মহিষের হালেই জমি চাষ করেন তারা কাঁধে লাঙল আর জোয়াল নিয়ে মাঠে ছুটছেন।সেই সাথে চলছে গরম গরম ভাপা পিঠা আর চিতই পিঠা খাওয়ার ধূম। তারই মাঝে কুয়াশায় লুকোচুরি খেলছে শীত। পাহাড়ি এলাকা হওয়ায় এখানে স্বাভাবিকভাবেই শীত অন্য যে কোন এলাকার চেয়ে বরাবরই বেশী। গারো পাহাড়ের বেশীর ভাগ মানুষেরই দরিদ্রসীমার নীচে বসবাস। তাই এই শীতের শুরুতেই গরম কাপড়ের অভাবে থর থর করে কাঁপছে হতদরিদ্র মানুষ। আবার কেউবা শীতের গরম কাপড় ও লেপ-তোষক বানাতে ব্যস্ত।কেউবা খর-কুটো জালিয়ে শীত নিবারণের ব্যর্থ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
অপর দিকে শীতের আমেজের সাথে গোটা গারো পাহাড়ে ফুটে উঠেছে আবহমান গ্রাম বাংলার চিরাচরিত ঐতিহ্য।শীত উপেক্ষা করে অনেকেই স্বাদ গ্রহণ করছেন আগাম খেজুর রসের।বাজার ছেয়ে গেছে আগাম শীতকালীন সবজিতে। ঝিনাইগাতী গারো পাহাড় ভারত-বাংলাদেশ লাগুয়া হওয়ায় প্রতি বছরই স্বাভাবিকভাবেই এখানে শীত পড়ে বেশী।এবারও হয়নি তার কোন ব্যতিক্রম। এখনি সকাল-সন্ধায় বাড়ি-বাড়ি আগুনের কুন্ড জ্বালিয়ে হতদরিদ্র মানুষ শীত নিবারনের ব্যর্থ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। কেউবা ছেড়া কাঁথা মুড়িয়ে প্রচন্ড শীতে থর থর করে কাঁপছে।
এ বছর শীতের তীব্রতা বেশী হওয়ায় সবচে বেশী দুর্ভোগ পোহাচ্ছে হতদরিদ্র মানুষ। এ দিকে দরিদ্র-অতি দরিদ্রতো বটেই মধ্যবিত্ত শ্রেনীর লোকজনকেও ভিড়তে দেখা যাচ্ছে পুরানো শীতবস্ত্রের দোকানে। ইতোমধ্যেই শীতবস্ত্রের দামও গেছে বেড়ে। গোটা গারো পাহাড়জুড়ে শীতের তীব্রতা আশংকাজনকভাবে বেড়ে যাওয়ায় চাহিদা বেড়েছে কম্বলের। পাহাড়ি এলাকা ঝিনাইগাতীর বিভিন্ন হাট-বাজার ঘুরে দেখা যায়, শীতের তীব্রতা বৃদ্ধি পাওয়ায় গরম কাপড়ের চাহিদা যেমন বেড়েছে, তেমনি বেড়েছে মৌসুমী শীতবস্ত্র (পুরাতন) ব্যবসায়ী। তারা পুরাতন শীতবস্ত্র জ্যাকেট, কম্বল, মোটা গেঞ্জি, কোট, সোয়েটার ইত্যদি পুরনো কাপড়ের পসরা সাজিয়ে বসেছেন। বিক্রিও হচ্ছে প্রচুর।ক’জন ভ্রাম্যমান ব্যবসায়ী জানান, শীতের তীব্রতা বেড়ে যাওয়ায় এবার ক্রেতা যেমন বেড়েছে তেমনি বিক্রিও হচ্ছে ভাল। কেমন লাভ হচ্ছে জিজ্ঞেস করতেই মুচকী হেসে বলেন- ভাই এই শীতের দিন কয়টাই, তার পর আবার বসেই থাকতে হবে। দরিদ্ররা শীতে কাবু হলেও কিনতে পারছেনা গরম কাপড়। তাই শীতে কাবু হাজার হাজার হতদরিদ্র মানুষের এটা ভাগ্যবিড়ম্বনা ছাড়া আর কিছুইনা। এ দিকে তীব্র শৈত্যপ্রবাহে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। কনকনে ঠান্ডায় চরম অসহায় হয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছে গোটা গারো পাহাড়ের হতদরিদ্র মানুষ। তীব্র শীতে কাজে যেতে পারছে না নিম্নবিত্ত ও দিনমজুর শ্রেনীর মানুষ। ফলে পরিবার পরিজন নিয়ে তারা অর্ধহার-অনাহারে দিন কাটাচ্ছেন। হতদরিদ্র মানুষ শীত মোকাবেলায় চরমভাবে হিমশিম খেলেও কেউ এগিয়ে আসছেনা তাদের সাহায্যে। শীতবস্ত্রের অভাবে সবচে বেশী দুর্দশা ও কাহিল হয়ে পড়েছে শিশু ও বৃদ্ধরা। দেখা দিয়েছে ঠান্ডাজনিত নানা রোগ। ঝিনাইগাতী গারো পাহাড় ভারতের তোড়া পাহাড়ের সন্নিকটে হওয়ায় শীতের তীব্রতাও এখানে অনেক বেশি। অন্যান্য বছরের তুলনায় এখানে অনেক আগেই শীতের তীব্রতা বৃদ্ধি পেতে শুরু করেছে। উপজেলার পাহাড়ি এলাকার বিভিন্ন গ্রাম ঘুরে দেখা যায়, গরিব,দুখী ও অভাবী মানুষ শীতবস্ত্রের অভাবে মারাত্বক কষ্টে দিন কাটাচ্ছেন। গ্রামাঞ্চলের হতদরিদ্র মানুষ গাছের পাতা, খরকুটা জ্বালিয়ে, কেউবা রান্না ঘরে চুলার পাশে বসে আগুন পোহাচ্ছে। তীব্র শীতের কারণে আলুসহ শীতকালীন সবজির আবাদ ও চরম ক্ষতির সম্মূখিন।