রাজধানীর উত্তরায় মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় স্কুলের শিক্ষিকা ও কো-অর্ডিনেটর মাহরিন চৌধুরীর দ্রুত সিদ্ধান্তে প্রায় নিশ্চিত মৃত্যুর হাত থেকে রক্ষা পেয়েছেন অন্তত ২০ জন শিক্ষার্থী। যদিও শিক্ষার্থীদের উদ্ধারের পর নিজেই ঠিকঠাক বের হতে না পেরে দগ্ধ হন আগুনে। পরে সোমবার (২১ জুলাই) জাতীয় বার্ন ইনস্টিটিউটে লাইফ সাপোর্টে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে তার শরীরের একাংশ পুড়ে গেছে বলে তথ্য প্রকাশিত হলেও তার শরীরের ১০০ শতাংশই পুড়ে গেছে বলে জানা গেছে।
এ বিষয়ে মাহরিন চৌধুরীর ভাই মুনাফ মুজিব চৌধুরী গতকাল ফেসবুকে জানান, মাইলস্টোনে কো-অর্ডিনেটর হিসেবে মাহরিন দায়িত্বরত ছিলেন। আগুন লাগার পর তিনি প্রথমে বের হয়ে আসেননি, বরং যতজন শিক্ষার্থীকে সম্ভব বের করে আনার চেষ্টা করেছেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তিনি ১০০ শতাংশ দগ্ধ হন।
শিক্ষিকা মাহরিনের স্বামী মনসুর হেলাল বলেন, ‘ওর শরীরের প্রতিটি অংশ পুড়ে গিয়েছিল। ডাক্তার শুরুতে বলেছিলেন কমপক্ষে ৮০ শতাংশ দগ্ধ হয়েছে, কিন্তু আমার মনে হয় ও প্রায় ১০০ শতাংশ দগ্ধ ছিল।’
তিনি আরও বলেন, ‘লাইফ সাপোর্টে নেওয়ার আগে আমাকে সে (মাহরিন) জানায়—ছুটি শেষে যখন বের হচ্ছিল, তখনই বিমানটি পড়ে। নিজে আগুনে দগ্ধ হয়েও বাচ্চাদের বাঁচাতে চেষ্টা করেছে।’
এর আগে, আগুনে দগ্ধ হওয়ার পর তাকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় রাজধানীর চানখারপুলের জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে তাকে ভর্তি করা হয়। এসময় চিকিৎসকরা জানান, তার শরীরের শতভাগই দগ্ধ হয়েছিল। আইসিইউতে মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করছিলেন তিনি। শেষ পর্যন্ত সোমবার রাতে সেখানেই তার মৃত্যু হয়।
দুর্ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শীদের ভাষ্য অনুযায়ী, দুর্ঘটনার মুহূর্তে দ্রুত শিক্ষার্থীদের ক্লাসরুম থেকে বের করে আনেন শিক্ষিকা মাহরিন। পরে তাদেরকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নেওয়া হয়। কিন্তু ছাত্র-ছাত্রীদের বের করে দিয়ে নিজেই যথাসময়ে বের হতে পারেননি।
শিক্ষিকা মাহরিনকে উদ্ধার করা এক মাইলস্টোন ছাত্রীর বাবা সুমন নিশ্চিত করে বলেন, ম্যাডাম অনেক ভালো ছিল। সেনাবাহিনী আমাদের বলেছে, ‘শিক্ষিকার জন্য অন্তত ২০ জন শিক্ষার্থী বেঁচে গেছেন।’
উদ্ধার হওয়া চতুর্থ শ্রেণীপড়ুয়া ছোঁয়ার মামা জানান, ‘খালি চুল পরে থাকতে দেখেছি। অজ্ঞান হয়ে গিয়েছিলাম। পরে জানতে পারি, এক ম্যাডাম ছোঁয়াকে উদ্ধার করে বাইরে বের করে দিয়েছে। বর্তমানে সে পিজি হাসপাতালে পাঠিয়েছেন।’
প্রসঙ্গত, সোমবার (২১ জুলাই) দুপুরে মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের একটি ভবনের সামনে বিমানবাহিনীর একটি বিমান বিধ্বস্ত হয়। মুহূর্তেই আগুন ছড়িয়ে পড়ে চারদিকে। ওই সময় স্কুলের শিশু শিক্ষার্থীদের হাত ধরে গেট পার করাচ্ছিলেন মাহরিন চৌধুরী। আগুনের ভয়াবহতা বেড়ে গেলে তিনি নিজে বেরিয়ে আসার আগে যতজন শিক্ষার্থীকে সম্ভব, তাদের বের করে আনার চেষ্টা চালিয়ে যান। এ সময় তার শরীর আগুনে দগ্ধ হয়।
মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষিকা ও কো-অর্ডিনেটর মাহরিন চৌধুরী।