পঞ্চগড় জেলার তেঁতুলিয়ার সীমান্তঘেঁষা নদী মহানন্দায় পাথর উত্তোলনে নিষেধাজ্ঞা জারি করায় বেকার হয়ে পড়েছেন ৩০ হাজার পাথর শ্রমিক। তাদের প্রাত্যহিক রুজি-রোজগারের কেন্দ্রস্থল হলো এই মহানন্দা নদী। কিন্তু বিজিবি-বিএসফের নিষেধাজ্ঞার কারণে গত (২৫ আগষ্ট) শুক্রবার, থেকে
পাথর উত্তোলন বন্ধ থাকায় মানবেতর জীবন যাপন করছেন পাথরনির্ভর শ্রমিকদের পরিবার।
তেঁতুলিয়া-বাংলাবান্ধা জাতীয় মহাসড়ক ঘেষে ডাক বাংলো থেকে ১৭ কি; মি বাংলাবান্ধা পর্যন্ত সীমান্তবর্তী অঞ্চলের এ এলাকায় সর্দারপাড়া, সরকারপাড়া, বুড়িমুটকি,রনচন্ডি, তিরনই, ভক্তিডাঙ্গি, ঝারুয়া পাড়া, স্থানে গিয়ে দেখা যায় পাথরশ্রমিকরা দুই দেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বাধার কারণে নদী থেকে পাথর তোলার সরঞ্জাম টিউব, ঢাকি, কোদাল নিয়ে তীর বেয়ে ওপরে উঠে আসেন। তাদের মুখ বিষন ভারাক্রান্ত মনে বাড়ি ফিরে যাচ্ছেন তারা। এ সময় নদীতে বিজিবির টহল দেখা যায়।
গত (২৫ আগষ্ট) ১৮ বিজিবির আয়োজনে মতবিনিময় সভায় সেক্টর কমান্ডার কর্নেল ঠাকুরগাও সোহবার আলী এবং বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ পঞ্চগড় ১৮ বিজিবি ব্যাটালিয়ন অধিনায়ক লে কর্ণেল মাহফুজুর রহমান, মহানন্দা নদী সীমান্তের মধ্যে প্রবাহিত হওয়ায় জিরোলাইনের মধ্যে পাথর উত্তোলনের ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা জারি করেন। তারপর থেকেই মহানন্দায় পাথর উত্তোলন বন্ধ হওয়ায় শ্রমিকরা বেকার হয়ে পড়েন।
দিনভর কঠিন পরিশ্রমে তোলা পাথর মহাজনের কাছে বিক্রি যে টাকা পান, তা দিয়ে চলে স্ত্রী-সন্তান, পরিবার-পরিজনের ভরণ-পোষণ। কিন্তু কিছুদিন ধরে নদীতে পাথর উত্তোলনে নিষেধাজ্ঞা থাকায় মানবেতর জীবন যাপন করছে নদীকেন্দ্রিক হাজারো শ্রমিকের পরিবার সদস্য।
মহানন্দার এপারে বাংলাদেশ, ওপারে ভারত। আন্তঃসীমান্তের এ নদী ভারতের ফুলবাড়ি সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশের উত্তর সীমান্তের তেঁতুলিয়ায় প্রবেশ করে। এরপর ২০ কিলোমিটার প্রবাহিত হয়ে আবার ঢুকে গেছে ভারতে। এ নদী ভারতের দার্জিলিংয়ের ২০৬০ মিটার উঁচু মহালিদ্রাম পাহাড় থেকে উৎপন্ন হয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। বৃষ্টির পানিই এ নদীর মূল উৎস। এ নদীর পানি আর বালির সঙ্গে বয়ে আসে নুড়ি পাথর।
মহানন্দার ¯নদীর সঙ্গে ভেসে আসা ছোট, বড় ও মাঝারি আকারের নুড়ি পাথরেই জড়িয়ে গেছে এ উপজেলার ৫০-৬০টি গ্রামের প্রায় ৩০ হাজার পাথর শ্রমিক জীবন। মহানন্দার পাথরই তাদের কর্মসংস্থানের উৎস। সারাদিনে একজন শ্রমিক গড়ে ২৫-৩০ সিএফটি পাথর তুলতে পারেন, যার বাজারমূল্য ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা।
পুরুষ শ্রমিকদের পাশাপাশি মহানন্দার পাথরের এই বিপুল কর্মকান্ডে নারী শ্রমিকদেরও রয়েছে কর্মসংস্থান। সংসারের কাজ সামলে সকাল-দুপুরে কাজে নেমে পড়েন তারা। পাথর নেটিং, ভাঙা, লোড-আনলোড করে মাথায় ঢাকিতে করে পাথর স্তূপ করেন তারা। দিনশেষে এসব নারীশ্রমিকের শ্রমের মূল্য জুটে দুই থেকে আড়াই শ টাকা। পাথর উত্তোলন বন্ধ থাকায় বেকার হয়ে পড়েছেন তারাও।
নদীতে পাথর তুলতে বাধা দেয়ার পর ভার মনে ঘরে ফেরার সময় কথা হয় পাথরশ্রমিক রনচন্ডি গোয়াবাড়ি খলিলের
সঙ্গে। তিনি বলেন, পাথর তুলতে না দেয়ায় খুব কষ্টে আছি। কী করব বুঝতে পারছি না। এই পাথরের মাধ্যেই খেয়েই জীবন বেঁচে আছি।’
সরদারপাড়ার এক নারী শ্রমিক বলেন, ‘ভাই হামার কষ্ট কেউ বুঝিবেনি। পাথর তোলা বন্ধ, হামরা কাজ পাচ্ছি না। কয়েক দিন পাথর তুলতে না পারলে তিন বেলা খাওয়া জোটে না, ভাই।’
এ বিষয়ে কথা হয় উপজেলা চেয়ারম্যান কাজী মাহমুদুর রহমান ডাবলু সঙ্গে তিনি বলেন, ‘মহানন্দায় পাথর উত্তোলন বন্ধ বিষয়টি আন্তর্জাতিক বিষয়। তবে নদী মহানন্দায় হাজার হাজার শ্রমিক পাথর উত্তোলন করে জীবন জীবিকা নির্বাহ করে থাকে। এখানে প্রায় ৩০ হাজার খেটে খাওয়া মানুষের জীবন বদলে দিয়েছে এ নদীর স্রোতে ভেসে আসা ছোট ছোট পাথর। পাথর উত্তোলন বন্ধ হওয়ায় আমরাও শ্রমিকদের জীবন-জীবিকা নিয়ে চিন্তিত।এ ব্যাপারে উপজেলা সদর বিজিবি কোম্পানী কমান্ডার মো; জাহাঙ্গির আলমের সহিত যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, সীমারেখা বরাবরে নদী মহান্দা পাথর শ্রমিকগন ভারতীয় বিএসএফের সাথে খারাব আচারনের জন্যে বন্ধ করা হয়েছে।