প্রকাশের সময়: বৃহস্পতিবার, ৬ নভেম্বর, ২০২৫ । ৮:৪১ অপরাহ্ণ প্রিন্ট এর তারিখঃ শুক্রবার, ৭ নভেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

ই-জিপি দরপত্রে কারজাসির অভিযোগ

সেলিম মিয়া, স্টাফ রিপোর্টার।।

সরকারি দরপত্রে চালু রয়েছে ই-জিপি (ইলেকট্রনিক গভর্নমেন্ট প্রকিউরমেন্ট)। এ কারণে বন্ধ হয়েছে টেন্টারবাজি ও সন্ত্রাসী কার্যকলাপ। তবে ই-জিপির মাধ্যমে দরপত্র পাইয়ে দিতে এখন চালু হয়ে নানা কারসাজি। এ কাজে সহায়তা করছেন দরপত্র
আহব্বানকারী বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানের অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।

তাদের সহায়তায় ই-জিপি দরপত্রে ডিজিটাল কারসাজির পুরো ফায়দা তুলে নিচ্ছেন সুবিধাভোগী ঠিকাদাররা। এনিয়ে সাধারণ ঠিকাদারদের মধ্যে ক্ষোভ বাড়ছে। সরকারি বিভিন্ন প্তরে এনিয়ে অভিযোগ করছেন তারা। তবে কোন প্রতিকার পাচ্ছেন না।

বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠান সূত্রে জানা গেছে, ই-জিপি’র কারণে প্রাক্কলণ (ইষ্টিমেট) বিক্রির ফাঁদ পেতে বসেছেন সরকারি কর্মকর্তা কর্মচারিরা। এছাড়া ঢাকার বাইরের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে অভিজ্ঞতার সার্টিফিকেট নিয়ে নানা কারসাজি খেলা চলছে। অনুসন্ধানে জানা গেছে, ভবন তৈরি বা মেরামত কাজের দরপত্র বিজ্ঞপ্তি জারির আগে প্রাক্কলন (ইষ্টিমেট) তৈরি করেন উন্নয়ন কাজের সঙ্গে যুক্ত কর্মকর্তারা। উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছ থেকে প্রাক্কলন অনুমোদনের পর টেন্ডার ডকুমেন্ট তৈরি করা হয়। এরপরই দরপ্ত বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়।

