আত্মসাতের ঘটনায় মূল আসামি তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ( ওসিএলএসডি) শাকিল আহমেদ-এর সঙ্গে জড়াবেন আরো ৮ কর্মচারী। এদের মধ্যে আলোচিত সহকারী উপ খাদ্য পরিদর্শক তুহিন ও ৬ জন নিরাপত্তা প্রহরী রয়েছেন। এর পরই তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এগিয়ে চলছে দুদকের দায়ের করা মামলার তদন্ত।
এ নিয়ে বিভিন্ন পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশের পর খাদ্য অধিদপ্তর মুক্তাগাছা খাদ্য গুদামের রেকর্ডপত্র অনুসন্ধান করে অন্যান্য দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য ময়মনসিংহের আঞ্চলিক খাদ্য নিয়ন্ত্রককে নির্দেশ প্রদান করে। এদিকে খাদ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (গ্রেড-১) মোঃ শাখাওয়াত হোসেন সোমবার ২২ এপ্রিল ময়মনসিংহ ও টাংগাইলের মধুপুর স্টীল সাইলো পরিদর্শন করেন।
জানা যায়, সাইলো পরিদর্শনের সময় অতিরিক্ত মহাপরিচালক আব্দুল্লাহ আল মামুন, সাইলোর প্রকল্প পরিচালক রেজাউল করিম সেখ ছাড়াও অন্যান্য কর্মকর্তারা মহাপরিচালকের সাথে ছিলেন।
সকাল ১০ টায় তিনি ময়মনসিংহ খাগডহর সিএসডিতে অবস্থিত ৪৮ হাজার মেট্রিক টন ধারণ ক্ষমতার স্টীল সাইলোতে পৌঁছান। ময়মনসিংহের আঞ্চলিক খাদ্য নিয়ন্ত্রক আবু নঈম মোহাম্মদ সফিউল আলম, সাইলোর অধীক্ষক মোহাম্মদ ফয়জুর রহমান শিবলী ও জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মোঃ আব্দুল কাদের তাকে অভ্যর্থনা জানান। পরে তিনি দুপুর সাড়ে ১২ টায় মধুপুর স্টীল সাইলো পরিদর্শনে যান। টাংগাইলের জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মোহাম্মদ তানভীর হোসেন ও সাইলোর ভারপ্রাপ্ত অধীক্ষক মোঃ রাকিবুল মাহফুজ মহাপরিচালককে অভ্যর্থনা জানান। এ সময় তিনি সাইলোতে চাল সংরক্ষণের সক্ষমতা সম্পর্কে ধারণা নেন। উভয় সাইলো পরিদর্শনের সময় তিনি কর্মকর্তাদের নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালন এবং আগামী বোরো চাল সংগ্রহের লক্ষমাত্রা অর্জন ও গুণগত মান নিশ্চিত করার কঠোর নির্দেশ প্রদান করেন।
অধিদপ্তর থেকে নির্দেশ পাওয়ার পর ময়মনসিংহের আঞ্চলিক খাদ্য নিয়ন্ত্রকের নির্দেশনা অনুযায়ী জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মোঃ আব্দুল কাদের ১৬ এপ্রিল ৩ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেন। হালুয়াঘাটের উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মোঃ হাসান আলী মিয়া কমিটির প্রধান। ময়মনসিংহ সদরের উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মোঃ আশরাফুল আলম ফাহিম ও ফুলবাড়িয়া উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক এস. এম. সালাহ্ উদ্দিন কমিটির সদস্য। কমিটি গত রবিবার দিনব্যাপী মুক্তাগাছা খাদ্য গুদামের সব রেকর্ড অনুসন্ধান এবং ফটোকপি সংগ্রহ করে। মঙ্গলবার ও বুধবার তদন্ত কাজ শেষ করে বৃহস্পতিবার প্রতিবেদন জমা দেওয়ার কথা রয়েছে। এর পরই অন্যান্য দোষীদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা দায়ের করা হবে বলে সূত্র নিশ্চিত করেছে।
