মিথ্যা দিয়ে কখনো সত্যকে দাবিয়ে রাখা যায় না। স্কুলের মাঠ নিয়ে ছাত্রদের দাবী দীর্ঘ দিনের। আপনার ফেসবুকে দেওয়া স্ট্যাটাসের লেখার মাঝে নজরে পড়েছে বেশকিছু মিথ্যাচার। আপনি এগুলো না লিখলে বুঝতেই পারতাম না একজন শিক্ষক অনিয়ম দুর্নীতির সাগরে হাবুডুবু খেয়ে নিজের আধিপত্য ধরে রাখতে কতবড় মিথ্যাচার করতে পারে।
আপনি লিখেছেন…
(মানব বন্ধনের আরেকটা বিষয় বিদ্যালয়ের মাঠ নেই। অনেক বড় বড় ভাল ভাল স্কুলই আছে যেখানে মাঠ নেই। স্কুলের জমি হয়তো স্কুল বড় বিল্ডিং এর সামনে নেই রাস্তার ওই পাশে আছে অগুছালোভাবে ঘরগুলো না রেখে বড় একটা বিল্ডিং করলেই মাঠ বের হবে। স্কুলের অর্ধেক জমি স্কুলের বাইরে এর জন্য শিক্ষক কেন দায়ী হবে। যারা জমি দিছে তারা এভাবেই দিছে)।
রাস্তার ঐ পাশে যদি অগুছালো জায়গা থেকেই থাকে তাহলে স্কুলের জায়গায় সাইনবোর্ড দিয়ে লিখুন
“লেতু মন্ডল উচ্চ বিদ্যালয়ের নিজস্ব সম্পত্তি” পরিমাণ —শতাংশ, দাগ— খতিয়ান— এত।
এতে যদি দৃশ্যমান হয় যে বিদ্যালয়ের সম্পত্তি কোন ভূমি দস্যু’র দখলে তবে প্রশাসন এবং স্থানীয়রা মিলে তা দখল মুক্ত করবে, অগুছালো জায়গা ভিন্ন ভিন্ন হলে ভিন্ন ভিন্ন সাইনবোর্ড দিয়ে জমি সনাক্ত করে নিজেকে বিতর্কের উর্ধে রাখুন। এর চেয়ে সহজ কাজ কি আরো আছে?
আপনি “মব” বলে কাকে কি বুঝাতে চেয়েছেন? বিগত দিন গুলোতে লেতু মন্ডল উচ্চ বিদ্যালয়ের অনিয়ম দুর্নীতি নিয়ে ‘টু’ শব্দটি কেউ করতে পারেনি, যার জলজ্যান্ত উদাহরণ আমি।
বিদ্যালয়ের অনিয়ম দুর্নীতি নিয়ে সংবাদ প্রকাশের পর আমার উপর আপনার বাবা রফিক মাস্টার নেপথ্যে থেকে আব্দুল মজিদের মালিকানা আশিক এন্টারপ্রাইজে বসে দফায় দফায় বৈঠক করে আপনাদের লালিত ভয়ংকর সন্ত্রাসী সিদ্দিকুর রহমান শাহিনের নেতৃত্বে বর্বর হামলা চালিয়ে আমার হাত পা ভেঙে গুড়িয়ে দিয়েছিল। আপনার বাবা রফিক মাস্টারের লালিত মজিদ শাহিনের তান্ডবে আমাকে দেখতে আমার বাড়ীতে কেউ যেতে পারছে না।
বৈষম্য বিরোধী ছাত্র জনতার আন্দোলনে ৫ আগস্টে ফ্যাসিস্ট সরকারের পতনের পর বিদ্যালয়ের কমিটি, খেলার মাঠের দাবী, অনিয়ম দুর্নীতির প্রতিবাদ করায় ‘মব’ সৃষ্টি করেছে এমন মন্তব্য খুবই দুঃখজনক।
আপনার ভাষায় ৫ আগস্টের পর এই দাবী যদি “মব” হয়ে থাকে তাহলে আপনি ফ্যাসিস্ট হাসিনার কতবড় দোসর একটু ভেবে দেখেছেন কি?
