কোন নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে প্রশাসনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র ছাড়াই জেলা জুড়ে ৩ শতাধিক ইটভাটা চালিয়ে যাচ্ছে। এসব ভাটায় দেদারছে পোড়ানো হচ্ছে বনের কাঠ। অনিয়ম যেন নিয়মে পরিনত হয়েছে।
অনুমোদন ছাড়াই এ অবস্থায় ইটভাটাগুলো চললেও পরিবেশ অধিদপ্তর ও জেলা প্রশাসনের তেমন কোনো পদক্ষেপ নেই। এসব ইটভাটার চারপাশে ফসলি জমি আর বসতবাড়িসহ রয়েছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। এর মধ্যেই চলে ইট পোড়ানোর কর্মযজ্ঞ। এমন চিত্র ময়মনসিংহ সিটি কর্পোরেশনের আশপাশসহ জেলা জুড়েই দেখা গেছে।
পরিবেশ অধিদপ্তরের তথ্য মতে, ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশন এলাকা ও সীমানাঘেঁষে ইটভাটা রয়েছে ১৩টি, যার কোনোটিরই অনুমোদন নেই। এছাড়া জেলায় তিন শতাধিক ইটভাটার মধ্যে পরিবেশের ছাড়পত্র আছে মাত্র ৪৩টির। ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন নিয়ন্ত্রণ আইন অনুযায়ী, আবাসিক এলাকা, সিটি করপোরেশন, পৌরসভা, বাণিজ্যিক এলাকা, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং কৃষি জমিসহ পরিবেশের ক্ষতি হয় এমন এলাকায় ইটভাটা স্থাপন করা যাবে না।
তবে এ আইনের তোয়াক্কা না করে পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র ছাড়াই বছরের পর বছর ধরে সিটি করপোরেশন এলাকা এবং এর আশপাশের ইটভাটা চালু রয়েছে। কোনো ধরনের জ্বালানি কাঠ ব্যবহার না করার বিধান থাকলেও থেমে নেই কাঠ পোড়ানোসহ ইটভাটার কার্যক্রম।
এতদিন আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতাদের প্রভাব থাকলেও এখন ভাটাগুলো কার নিয়ন্ত্রণে চলছে, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে জনমনে।
স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, সবকিছু জেনেও নীরব রয়েছে পরিবেশ অধিদপ্তর ও জেলা প্রশাসন। ভাটাগুলোর কালো ধোঁয়ায় পরিবেশ বিপর্যয়, ফসল উৎপাদন হ্রাস, জীববৈচিত্র্য হুমকিসহ শারীরিক সংক্রমণে অসুস্থতার আশঙ্কা স্থানীয়দের।
জেলার একাধিক উপজেলার সচেতন মহলের সাথে কথা বললে তাঁরা জানান, এতদিন আমরা জেনেছি ক্ষমতার বলে ইটভাটাগুলো টিকে ছিল। কিন্তু আমরা অবাক হচ্ছি, স্বৈরাচার সরকার পতনের পাঁচ মাস পার হলেও আগের মতোই চলছে ভাটাগুলো। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা যেন চোখে কাঠের চশমা পড়ে বসে আছে। দেখেও ভান করছে না দেখার। আমরা দ্রুতই অনুমোদনহীন ইটভাটাগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহনের জোড় দাবী জানাচ্ছি।
সরেজমিনে ইটভাটার মালিকরা না থাকলেও ম্যানেজারদের পাওয়া যায় নিয়মিত। বেশ কয়েকজন ম্যানেজার নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক তারা বলেন, যে দেশে ঘুষ দিয়ে কাজ চলে সেখানে কাগজপত্র দিয়ে কি হবে? ঘুষ দিলে কাগজপত্র লাগেনা।
আপনারা সাংবাদিক অফিসে এসে দেখে যান, প্রায় ৪ শত ভিজিটিং কার্ড ড্রয়ারে জমেছে সবাই ২০০টাকা থেকে শুরু করে ৫ হাজার পর্যন্ত নিয়েছে। এখন আপনাকে কত দিতে হবে? কত দিলে ইটভাটা বৈধ হবে?
পরিবেশ অধিদপ্তরের ময়মনসিংহ বিভাগীয় কার্যালয়ের পরিচালক শেখ মো. নাজমুল হুদা বলেন, আগে কীভাবে চলেছে, তা আমি বলতে পারব না। এখন এগুলো আর চলতে পারবে না। আমরা জেলা প্রশাসনের কাছে ম্যাজিস্ট্রেট চেয়েছি। দ্রুতই অভিযান চালানো হবে।
জেলা প্রশাসক মফিদুল আলম বলেন, পরিবেশ অধিদপ্তর আমাদের কাছে ম্যাজিস্ট্রেট চেয়েছে, আমরা দিয়েছি। আমার বক্তব্য পরিষ্কার, ময়মনসিংহে কোনো অবৈধ ইটভাটা চলুক, তা আমি চাই না।