ময়মনসিংহের তারাকান্দায় হিজবুল আলম জিয়েস নামে এক ছাত্রদল নেতার টর্চার সেলের সন্ধান মিলেছে। সেই টর্চার সেলে সাধারণ মানুষকে ধরে এনে নির্যাতনের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়েছে। এসবের প্রতিবাদ করতে গিয়ে তার হামলার শিকার হয়ে থানায় মামলা দায়েরের করেছেন মহানগর ছাত্রদলের সাবেক সহ-সাধারণ সম্পাদক মামুন সরকার। এঘটনায় পুলিশ জিয়েস ও তার দুই সহযোগিকে গ্রেপ্তার করেছেন।
৫ আগস্টের পর চাঁদাবাজিসহ নানা কর্মকাণ্ডে বেপরোয়া হয়ে পড়েন তারাকান্দা উপজেলার বানিহালা ইউনিয়ন ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক হিজবুল আলম জিয়েস (২৬)। সে মাঝিয়ালী গ্রামের মঞ্জুরুল ইসলামের ছেলে।
গত শনিবার (৮ আগষ্ট) বিকেলে জিয়েস মাঝিয়ালি বাজারে চুল কেটে কাটা না দিয়ে উল্টো দোকানী হক মিয়ার কাছে ৫ হাজার টাকা চাঁদা দাবি করেন। টাকা না দেওয়ায় সেলুন বন্ধ করে দেওয়ার হুমকি দিয়ে মারধর করা হয়। এক পর্যায়ে সেলুনে তালাও লাগিয়ে দেয়। এ সময় হক মিয়ার বড় ভাই লাক মিয়াকেও তার দোকানে গিয়ে মারধর করা হয়।
ময়মনসিংহ মহানগর ছাত্রদলের সাবেক সহ-সাধারণ সম্পাদক মামুন সরকারের আশ্বাসে (৯ আগস্ট) বিকেলে সেলুন খোলেন হক মিয়া। পরে সন্ধ্যার দিকে তাকে মারধর করে জিয়েস। হক মিয়া বিষয়টি মামুনকে জানালে সে ঘটনাস্থলে ছুটে গেলে তাকে রক্তাক্ত করা হয়।
এঘটনায় মামুন সরকার (১১ আগস্ট) দুপুরে তারাকান্দা থানায় বাদী হয়ে জিয়েসকে প্রধান করে অজ্ঞাত ৪-৫ জনকে আসামি করে একটি মামলা দায়েরের করেন।
মামুন সরকার বলেন, ছাত্রদল তারেক রহমানের আদর্শে গড়া সংগঠন। আর সেই সংগঠনের পদ ব্যবহার করে জিয়েস ৫ আগস্টের পর থেকে চাঁদাবাজি, তার টর্চার সেলে সাধারণ মানুষকে ধরে এনে নির্যাতন, মাদক সেবন এমন কোন অপরাধ নেই যে সে করে নাই। চুল কেটে নাপিতকে টাকা না দিয়ে উল্টো চাঁদা দাবি। এটা ছাত্রদলের আদর্শ পরিপন্থী। তার প্রতিবাদ করায় আমাকে হত্যার উদ্দেশ্যে গুরুত্বর আহত করেছে। তাই বিচারের প্রত্যাশায় মামলা করেছি।
ঘটনার শিকার ব্যবসায়ী হক মিয়া বলেন, চুল কাটার পর ৫ হাজার টাকা চাঁদা দাবি করে জিয়েস। টাকা না দিলে মারধর করে দোকান থেকে বের করে তালা লাগিয়ে দেয়। পরে মামুন ভাইয়ের কথায় দোকান খুললে পূণরায় আক্রমণ করে এবং মামুন ভাইকেও আঘাত করে।
শুধু তাই নয় জিয়েস নিজের পুকুর পাড়ে একটি টিনের ঘরে গড়ে তোলা টর্চার সেলে সাধারণ মানুষকে ধরে নিয়ে নির্যাতন করে। সম্প্রতি এমন একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে সমালোচনা সৃষ্টি হয়। সেই ভিডিওতে দেখাযায় এক যুবককে তার সহযোগী রাফি এবং আব্দুল্লাহ মারধর করছে ভিডিও কলে জিয়েসকে রেখে। ওই যুবকের গলায় অস্ত্র ধরে ৪০ হাজার টাকা চাঁদা দাবি করেন। পরে চাঁদার টাকা দিতে রাজি হলে তাকে ছাড়া হয়।
তার নির্যাতনের শিকার জুয়েল ও রাসেল বলেন, জিয়েস প্রভাব খাটিয়ে তাদের কাছে টাকা পাবে মর্মে ভিডিও স্বীকারোক্তি আদায় করতে মারধর করে। প্রাণনাশের ভয়ে তারাও স্বীকারোক্তি দেন।
এঘটনায় সমালোচনার মধ্যে (১০ আগস্ট) রাতে জিয়েসের দুই সহযোগী রাফি এবং আব্দুল্লাহকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। মামলার পর (১১ আগস্ট) রাত ৯টার দিকে প্রধান আসামি হিজবুল আলম জিয়েসকেও গ্রেপ্তার করা হয়।
স্থানীয় ইউপি সদস্য আবু তাহের বলেন, জিয়েস সবসময় নেশার মধ্যে থাকে। বিভিন্ন সময় সে আমাকেও হুমকি দিয়েছে। তার টর্চার সেল রয়েছে। সবকিছু নির্মুল করে তাদের সর্বোচ্চ বিচার করা হোক।
তারাকান্দা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুহাম্মদ টিপু সুলতান বলেন, অভিযোগ পেয়ে থানায় মামলা নেওয়া হয়েছে। ঘটনায় সম্পৃক্ত থাকা দুজনকে গ্রেপ্তার করে আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে পাঠানো হয়েছে। সোমবার রাতে গ্রেপ্তার হওয়া জিয়েসকে মঙ্গলবার দুপুরে আদালতে হাজির করা হবে। এসব ঘটনায় আরও কেউ জড়িত আছে কি না খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
২০২১ সালের ২৯ ডিসেম্বর থেকে হিজবুল আলম জিয়েস বানিহালা ইউনিয়ন ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বে রয়েছেন। সে গ্রেপ্তারের পর সোমবার রাতে ময়মনসিংহ উত্তর জেলা ছাত্রদলের দপ্তর সম্পাদক সাদ্দাম হোসেন তালুকদার স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে জিয়েসকে তার পদ থেকে সাময়িক অব্যাহতি প্রদান করা হয়।