নিশ্চয়ই আপনার মনে আছে নবম শ্রেণি থেকে আপনি দশম শ্রেণিতে পড়া লেখা না করে এক লাফে এসএসসি পরীক্ষা দিয়ে উত্তীর্ণ হয়েছিলেন, তখন বাহবা পেয়ে খুবই প্রসংশিত হয়েছিলেন। অনেকেই বলত চম্পা দশম শ্রেণিতে না পড়েই এসএসসি পাশ। “মব” শব্দটি ব্যবহারের পর আমার কেন জানি মনে হলো দশম শ্রেণীতে পড়েই এসএসসি পরীক্ষা দেওয়ার দরকার ছিল, তাহলে অন্তত ‘মব’ শব্দটি মুর্খের মত আপনার লেখায় আসতো না। এক্ষেত্রে আপনাকে অথর্ব শিক্ষক যদি বলে ফেলি তাহলে আমার শাস্তিযোগ্য অপরাধ হবে কি?
কোতোয়ালি মডেল থানার একটি মামলার এজাহারে দেখলাম একদল সন্ত্রাসী লেতু মন্ডল উচ্চ বিদ্যালয়ের অফিস কক্ষে প্রবেশ করে আপনি আমেনা বেগম চম্পা’কে অফিস থেকে টেনে হেচরে বের করে স্লীলতা হানি করেছে, বিদ্যালয়ের গুরুত্বপূর্ণ নথিপত্র ছিড়ে ফেলেছে, মুল্যবান কিছু জিনিসপত্র লুটপাট করেছে, পরবর্তীতে স্কুলের প্যাডে আপোষনামা নাকি লিখেছেন বিদ্যালয়ে এসব ঘটনা ঘটেনি। তাহলে কি প্রতিপক্ষকে হ্যারেজ করার জন্য মামলাটি করেছিলেন? যদি তাই হয় তবে আপনার আঁচল ধরে টানাটানি কথাটা না লিখলেওতো পারতেন। প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করতে একজন শিক্ষক এভাবে নিজের আত্মসম্মান বিসর্জন দেওয়া মুর্খতার পরিচয় নয় কি? আর যদি এজাহার সত্য হয়ে থাকে তাহলে কি মামলাটি বিচারাধীন রয়েছে?কোতোয়ালি মডেল থানার মামলা নং- ১৯ তারিখ ০৮-০৮-২০১৩ইং।
আপনি লিখেছেন এবার বিদ্যালয়ের বার্ষিকক্রিড়া ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ভালোভাবে করতে পারেননি!
ফ্যাসিস্ট সরকারের শাসনামলে দেখেছি বার্ষিকক্রিড়া ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগের বড় বড় নেতারা প্রধান অতিথি, বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত রয়েছেন। সাবেক সংসদ সদস্য মোহিত উর রহমান শান্ত তখন সদরের এমপি নির্বাচিত না হলেও মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হওয়ায় উচ্ছ্বসিত হয়ে প্রধান অতিথি হিসেবে আমন্ত্রণ করেছেন, সেদিন আওয়ামী লীগের প্রবীন এক নেতার মৃত্যুতে তিনি সেই অনুষ্ঠানে উপস্থিত হতে না পারায় মোহিত উর রহমান শান্ত’র পক্ষে প্রতিনিধি হয়ে বক্তব্য রেখেছেন জেলা যুব লীগের আহ্বায়ক আজাহার।
দুঃখের বিষয় ৫ আগস্টের পর বিদ্যালয়ের বার্ষিক ক্রিড়া ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি খোঁজে পাননি আওয়ামী লীগ পলাতক বলে? স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গরাও দাওয়াত পায়নি। আওয়ামী লীগ পলাতক থাকায় দুঃখে ভারাক্রান্ত মনে কাউকে আমন্ত্রণ না করে অনুষ্ঠানে আয়োজন করলে তা ভালোভাবে না করারই কথা। ৫ আগস্টের পর আপনার বিদ্যালয়ে প্রধান অতিথি, বিশেষ অতিথি হিসেবে কাউকে আমন্ত্রণ না করে অনুষ্ঠান করা ৫ আগস্টের গণঅভ্যুত্থানের বিরোধিতা নয় কি? যেহেতু আপনি পরিবারগত ভাবে বিএনপি বিদ্বেষী সেক্ষেত্রে দুই একজন ছাত্র প্রতিনিধি কাউকে অতিথি করতে পারতেন, সেটাওতো পারলেন না।
