অবশেষে বিক্ষোভের মুখে পদত্যাগ করেছেন হামদর্দের মার্কেটিং ম্যানেজার শরীফুল ইসলামসহ ২২জন কর্মকর্তা। দুপুর ২টার দিকে হামদর্দ কলেজের সামনে জড়ো হন সহস্রাধিক সুবিধাবঞ্চিত কর্মকর্তা-কর্মচারী। মার্কেটিং ম্যানেজারের পদত্যাগসহ ১৯ দফা দাবিতে হামদর্দ (ওয়াকফ) ল্যাবরেটরিজ ঘেরাও করেন তারা। সেখান থেকেই বিক্ষুদ্ধ দলটি হামদর্দের প্রধান কার্যালয়ে গিয়ে চীফ মোতয়াল্লী ও ব্যবস্থাপনা সম্পাদক বরাবর স্মারকলিপিও প্রদান করেন এবং অবস্থান নেন।
এরই এক পর্যায়ে তারা দােবি তোলেন যে মার্কেটিং ম্যানেজার শরিফুল ইসলামকে তাদের সামনেই পদত্যাগ করতে হবে। তোপের মুখে পদত্যাগ করে সেখান থেকে পালিয়ে যান শরিফুল ইসলাম। এসময় হামদর্দের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হাকিম মোঃ ইউসুফ হারুন ভুইয়া অনুপস্থিত ছিলেন। ২৪ ঘন্টার মধ্যে দাবি পূরণ না হলে ব্যবস্থাপনা পরিচালকের বাসভবন ঘেরাও করা হবে বলে কর্মসূচী জানান বিক্ষোভকারীরা।
১৯ দাবীর মধ্যে উল্লেখযোগ্য দাবিগুলো হলো:
প্রভিডেন্ট ফান্ড, গ্র্যাচুইটি ও ছুটি নগদায়ন পূর্বের (২০১৭ সালের) ন্যায় বহাল রাখতে হবে। ‘সকল কর্মকর্তা কর্মচারীদের (দ্রব্য মূল্য উর্ধগতির কারনে) মহার্থ্য ভাতা মূল বেসিকের ৫০% প্রদান করতে হবে।
বাৎসরিক ইনক্রিমেন্ট মূল বেতনের ২০% বৃদ্ধি করতে হবে। মাঠ পর্যায়ে সকল কর্মচারীদের ডি, এ, বিল দ্বিগুন করতে হবে (যা বর্তমানে প্রায় ৬ বছর যাবত বৃদ্ধি করা হয়নি। যৌক্তিক টি, এ, বিল কোন প্রকার কেউ কর্তন করতে পারবে না।
বাৎসরিক ইনসেনটিভ প্রতি বৎসর বছর শেষে প্রদান করতে হবে৷ কোন বছরের ইনসেনটিভ হাতে রাখা যাবে না এবং এ বছর ২০২৩ সাল ও ২০২৪ সালের ইনসেনটিভ ডিসেম্বর মাসে একসাথে প্রদান করতে হবে (সকল বিক্রয় প্রতিনিধি, মেডিকেল প্রতিনিধি, হাকিম, অফিস সহকারী, অফিস সহায়ক ব্যতিত)।
২০১৯ সালের জানুয়ারী মাসের পর থেকে হামদর্দ ল্যাবরেটরীজ (ওয়াকফ) বাংলাদেশের ফ্যাসিস্ট আওয়ামীলীগ সরকারের ও ধর্ম মন্ত্রনালয়ের সকল অযৌক্তিক ও অবৈধ নিয়েঅগ বাতিল করতে হবে( সকল বিক্রয় প্রতিনিধি, মেডিকেল প্রতিনিধি, হাকিম অফিস সহকারী, অফিস সহায়ক ব্যতিত)।
সকল পদে কোন বস এবং সুপিরিয়র বাহির থেকে নিয়োগ দেওয়া যাবে না। যোগ্যতা ও মেধা অনুযায়ী ইনহাউজ প্রমোশন দিতে হবে। সাপ্তাহিক ছুটি কার্যকর করতে হবে এবং ঈদের ছুটি নুন্যতম ৬ দিন করতে হবে।(ঈদের ছুটি মার্কেট, শাখা, হেড অফিস, কারখানা সমান দিতে হবে, কোন বৈষম্য করা যাবে না। মার্কেটের বিগত ৫ বছরের সকল মেয়াদ উত্তীর্ণ ঔযধ পরিবর্তন করে দিতে হবে।
আগামী জানুয়ারী ২০২৫ থেকে প্রতি মাসের মেয়াদ উত্তীর্ন ঔষধ প্রতি মাসে পরিবর্তন করে দিতে হবে। যে সকল শাখাতে পরিবেশক বাতিল করা হয়েছে, সেই সব শাখার মালামাল পরিবহন ব্যবস্থা করতে ‘হবে। অন্যথায় পরিবহন বাবদ বিল ৬% দিতে হবে।
নতুন নিযোগপ্রাপ্তদের ৬ মাসের ভেতর স্কেলভূক্ত ও ১ বছরের মধ্যে চাকুরী স্থায়ী করতে হবে। মাঠ পর্যায়ে সকল লোকদেরকে বিনামূল্যে কোম্পানীর কাজের সুবিধার্থে মোটর সাইকেল প্রদান করতে হবে৷ এবং প্রতি মাসে মোটর সাইকেল মেইনটেনস বিল বাবদ প্রতি মাসে ৩,০০০/- প্রদান করতে হবে।
সকল ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কর্মচারীদেরকে পূর্ণ স্কেল দিয়ে ভারমুক্ত করতে হবে।
সকল ব্রাঞ্চ ইনচার্জ এবং ব্রাঞ্চ ম্যানেজারদের মার্কেটে সরাসরি বিক্রয় টার্গেট দেয়া যাবেনা। তারা পূর্বের ন্যায় (২০১৯ সালের ন্যায়) ব্রাঞ্চের সুপিরিয়র দায়িত্ব পালন করবেন।অফিস সহকারী এবং হাকিমদের ৮ ঘন্টার অতিরিক্ত ডিউটির পর ওভারটাইম বিল দিতে হবে।