জানা যায়, মুক্তাগাছা খাদ্য গুদামের তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শাকিল আহমেদ পালিয়ে যাওয়ার আগে ৩ মাসের মধ্যে যেকোনো সময় ৩২৮ টন ৯৮০ কেজী চাল ও ১ হাজার ৮৭৫টি খালি বস্তা আত্মসাতের ঘটনা ঘটে। ওই সময় গুদামের বিভিন্ন দায়িত্বে ছিলেন সহকারী উপ খাদ্য পরিদর্শক তুহিন, নিরাপত্তা প্রহরী নূরুল হক, রাজু আহম্মেদ, জুলহাস উদ্দিন, শফিকুল ইসলাম, লায়লা বিলকিস ও হাসিনা আক্তার এবং পরিচ্ছন্ন কর্মী স্বপন চন্দ্র দাস। এদের মধ্যে তুহিন ও নূরুল বীরদর্পে গুদামের সব দায়িত্ব পালন করতেন। বেশি বয়সের কারণে গুদামে যেতেন না লায়লা ও হাসিনা।
একটি সূত্র জানায়, আত্মসাতের দায় এড়াতে এর আগে কয়েকজনের বিরুদ্ধে কলকাঠি নাড়ার অভিযোগ উঠে। আত্মসাত ধরা পড়ার ৪ মাস পর দুর্নীতিবাজ উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক রেবেকা সুলতানা রুবীকে টাংগাইলের মির্জাপুরে বদলি করা হয়। ব্যবস্থা না নিয়ে তাকে গুরুত্বপূর্ণ উপজেলায় বদলি করায় প্রশ্নের সৃষ্টি হয়েছে। এতে দেশের অন্যান্য খাদ্য গুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এবং উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকরা দুর্নীতি ও অনিয়মে জড়ানোর উৎসাহ পেয়েছেন। অথচ এ ধরণের আত্মসাতের ঘটনায় উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকসহ সংশ্লিষ্টদের বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার শতভাগ নজির রয়েছে। এর আগেও ময়মনসিংহের অঞ্চলের কয়েকটি খাদ্য গুদামে চাল ও খালি বস্তা আত্মসাতের ঘটনা ঘটে। জড়িতরা আটক হয়ে কারাভোগ, চাকরিচ্যূত ও বিভাগীয় মামলায় পড়েন।
দুর্নীতির বিরুদ্ধে ব্যবস্তা না নেওয়ায় বিভিন্ন খাদ্য গুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওসিএলএসডি গণ সুকৌশলে করে যাচ্ছে অনিয়ম ও দুর্নীতি। হুংকার দিয়ে বলে পত্রিকায় লিখলে কিছু হবে না। সবকিছু ম্যানেজ করে আমরা কাজ করি।
কিছু দিন আগে ময়মনসিংহের একটি গুদামে দুর্নীতির অভিযোগে পরিদর্শন করে কর্তৃপক্ষ।
খাদ্য পরিদর্শক দ্বিতীয় শ্রেণির কর্মকর্তা হয়ে বিলাসী জীবন যাপন করে। একটি সুত্র জানায় ময়মনসিংহ বিভাগের বিভিন্ন সরকারি খাদ্য গুদাম এলএসডিতে ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা পদে পোস্টিং পেতে ৩০ থেকে ৪০ লক্ষ টাকা খরচ করতে হয়।
অনুসন্ধানে জানা যায় ময়মনসিংহ বিভাগের অর্ধশত খাদ্য পরিদর্শক ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ( ওসিএলএসডি) দুর্নীতি ও অনিয়মের মাধ্যমে কোটি কোটি টাকার মালিক হয়েছেন। রয়েছে আলিশান বাড়ী ও ফ্ল্যাট। নিজস্ব গাড়ীতে করে অফিসে যাতায়াত করেন।
বেশ কয়েকজন খাদ্য পরিদর্শক ও জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রণ কর্মকর্তা অর্থের নেশায় মাতাল । ঘুষ ও দুর্নীতির মাধ্যমে অর্থ কামানোর জন্য শফি আফজালুল আলম, ও খাদ্য পরিদর্শক ওয়াহিদুজ্জামান লাখ, লাখ টাকা খরচ করে জামালপুর জেলায় পোস্টিং নিয়েছেন।
ময়মনসিংহের বেশ কয়েকজন খাদ্য পরিদর্শক ঘুষ বাণিজ্যের কারনে শারীরিক ভাবে লাঞ্ছিত হয়েছেন।
কি বিলাসী জীবন যাপন করেন এক উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রণ অফিসার ময়মনসিংহ থেকে কিশোরগঞ্জে নিজস্ব গাড়ীতে করে অফিসে যাতায়াত করেন। এলাকার বেশ কয়েকজন এর সাথে কথা বলে জানা যায় খাদ্য বিভাগে চাকুরী হওয়ার আগে সাদা মাঠা জীবন যাপন করতে।
অপরদিকে জামালপুর জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রণ কর্মকর্তা শফি আফজালুল আলম দুর্নীতি ও অনিয়মের মাধ্যমে কোটি কোটি টাকার মালিক হয়েছেন। নামে বেনামে গড়েছে কোটি, কোটি টাকার সহায় সম্পদ।