বিজ্ঞপ্তিতে টেন্ডার ডকুমেন্ট বিক্রির জন্য ২০ কর্ম দিবস দেয়া হয়ে থাকে। তবে ওই কম সময়ের মধ্যে টেন্ডার ডকুমেন্ট ঘেটে প্রাক্কলিত দরের সর্বোচ্চ ১০ ভাগ কম বা বেশি দেখাতে পারবেন দরপত্রে অংশ নেওয়া প্রতিষ্ঠানগুলো। এরচেয়ে কম বা বেশি দেখালে দরপত্র বাতিল হয়ে থাকে। আগে এ রনের ধরা বাধা কোনো বিধান ছিল না। পিপিআরের এমন বিধানের কারণে চতুর ঠিকাদাররা ‘প্রাক্কলন’ জমা থাকা কর্মকর্তাদের দ্বারস্থ হন। এরপর নির্ধারিত অঙ্কের অর্থ দিয়ে ‘প্রাক্কলন’ কিনে নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে কিছু অসাধু ঠিকাদারদের বিরুদ্ধে। স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে,ওই প্রতিষ্ঠানটিতে দরপত্র আহবানকারি ও অনুমোদনকারি ব্যক্তি একজন। তাই প্রাক্কলন,টেন্ডার ডকুমেন্ট প্রস্তুত, দরপত্র কমিটির’র সভা আহবানসহ সব কিছু এক ব্যক্তি করে থাকেন। এজন্য প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে পছন্দের ঠিকাদারদের কাছে ‘প্রাক্কলন’ বিক্রির জোরালো অভিযোগ রয়েছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক ঠিকাদার বলেন, প্রাক্কলন যেসব ঠিকাদার কিনতে পারেন তারা লাভবান হন। কারন প্রাক্কলিত দর অনুযায়ি কম বা বেশি দিলে তাতে কাজ পাওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। অন্য ঠিকাদাররা এজন্য পিছিয়ে পড়েন। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ই-জিপিতে অভিজ্ঞতার ধোঁয়া তুলে অনেক নামী ঠিকাদারদের কাজ পাওয়া থেকে বঞ্চিত করা হয়। দুই ঠিকাদার জানান, ঢাকা, চট্টগ্রাম, ময়মনসিংহ, খুলনা,গাজীপুর, বরিশালসহ বিভিন্ন অঞ্চলের নামী ঠিকাদাররা ঢাকায় এসে ব্যবসা করতে পারেন না। কারন হিসেবে তিনি জানান, ই-জিপির মাধ্যমে উন্মক্ত দরপত্র পদ্ধতিতে শতকরা ১০ ভাগের বিধান থাকায় কখনও কখনও দরপত্রদাতাদের মধ্যে উল্লিখিত মূল্য একই হয়। অর্থাৎ একাধিক ঠিকাদারের মধ্যে সমতা লক্ষ্য করা যায়। এই পদ্ধতিতে লটারির কোনো বিধান না থাকায় তাদের মধ্য থেকে একজনকে নির্বাচন করা কঠিন হয়ে পড়ে। তখন অভিজ্ঞতা দেকে কাজটি দেয়া হয়। এই অভিজ্ঞতা নির্ধারনের বিষয়টি কর্মকর্তাদরে সঙ্গে দফারফার মাধ্যমেই নির্ণিত হয়। কারন হিসেবে তিনি বলে, অভিজ্ঞতা নির্ধারনের বিষয়টি ম্যানুয়ালি ঠিক করা হয়। এজন্য নতুন করে অভিজ্ঞতার কাগজ বানিয়ে দেয়ার সুযোগ থাকে।

কয়েকজন ঠিকাদার জানান, ইজিপির মাধ্যমে উন্মুক্ত দরপত্র পদ্ধতিতে দরপত্রতাদের তখন ঠিকাদারদের পক্ষ নেন। এসব ক্ষেত্রে কে কাজ পাবে তা ঠিক করেন উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর, শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর, স্হানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর, খাদ্য অধিদপ্তর, মৎস্য অধিদপ্তর,দুর্যোগ ব্যবস্হাপনা অধিদপ্তর, সহ বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানে এ রকম ঘটনা হরহামেশা ঘটছে। এর আগে সরকারি অর্থ ব্যয় স্বচ্ছ ও জবাবদিহি করতে ই-টেন্ডারিং ব্যবস্হা প্রবর্তন করা হয়। ২০১১ সালের ২ জুন এ প্রক্রিয়ার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হয় । প্রথম পর্যায়ে সরকারি চারটি সংস্থা স্হানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর, সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর, বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড, বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডে পরীক্ষামূলক ভাবে ই- টেন্ডারিং চালু করা হয়। পরবর্তীতে সরকারি প্রায় সব সংস্থা ই-জিপিতে যুক্ত হয়েছে। শূরু থেকে ইজিপি প্রকল্প বাস্তবায়নে অর্থায়ন সহায়তা করছে বিশ্ব ব্যাংক। নতুন করে সরকারি কেনাকাটায় ই-জিপি সিস্টেমকে প্রাতিষ্ঠানিক রুপ দিতে সহায়তা দিয়ে যাচ্ছে সংস্থাটি।

প্রকাশক ও সম্পাদকঃ মোঃ মাইন উদ্দিন উজ্জ্বল, প্রধান সম্পাদকঃ শিবলী সাদিক খান, নির্বাহী সম্পাদকঃ জহির রায়হান,  বার্তাকক্ষঃ 75bdnews@gmail.com

প্রিন্ট করুন