সকল স্টাফ ও তাদের পরিবারের সদস্যদের চিকিৎসা বিল প্রদান করতে হবে। টার্গেট ও সেলস অনুযায়ী স্যাম্পল ও বিক্রুয় উন্নয়ন সামগ্রী প্রদান করতে হবে ।
মার্কেট অনুযায়ী সেলস টার্গেট নির্ধারণ করতে হবে। ২০১৭ সালের আগের নিয়মে প্রতিবছর ৬টি বোনাস দিতে হবে। যে সকল ব্রাঞ্চে অফিস সহায়ক ব্রাঞ্চে একা সমস্ত দায়িত্ব পালন করেন (যে সকল ব্রাঞ্চে অফিস সহকারী নাই) তাদের প্রমোশন দিতে হবে। চাকুরীর নিশ্চয়তা দিতে হবে।
অপরাধ প্রমানিত না হলে চাকুরী থেকে অব্যহতি দেওয়া যাবে না। বিনাকারনে চাকুরী হতে অব্যহতি দিলে ৩ মাসের বেতন ও ভাতা সহ সকল প্রকার পাওনা ১ মাসের মধ্যে পরিশোধ করতে হবে। উক্ত দাবী আদায়ের ক্ষেত্রে যারা অগ্রনী ভূমিকা পালন করবে তাদের কোন প্রকার অজুহাত দেখিয়ে চাকুরীচ্যুত অথবা বদলী করা যাবে না।
এর আগেও হামদর্দ ফাউন্ডেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মো. ইউসুফ হারুন ভূঁইয়া বিরুদ্ধে প্রলোভন দেখিয়ে এক গৃহবধূকে ভাগিয়ে নেওয়ার অভিযোগে লক্ষ্মীপুর আদালতে মামলা দায়ের করা হয়। এ মামলায় গৃহবধূ কামরুন নাহার পলিনকেও আসামি করা হয়। গৃহবধূর স্বামী নাজিম উদ্দিন রিপন বাদী হয়ে লক্ষ্মীপুর সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে এ মামলা দায়ের করেন। সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ আবদুল কাদেরের আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে নোয়াখালী পুলিশ ব্যুরো ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) তদন্তের নির্দেশ দেয়।
একইসাথে ২০১৯ সালে হামদর্দ ল্যাবরেটরিজের (ওয়াকফ) ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) হাকিম মো. ইউছুফ হারুণ ভূইয়াকে তলব করে ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সংস্থা শাখা। তলবি নোটিশ হাকিম ইউছুফ ও তার পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে শত শত কোটি টাকা আত্মসাতের কথা উল্লেখ করা হয়। ধর্ম মন্ত্রণালয়ের তিন সদস্যের তদন্ত কমিটিতে ছিলেন আহ্বায়ক মু. আ. হামিদ জমাদ্দার, মোহাম্মদ মাহবুব আলম ও সহকারী ওয়াকফ প্রশাসক (উপসচিব) রায়হান কাওছার। অজানা কারণে এই প্রতিবেদন আজও প্রকাশ পায়নি। দুর্নীতি দমন কমিশনে দেয়া চিঠিও আমলে নেয় নি দুদক।
পাশাপাশি মো. ইউসুফ হারুন ভূঁইয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগও প্রমাণিত হয়েছে।স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধাদের দাবি একাত্তরে লক্ষ্মীপুর জেলার রায়পুর থানা এলাকায় ত্রাস সৃষ্টি করেছিল পাকিস্তানি আর্মি ও রাজাকার বাহিনীর সদস্যরা। সেখানে সংঘটিত হত্যা, লুটপাট ও ধর্ষণের ঘটনায় যার বিরুদ্ধে নেতৃত্ব দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে তিনি হচ্ছেন ‘রাজাকার কমান্ডার’ ইউছুফ হারুন ভূঁইয়া। স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধাদের দাবি, রায়পুরে চার শতাধিক মুক্তিযোদ্ধা, তাদের সহযোগী, সাধারণ মানুষ ও আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীকে হত্যা করা হয় রাজাকার কমান্ডার ইউছুফের নির্দেশে। অথচ বিচারের মুখোমুখি হওয়া তো দূরের কথা, দীর্ঘ ৩৩ বছর ধরে বহাল তবিয়তে ওয়াকফ্ প্রতিষ্ঠান হামদর্দ ল্যাবরেটরিজ-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালকের পদে আসীন আছেন তিনি। গণহত্যায় নেতৃত্ব দেওয়ার অভিযোগ থাকলেও তার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের কোনও মামলাও হয়নি আজও।