পীরে কামেল হযরত আয়াত আলী শাহ (রঃ) এর মাজারে টাকার ভাগবাটোয়ারা নিয়ে দ্বন্দ্বে ৭টি বছর কত কিছুই না ঘটেছে রাজগঞ্জ বাজারে, বাদ যায়নি হত্যাকান্ডেরমত জগন্য অপরাধ। যাদের সাথে দ্বন্দ্বে জড়িয়ে রক্তের হলি খেলায় মেতে উঠেছিল, ৫ আগস্টে পটপরিবর্তনের পর তাদেরকে সাথে নিয়ে বিএনপি ও অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের প্রতিবাদী নেতৃবৃন্দ ময়েজ উদ্দিন মইজু, মাহমুদুল হাসান রাসেল, মহসিন আলম, নোমান ইবনে লতিবসহ বেশ কয়েকজনকে সন্ত্রাসী আখ্যায়িত করে উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবর মিথ্যা অভিযোগ কিসের ঈঙ্গিত বহন করে? বিএনপি’র এই নেতৃবৃন্দরা কি আসলেই সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজ? নাকি আপনারা ফ্যাসিস্টের দোসর? এর উত্তর আছে কি রফিক মাস্টারের কাছে? এ আচরন গনঅভ্যুত্থানের বিরোধিতা নয় কি? নিশ্চয়ই এ আচরন গনঅভ্যুত্থানের বিরোধিতা, এর বিচারও কিন্তু সময়, প্রেক্ষাপট অনুযায়ী ঠিকই হবে।
দেশের পটপরিবর্তনের পর একটা শ্রেণীর মানুষ মাজার বিদ্বেষী হয়ে বেশ কিছু মাজার ভাংচুর করেছে, মাজারের ভক্তরা আতঙ্কিত অবস্থায় ছোট পরিসরে বাৎসরিক ওরশ মাহফিলে উপস্থিত হয়েছে। অবশেষে ৭৫ হাজার টাকা মাজারে ফান্ডে জমা রাখা হয়েছে বলে মাইকে ঘোষণা করে জানিয়েছেন মাজার কমিটি। অথচ রফিক মাস্টারের নেতৃত্বে কমিটি করে জাঁকজমকপূর্ণ ভাবে বছরের পর বছর বাৎসরিক ওরশ মাহফিল পালন করে অবশেষে ঋণের বুঝা শেষ হতো না! কতবড় চোরের হাতে নিয়ন্ত্রণ থাকলে এটা সম্ভব?
তবে আর যাই হোক একজন শিক্ষকের এত মিথ্যাচার তাও আবার ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে এগুলো খুবই লজ্জার এবং দুঃখজনক।
অনেক জল্পনা কল্পনার পর মনে হয় এবার অনিয়ম দুর্নীতির শিকল ছিড়ে মুখোশ উন্মোচনের পালা। নবগঠিত এডহক কমিটির সভাপতি হয়েছেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক রেজা মোহাম্মদ গোলাম মাসুম প্রধান। দেশের পটপরিবর্তনের পর গঠিত এই কমিটির স্বচ্ছতায় বিদ্যালয়ের জমিসহ সকল প্রকার অসঙ্গতি, অনিয়ম-দুর্নীতির ও স্বেচ্ছাচার অবসান ঘটিয়ে প্রভাব ও দুর্নীতিমুক্ত একটি বিদ্যালয়ে রুপান্তরিত হবে বলে আশার প্রতিফলন ঘটেছে সর্বস্তরের মানুষের মাঝে। অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদীদের প্রতি আল্লাহ সহায় হোন যেন কোন বিষাক্ত মিথ্যার ছোঁবল কাল নাগিনীর বিষের মত সত্যকে ঘ্রাস করতে না পারে। সত্য চিরদিনই সত্য, লেতু মন্ডল উচ্চ বিদ্যালয় গড়ে উঠুক সত্যের বাতিঘর হিসেবে, বিদ্যালয়ের শিক্ষার আলোতে আলোকিত হউক নতুন বাংলাদেশ।
লেখক
মোঃ মাইন উদ্দিন উজ্জ্বল
প্রাক্তন শিক্ষার্থী
লেতু মন্ডল উচ্চ বিদ্যালয়