আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ময়মনসিংহ-৮ (ঈশ্বরগঞ্জ) আসনে ধানের শীষ মনোনীত প্রার্থী ও উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক প্রকৌশলী লুৎফুল্লাহেল মাজেদ বাবু সাংবাদিকদের সহযোগিতা চেয়ে মতবিনিময় সভা করেছেন। এ সময় তিনি দেশ ও জাতির স্বার্থে আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে সাংবাদিকদের প্রতি নিরপেক্ষা বজায় রেখে সংবাদ প্রকাশের আহবান জানান।
মঙ্গলবার (১১ নভেম্বর) রাত ৮টায় ময়মনসিংহ এক রেস্টুরেন্ট সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় তিনি এই আহবান জানান।
সভায় আয়নাঘরে নির্যাতনের স্মৃতিচারণ করে প্রকৌশলী লুৎফুল্লাহেল মাজেদ বাবু বলেন, গত বছরের ৩০ জুলাই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি দল আমাকে গুলশানের বাসা থেকে তুলে নিয়ে যায়। ফ্যাসিস্ট হাসিনার সরকারের পতনের পরদিন ৬ আগস্ট মুক্তি পাই। সিটিটিসির (পুলিশের কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম) একটি দল আমাকে গুলশানের বাসা থেকে তুলে আয়নাঘরে নিয়ে গিয়েছিল। সেখানে আটকে রেখে আমার ওপর নির্যাতন চালানো হয়। গুমসংক্রান্ত কমিশন অব ইনকোয়ারিতে গুমের পর নির্মম নির্যাতনের চিত্র তুলে ধরে দেওয়া অভিযোগও দিয়েছেন তিনি।
লুৎফুল্লাহেল মাজেদ বলেন, আমাকে চোখ বেঁধে বাসা থেকে আয়নাঘরে নিয়ে মাত্র ৩০ মিনিট সময় দেওয়া হয়েছিল। এর মধ্যে আমাকে গুলিকরে হত্যা করে আন্দোলনকারীদের গুলিতে আমার মৃত্যু হয়েছে বলে চালিয়ে দেওয়ার আলাপ করা হচ্ছিল। আমাকে বলতে হবে আন্দোলনের জন্য কাদেরকে টাকা দিয়েছি। এরপর আমাকে প্রচন্ড নির্যাতন চালায়। নির্যাতন শেষে আমাকে একটি স্টেটমেন্টে স্বাক্ষর করায়, সেখানে বলা হয় আমার নেতৃত্বে উত্তরা পূর্ব থানা পোড়ানো হয়েছে। সাংবাদিকরা আসলে যেনো আমি বলি আমি ফান্ডিং করেছে, এবং আরও কয়েকজনের নাম বলে দেয় তাদের নাম বলতে বলা হয়।
তিনি বলেন, আয়নাঘর থেকে বেঁচে ফেরত আসতে পারবো তা সে সময়ে কল্পনা করতে পারিনি। কিন্তু এখন দল আমাকে মনোনয়ন দিয়ে নতুন চ্যালেঞ্জ ও দায়িত্ব দিয়েছে। গত ১৭ বছরে ঈশ্বরগঞ্জের সড়ক যোগাযোগে কোনো কাজ হয়নি। জনগণের ভোটে আমি এমপি হতে পারলে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন ঘটাবো। শিক্ষা ও স্বাস্থ্যকেও অগ্রাধিকার রেখে কাজ করা হবে। তরুণ ও শিক্ষিত বেকারদের জন্য এ অঞ্চলে কর্মসংস্থানের কোনো ব্যবস্থা নেই। কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা হবে। দক্ষ জনশক্তি গড়তে নানামুখী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে। পিছিয়ে থাকা একটি সম্ভাবনাময় জনপদকে এগিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করা হবে।
প্রকৌশলী মাজেদ তাঁর রাজনৈতিক অনুপ্রেরণার কথা তুলে ধরে বলেন, শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলে আমার যাত্রা শুরু হয়। দীর্ঘ এই পথচলায় মামলা, হামলা এবং আয়নাঘরে নির্যাতিত হয়েও শহীদ জিয়ার আদর্শ থেকে কখনো বিচ্যুত হইনি। রাজনীতি করে ব্যক্তিগতভাবে পাওয়ার কিছু নেই, বরং আমার লক্ষ্য একটি শিক্ষিত সমাজ গড়ার মধ্যদিয়ে ঈশ্বরগঞ্জকে আধুনিক ও সমৃদ্ধশালী উপজেলা হিসেবে গড়ে তুলতে চাই।
দলীয় মনোনয়নের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমার নেতা তারেক রহমান যে আত্মবিশ্বাসে আমাকে ময়মনসিংহ-৮ (ঈশ্বরগঞ্জ) আসনে ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থী মনোনীত করেছেন। আমি বিশ্বাস করি ঈশ্বরগঞ্জের মানুষ আগামী জাতীয় নির্বাচনে এই আত্মবিশ্বাসের প্রতিফলন ঘটাবে।
মতবিনিময় সভায় ময়মনসিংহ বিভাগীয় নগরীর কর্মরত মূলধারার প্রায় অর্ধশত সাংবাদিক উপস্থিত ছিলেন।

নিজস্ব প্রতিবেদক।।