ময়মনসিংহের ফুলপুর উপজেলায় সরকারি অনুমোদন ও পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র ছাড়াই দীর্ঘদিন ধরে একের পর এক ইটভাটা পরিচালিত হওয়ার অভিযোগ উঠেছে। এসব ইটভাটার কারণে মারাত্মক পরিবেশ দূষণ, ফসলি জমি ধ্বংস এবং সরকারি রাজস্ব ক্ষতির অভিযোগ করছেন স্থানীয় বাসিন্দা ও কৃষকরা।
ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন (নিয়ন্ত্রণ) আইন থাকলেও ফুলপুরে তার কার্যকর প্রয়োগ চোখে পড়ছে না বলে অভিযোগ উঠেছে। ফলে একটি সুবিধাভোগী চক্রের মাধ্যমে অবৈধ ইটভাটার কার্যক্রম বছরের পর বছর ধরে চলমান রয়েছে বলে মনে করছেন সচেতন মহল।
সম্প্রতি ফুলপুর উপজেলায় ফসলি জমি থেকে মাটি কাটার বিরুদ্ধে প্রশাসনের পরিচালিত অভিযানে স্বস্তি প্রকাশ করেছেন এলাকাবাসী। ইট তৈরির প্রধান কাঁচামাল এটেল মাটি সংগ্রহের ফলে প্রতিবছর শত শত একর উর্বর কৃষিজমি স্থায়ীভাবে কৃষির অযোগ্য হয়ে পড়ছে।
কৃষকদের মতে, মাটি কাটার ওপর কঠোর নিয়ন্ত্রণ আরোপ করা গেলে অবৈধ ইটভাটার একটি বড় অংশ এমনিতেই বন্ধ হয়ে যাবে।
প্রশাসনের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ফুলপুর উপজেলায় মোট ১৬টি ইটভাটা রয়েছে। এর মধ্যে মাত্র ৩টি বৈধ এবং বাকি ১৩টি অবৈধ। তবে মাঠপর্যায়ের তথ্য বলছে, উপজেলায় অন্তত ৩০টি ইটভাটা সক্রিয় রয়েছে। অর্থাৎ সরকারি তালিকার বাইরেও আরও ১৪–১৫টি ইটভাটা চলছে, যেগুলোর কোনো বৈধ কাগজপত্র নেই।
এই বাস্তবতা প্রশ্ন তুলছে, সরকারি হিসেবের বাইরে থাকা ইটভাটাগুলো কীভাবে নির্বিঘ্নে পরিচালিত হচ্ছে এবং কার তত্ত্বাবধানে?
স্থানীয় একাধিক সূত্রের দাবি, ফুলপুর উপজেলার ইটভাটা মালিকদের সংগঠনের সভাপতি লাল মিয়া তালুকদার অবৈধ ইটভাটাগুলো থেকে নিয়মিত অর্থ সংগ্রহ করে সংশ্লিষ্ট দপ্তরের কিছু ব্যক্তির কাছে পৌঁছে দেওয়ার ভূমিকা পালন করছেন। তবে এই অভিযোগের বিষয়ে এখনো কোনো নিরপেক্ষ তদন্ত বা সরকারি স্বীকৃত তথ্য প্রকাশ পায়নি।
এ বিষয়ে জানতে লাল মিয়া তালুকদারের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাঁর বক্তব্য পাওয়া যায়নি। প্রশাসনের পক্ষ থেকেও এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক কোনো মন্তব্য করা হয়নি।
স্থানীয়দের দাবি, অভিযোগের সত্যতা যাচাই করে নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে প্রকৃত দায়ীদের চিহ্নিত করা হোক।
রাজনৈতিক চাপের অজুহাত অতীতে শোনা গেলেও সাম্প্রতিক সময়ে সেই যুক্তিও টেকসই নয় বলে মনে করছেন সচেতন মহল। তাঁদের প্রশ্ন, গত দেড় বছরে ফুলপুরে কতটি অবৈধ ইটভাটা বন্ধ করা হয়েছে? কতটির বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে? এই প্রশ্নগুলোর জবাব জানতে চায় সাধারণ মানুষ।
ফুলপুরের পরিবেশ ও কৃষিজমি রক্ষায় অবিলম্বে সব অবৈধ ইটভাটা বন্ধ এবং প্রশাসনিক স্বচ্ছতা নিশ্চিত করার দাবি জানিয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।

৭৫ বাংলাদেশ ডেস্ক।।