বিয়েই যার পেশা, বিয়েই যার নেশা; রেহাই পায়নি প্রতিবন্ধীও এমনি এক প্রতারক চক্রের মূল হোতাসহ দুইজনকে গ্রেফতার করেছে ময়মনসিংহ জেলা গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। দেশের বিভিন্ন স্থানে নৌবাহিনী সদস্যের পরিচয় দিয়ে সাধারণ পরিবারের ১৩ জন মেয়েদেরকে বিবাহের মাধ্যমে অর্ধ কোটিরও বেশী টাকা হাতিয়ে নেয় এই প্রতারক চক্র।
গ্রেফতারকৃতরা হলেন- মানিকগঞ্জ জেলার চরকাটারী আহেদালী পাড়ার মোহাম্মদ আলীর ছেলে মহিদুল ইসলাম @ মইদুল (২৭) ও ময়মনসিংহের তারাকান্দার নগুয়ার মৃত জালাল উদ্দিনের ছেলে কুদ্দুস আলী (৩৫)। তাদের কাছ থেকে ভুয়া আইডি কার্ড ও ইউনিফর্ম পরিহিত ছবি উদ্ধার করে ডিবি পুলিশ।
শনিবার (১০ ফেব্রুয়ারি) বেলা ১২টায় পুলিশ সুপার কার্যালয়ে সাংবাদিক সম্মেলনে এসব তথ্য জানান পুলিশ সুপার মাছুম আহমেদ ভূঞা ।
তিনি জানান, গ্রেফকারকৃত প্রতারক নিজেদেরকে নৌবাহিনীর সদস্য হিসেবে মিথ্যা পরিচয় দিয়ে ধর্মীয় রীতিতে বিবাহের মাধ্যমে এসব পরিবারের কাছ থেকে লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নেওয়ার এক অপকৌশল করে আসছিল। এ বিষয়ে জনৈকা ভিকটিম ময়মনসিংহ জেলার পুলিশ সুপারের কাছে ৫জন আসামীর বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেন। পুলিশ সুপার অভিযোগটি আমলে নিয়ে জেলা গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)’র কাছে হস্তান্তর করেন। পরবর্তীতে ডিবি’র ওসি মোঃ ফারুক হোসেনের নেতৃত্বে একটি চৌকষ দল গাজীপুর জেলার চন্দ্রা এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে প্রতারক চক্রের মূল মোঃ মহিদুল ইসলাম @ মইদুল ও ময়মনসিংহের তারাকান্দা থেকে কুদ্দুস আলীকে গ্রেফতার করে।
তিনি আরও জানান, বাংলাদেশ নৌবাহিনীর এমএলএসএস হিসেবে ২ বছর চাকুরী করার পর বাল্য-বিবাহ করার অপরাধে চাকুরীচ্যুত হয় মহিদুল। পরবর্তীতে প্রতারণার মাধ্যমে বিবাহকেই তার পেশা হিসেবে বেঁছে নেয় এবং মামলার এজাহারে বর্ণিত অন্যান্য আসামীদের সাথে নিয়ে বিবাহের মাধ্যমে টাকা হাতিয়ে নেয়ার চক্র তৈরি করে। এ কাজে বিজিবি থেকে চাকুরীচ্যুত এক সদস্য তাকে সরাসরি সহায়তা করে।
গ্রেফতারকৃত অপর আসামী কুদ্দুছসহ অন্যান্যরা কখনও ঘটক, কখনও মহিদুলের নিকট আত্মীয় হিসেবে নিজেদের পরিচয় দিয়ে সাধারণ মুসলিম পরিবারের অভিভাবকদের বিশ্বাস অর্জন করত এবং প্রতারণার অপকৌশল বাস্তবায়নে সংঘবদ্ধভাবে অংশগ্রহণ করত। এ পর্যন্ত মহিদুল ১৩ জন মহিলাকে প্রতারণার ভিকটিম বানিয়ে সরলতার সুযোগ নিয়ে বিবাহ করেছে বলে স্বীকার করেন। তার মধ্যে মানিকগঞ্জের ৩ জন, টাঙ্গাইলের ৩ জন, কিশোরগঞ্জের ১ জন ও ময়মনসিংহের ৬ জন রয়েছে। প্রতারক মহিদুল এসব পরিবারের কাছ থেকে ৫০ লক্ষেরও অধিক টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। এমনকি তার এই প্রতারণার ফাঁদ থেকে প্রতিবন্ধী নারীও রেহাই পায়নি, মাসিক প্রতিবন্ধী ভাতার সামান্য টাকা হাতিয়ে নেয়ার উদ্দেশ্যে সে টাঙ্গাইল জেলার একজন প্রতিবন্ধী মহিলাকে বিবাহ করে।
তিনি আরও জানান, গ্রেফতারকৃত মহিদুলের কাছে নৌবাহিনীর ভুয়া আইডি কার্ড, বাহিনীর ব্যবহার্য ট্রাকস্যুট এবং বিভিন্ন বাহিনীর ইউনিফর্ম পরিহিত ছবি উদ্ধার করা হয়। মহিদুল সহ অন্যান্য আসামীদের বিরুদ্ধে জামালপুর ও টাঙ্গাইলসহ বিভিন্ন জেলায় একাধিক প্রতারণা মামলা রয়েছে বলে জানান তিনি।