ময়মনসিংহের ব্রহ্মপুত্র নদের ওপর ১৯৯১ সালে ৪৫৫ মিটার দীর্ঘ বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সেতু উদ্বোধন করা হয়। এ সেতু পারাপারে ওই বছর থেকেই টোল দিয়ে আসছে বিভিন্ন যানবাহন। স্থানীয়দের কাছে ‘শম্ভুগঞ্জ সেতু’ হিসেবে পরিচিত এ সেতু নির্মাণে খরচ হয়েছিল ৭২ কোটি টাকা।
চালু হওয়ার ৩০ বছরের মাথায় এ সেতুর ইজারা বাবদ খরচের চার থেকে পাঁচ গুণ টাকা আয় হলেও এখনও টোলের ভার বইতে হচ্ছে পরিবহন মালিক-শ্রমিকদের। দীর্ঘ সময়েও টোল আদায় বন্ধ না হওয়ায় ক্ষুদ্ধ এই অঞ্চলের পরিবহন চালক, মালিক ও স্থানীয়রা।
সড়ক ও জনপথ বিভাগ ময়মনসিংহ সূত্রে জানা যায়, ১৯৯১ সালে ময়মনসিংহের পাটগুদাম এলাকায় ব্রহ্মপুত্র নদের উপর প্রায় ৭২ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত হয় বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সেতু। এ সেতু স্থানীয়দের কাছে ‘শম্ভুগঞ্জ ব্রিজ’ হিসেবে পরিচিত। উদ্বোধনের পর থেকেই আদায় করা হচ্ছে টোল। ২০২১-২০২২ অর্থবছরে তিন বছর মেয়াদে ৪৮ কোটি টাকা ইজারা দেওয়া হয়েছে। উদ্বোধনের পর থেকে এই সেতু থেকেই নির্মাণ ব্যয়ের কয়েক গুণ রাজস্ব আদায় হয়ে সরকারি কোষাগারে জমা হয়েছে।
শম্ভুগঞ্জ সেতু দিয়ে কিশোরগঞ্জ, নেত্রকোণা, শেরপুর, মদন, মোহনগঞ্জ, তাড়াইল, কেন্দুয়া, কলমাকান্দা, দুর্গাপুর, বিরিশিরি, ময়মনসিংহের তারাকান্দা, ফুলপুর, হালুয়াঘাট, ধোবাউড়া, গৌরীপুর, ঈশ্বরগঞ্জ, নান্দাইল, সিলেট, চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন জেলার যাত্রীবাহী বাস, পণ্যবাহী ছোট-বড় ট্রাকসহ প্রতিদিন প্রায় ৬ থেকে ৭ হাজার যানবাহন চলাচল করে।
বর্তমানে প্রতিটি যানবাহন থেকে আকারভেদে ১০ টাকা থেকে ২৫০ টাকা করে টোল আদায় করা হচ্ছে। হেভি ট্রাক ১৩৫ টাকা, মিডিয়াম ট্রাক ১০০ টাকা, মিনি ট্রাক ৭৫ টাকা, বড় বাস ৬৫ টাকা, মিনিবাস ৩৫ টাকা, মাইক্রোবাস ৪০ টাকা, প্রাইভেটকার ২০ টাকা, পাওয়ার টিলার ৬০ টাকা ও সিএনজি চালিত অটো রিকশা থেকে ১৫ টাকা টোল আদায় করা হচ্ছে।
এই সেতু দিয়ে চলাচলকারী ইমাম পরিবহনের চালক আনোয়ার কাদের বলেন, ‘দিন যত যাচ্ছে টোলের পরিমাণ আরো বাড়ছে। জন্মের পর থেকে দেখছি এই সেতু থেকে টোল আদায় করা হচ্ছে। এখনো টোলমুক্ত হয়নি, আদৌ হবে কি না তার কোনো নিশ্চয়তাও নেই।’
ময়মনসিংহ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট মোয়াজ্জেম হোসেন বাবুল বলেন এ সেতুর টোল আদায় বন্ধ করে দেওয়া প্রয়োজন, আমরা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলব।
শহীদ মিয়া নামে এক ব্যাটারি চালিত অটোরিকশা চালক বলেন, ‘আমরা গরিব মানুষ। সামান্য আয় করি। এই সেতুর উপর দিয়ে যতবার যাই ১৫ টাকা করে দিতে হয়। জানিনা এই টোল কবে শেষ হবে।’
ময়মনসিংহ জেলা মটর মালিক সমিতির মহা-সচিব মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘এতো বছর পরেও বন্ধ হচ্ছে না টোল আদায়। জানি না কবে বন্ধ হবে। তবে আমরা পরিবহন মালিকরা সরকারের কাছে এই সেতুর টোল আদায় বন্ধের দাবি জানিয়েছি।’